ভবঘুরেকথা

আত্মানুভূতি ও আত্মদর্শন
ঠেকিয়া জীবের দায় জীবদেহ ধরে।
জীব শিক্ষা লাগি জীবোচিত কর্ম করে।।
গৃহস্থের মূলভিত্তি অর্থনীতি বটে।
(এক লাইন গ্যাপ)
বাণিজ্য করিয়া হরি শিখায় সকলে।
গৃহী কত বড় হয় ব্যবসায়ী হ’লে।।
মুনি ঋষি করে চাষ আরয ব্যবসায়।
একদিন চাষ করি প্রভু তা’ শিখায়।।
বহিরঙ্গ শিক্ষা বটে এবে শেষ হ’ল।
আপনার কাজ মনে প্রভুর পড়িল।।
পঞ্চ ভাই পৃথগন্ন দুই বাড়ী ভিন্ন।
আমভিটা ‘পরে প্রভু নহে মনঃক্ষুণ্ণ।।
অন্তরঙ্গ সঙ্গে মিশি দিবা রাত্রি যায়।
ঠাকুরের তিন কন্যা জন্মে এ সময়।।
শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ প্রভু-পুত্র জ্যেষ্ঠ।
আমভিটা বাসকালে হ’লেন ভূমিষ্ঠ।।
গুরুচাঁদ জন্ম পরে প্রভুজী উদাস।
সংসার ফেলিয়া দূরে স্বরূপ প্রকাশ।।
ভ্রাতৃগণ অনুরোধে আমভিটা ছাড়ি।
ওঢ়াকাঁদি আসিলেন পোদ্দারের বাড়ী।।
এ সময় মহাপ্রভু একা ঘুরে ফিরে।
একদিন চলেন প্রভু জয় নগরে।।
আড়োকান্দী মাঠ মধ্যে তুলি উচ্চ শির।
বকুলের গাছ এক দাঁড়াইয়া স্থির।।
সন্ধ্যার অগ্রেতে প্রভু কি জানি কি ভাবি।
বসিলেন বৃক্ষমূলে চিন্তা মাঝে ডুবি।।
অনন্ত ‘আপন’ মাঝে প্রভু ডুবে রয়।
আপন স্বরূপ প্রভু দেখিবারে পায়।।
মহান পুরুষরূপে আপনার আত্মা।
প্রভুর সম্মুখে আসি কহিলেক বার্তা।।
“নামধারী দেহ রূপে তুমি হরিচাঁদ।
জীব শিক্ষা লাগি নর জগতের নাথ।।
তুমি স্থুল আমি সূক্ষ্ম উভয়ে অভিন্ন।
দেহ আত্মা মোরা দোঁহে মূলে নহি ভিন্ন।।
গৃহধর্মে সুআদর্শ সব দে’য়া হ’লে।
দেহ গৃহ শুচিকার্য জীবে কি বুঝিলে।।
দেহ মন নহে শুচি গৃহধর্ম করে।
ছিদ্রযুক্ত তরীসম ডুবে যে সাগরে।।
দেহ মন সর্বক্ষণ রাখিতে পবিত্র।
শিখাইতে হবে জীবে সেই মূলসূত্র।।
তুলিয়া নামের ঢেউ প্রেম প্লাবনেতে।
ধু’য়ে মুছে নি’ব সব নাম প্রবাহেতে।।
শুদ্ধাচারী, বীজমন্ত্রী, নামে জপে মালা।
একা একা যেতে চায় সমুদ্রেতে ভেলা।।
গুরুরূপে ব্যবসায়ী কাণে দেয় মন্ত্র।
প্রাণহীন দেহ যেন জুড়ে অঙ্গে যন্ত্র।।
এসব সামান্য কূপ সবে ডুবে যা’বে।
হরিপ্রেম প্লাবনেতে জীব মুক্তি পা’বে।।
দেহ মন শুদ্ধ হ’বে স্থির হবে আত্মা।
তখন শিখা’তে হ’বে গৃহধর্ম কথা।।
দৃষ্টিপাত করি দেখ তব গৃহমাঝে।
গুরুচাঁদ রূপে বিশ্বনাথ আসিয়াছে।।
জগদ্ধাত্রী-পতি যিনি স্বর্ণকাশী বাস।
শিখা’তে গার্হস্থ নীতি এল কৃত্তিবাস।।
প্রেমপ্লাবনেতে মাটি সরস হইবে।
সোনার ফসল তাহে আবাদে ফলিবে।।”
এইভাবে নিশি ভোর ভাবে অচৈতন্য।
আত্মস্থ হইল প্রভু জীব মুক্তি জন্য।।
প্রভাতে জাগিয়া প্রভু গৃহপানে যায়।
অসার সংসার বলি সব মনে হয়।।
সংগসারকে ‘সং’ ভাবি প্রভু ছেড়ে দিল।
‘সং’ মধ্যে ‘সার’ দিতে গুরুচাঁদ এল।।
নামে ‘ভীর’ দিল প্রভু পাষণ্ড উতলা।
কবি কহে পাতকীর আর নাহি জ্বালা।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!