ভবঘুরেকথা
ফকির লালন শাহ্

ফকির লালনের বাণী : সিদ্ধিদেশ

৩৫১.
কী সন্ধানে যাই সেখানে
মনের মানুষ যেখানে।

৩৫২.
আঁধার ঘরে জ্বলছে বাতি
দিবারাতি নাই সেখানে।

৩৫৩.
যেতে পথে কামনদীতে
পাড়ি দিতে ত্রিবিনে।

৩৫৪.
কত ধনীর ভারা যাচ্ছে মারা;
পইড়ে নদীর তোড় তুফানে
দেখো পইড়ে নদীর তোড় তুফানে।

৩৫৫.
রসিক যাঁরা চতুর তাঁরা
তাঁরাই নদীর ধারা চেনে।

৩৫৬.
উজান তরী যাচ্ছে বেয়ে;
তাঁরাই স্বরূপ সাধন জানে
ওরে তাঁরাই স্বরূপ সাধন জানে।

৩৫৭.
লালন বলে ম’লাম জ্বইলে
ম’লাম আমি নিশিদিনে।

৩৫৮.
আমি মনি হারা ফনির মতন;
হারা হলেম দিন নিধনে
আমি হারা হলেম দিন নিধনে।

৩৫৯.
আঁধার ঘরে জ্বলছে বাতি
দিবারাতি নাই সেখানে।

৩৬০.
দেখো দিবারাতি নাই সেখানে;
মনের মানুষ যেখানে
কী সন্ধানে যাই সেখানে
মনের মানুষ যেখানে।

৩৬১.
ভবে আশেক যার
লজ্জা কী তাঁর
সে খোঁজে দীনবন্ধুরে।

৩৬২.
সে খোঁজে প্রাণভরে;
দীনবন্ধু প্রাণসখা
দেখা দাও মোরে।

৩৬৩.
বাহ্য কাজ ত্যাজ্য করে
নয়ন দুটি রুপের ঘরে
সদাই থাকে রুপনিহারে।

৩৬৪.
শয়নে স্বপনে কভু সে
রুপ ভুলতে নারে।

৩৬৫.
আশেকের ভেদ মাশুক জানে
জানে না আর অন্য জনে।

৩৬৬.
সদাই থাকে রুপ বদনে;
রুপের মালা হৃদয়ে গেঁথে
ভাসে প্রেমসাগরে।

৩৬৭.
মরণের ভয় নাইকো তার
রোজ কেয়ামত রোজের মাঝার
মোর্শেদ রুপটি করে সে সার।

৩৬৮.
তাজমালা সব ফেলে লালন
যায় ভবসিন্ধু পারে।

৩৬৯.
বেঁজো নারীর ছেলে ম’লো এ কী হলো দায়
মরা ছেলের কান্না দেখে মোল্লাজী ডরায়।

৩৭০.
ছেলে ম’লো তিন দিন হলো
ছেলের বাবা এসে জন্মাইলো।

৩৭১.
বাপের জন্ম ছেলে দেখলো
তাতে কি ফল হলো।

৩৭২.
দাই মেরে ফয়তা করে
নাপিত মেরে শুদ্ধ হয়রে।

৩৭৩.
মোল্লা মেরে কাল্লা কাটে
জানাজা পড়ায়।

৩৭৪.
লালন ফকির ভেবে বলে
দেখলাম মরা ভাসে মরার ঘাটে।

৩৭৫.
আবার মরা মরায় সাধন করে
মরা ধরে খায়।

৩৭৬.
রসিক সুজন ভাইরে দুইজন
বসে আছ কার আশে,
তোর বাড়িতে অতিথ এল
দুই ছেলে আর এক মেয়ে।

৩৭৭.
ভবের পর এক সতী ছিল
বিপাকে সে মারা গেল,
মরার পেটে গর্ভ হল
এই ছিল তার কপালে।

৩৭৮.
মরা যখন কবরে নেয়
তিনটি সন্তান তার তখন হয়,
তিনজনা তিন দেশেতে যায়
মরা লাশ ফেলে রেখে।

৩৭৯.
মরার যখন মাংস পচে
তিনজনাতে বসে হাসে,
অন্য লোকে ঘৃনা করে
লালন তুলে নেয় কোলে।

৩৮০.
মহাসন্ধির উপর ফেরে সে।
মনরে ফের সদাই যার তল্লাশে।

৩৮১.
ঘটে পটে সব জায়গায়
আছে আবার নাই বলা যায়।

৩৮২.
চন্দ্র যে প্রকার, উদয় জলের পর
অমনি সে বিরাজে এই মানুষে।

৩৮৩.
সাঁই আমার অটল পদার্থ
নাইরে তাঁর জরামৃত।

৩৮৪.
যদি জরামৃত হয়, তবে অটল পদ না কয়
ফকির লালন বলে তা কয়জন বোঝে।

৩৮৫.
না ছিল আসমান জমিন পবনপানি
সাঁই তখন নিরাকারে।

৩৮৬.
এলাহি আল আলমিন, সিদরাতুল একিন
কুদরতি গাছ পয়দা করে।

৩৮৭.
গাছের ছিলো চার ডাল
হলো হাজার সাল,
এক এক ডাল, কি হাল
ছিলো তাঁর এতোই দূরে।

৩৮৮.
সত্তর হাজার সাল ধরে
গাছের ‘পরে সাধন করে,
বারিতলায় হুকুম হলো, নসূর ঝরিল
ঝরিয়ে দুনিয়া সৃষ্টি করে।

৩৮৯.
এইদিন সাঁই ডিম্বুভরে
ভেসেছিলো নৈরাকারে,
লালন বলে হায় কী খেলা, কাদের মাওলা
করেছে লীলা অপার পারে।

৩৯০.
শুনি ঘাড়ের উপরে মানুষ
মুর্শিদরূপে রয়েছে।

৩৯১.
ধরবো বলে এলাম আমি
খুঁজে পাইনে তাঁর দিশে।

৩৯২.
অন্ধকারে আর ধন্ধকারে
আর ছিলো কুত্তকারে।

৩৯৩.
আমি শুনবো কথা তোমার তরে
তাঁর উপরে কে আছে বসে।

৩৯৪.
আব, আতশ, খাক, বাত কিসে গড়ে
বলো গুরু সত্য করে,
হাওয়া পবন এলো কোন কারে
পানির জন্ম হয় কিসে।

৩৯৫.
আমার জনম গেলো তোমার আশে
তুমি দাও হে দেখা অন্তিমে এসে।

৩৯৬.
অধিন লালন ভেবে বলে
পেলাম না তোমার দিশে।

৩৯৭.
স্বরপের ঘরে অটলরূপ বিহারে
চেয়ে দেখ না তোরা।

৩৯৮.
ফনি মণি জিনি রূপের বাখানি
আছে দুইরূপে একরূপ হল করা।

৩৯৯.
আছে অটলরূপে সাঁই, ভেবে দেখলাম তাই
সেই রূপের নিত্যলীলা নাই।

৪০০.
যে জন পঞ্চতত্ত্ব যজে লীলারূপে মজে
সেই জানে রসিক রাগের ধারা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!