ভবঘুরেকথা
যীশু খ্রিস্ট ইশা খ্রিস্টান ঈশ্বরপুত্র

আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিবরণ

আদিতে ঈশ্বর আসমান ও দুনিয়া সৃষ্টি করলেন। দুনিয়া আকারবিহীন ও শূন্য ছিল এবং অন্ধকারে ঢাকা গভীর পানির উপরে ছিল, আর ঈশ্বরর রূহ্‌ পানির উপরে বিচরণ করছিলেন। ঈশ্বর বললেন, আলো হোক; তাতে আলো হল। তখন ঈশ্বর আলো উত্তম দেখলেন এবং ঈশ্বর অন্ধকার থেকে আলো পৃথক করলেন। ঈশ্বর আলোর নাম ‘দিন’ ও অন্ধকারের নাম ‘রাত’ রাখলেন। আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে তা প্রথম দিন হল।

পরে ঈশ্বর বললেন, পানির মধ্যে একটা শূন্যস্থান সৃষ্টি হোক ও পানিকে দু’ভাগে বিভক্ত করুক। ঈশ্বর এভাবে একটা শূন্যস্থান সৃষ্টি করে শূন্যস্থানের উপরের পানি থেকে শূন্যস্থানের নিচের পানি বিভক্ত করলেন; তাতে সেরকম হল। পরে ঈশ্বর শূন্যস্থানের নাম আসমান রাখলেন আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে দ্বিতীয় দিন হল। 

পরে ঈশ্বর বললেন, আসমানের নিচস্থ সমস্ত পানি একটি স্থানে সংগৃহীত হোক ও স্থল প্রকাশিত হোক; তাতে সেরকম হল। তখন ঈশ্বর স্থলের নাম ভূমি ও জমাকৃত পানির নাম সমুদ্র রাখলেন; আর ঈশ্বর দেখলেন যে, তা উত্তম। পরে ঈশ্বর বললেন, ভূমি ঘাস, বীজ উৎপাদন করে এমন ওষধি ও বীজসুদ্ধ নিজ নিজ জাত অনুসারে ফল উৎপাদন করে এমন সব ফলের গাছ ভূমির উপরে উৎপন্ন করুক; তাতে সেরকম হল।

ফলত ভূমি ঘাস, নিজ নিজ জাত অনুসারে বীজ উৎপাদনকারী ওষধি ও নিজ নিজ জাত অনুসারে বীজসুদ্ধ ফল উৎপাদন করে এমন গাছ উৎপন্ন করলো; আর ঈশ্বর দেখলেন যে, সেসব উত্তম। আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে তা তৃতীয় দিন হল।

পরে ঈশ্বর বললেন, রাত থেকে দিনকে পৃথক করার জন্য আসমানের শূন্যস্থানে জ্যোতির্গণ সৃষ্টি হোক; সেসব চিহ্নের জন্য, ঋতুর জন্য এবং দিনের ও বছরের জন্য হোক। এছাড়া, দুনিয়াতে আলো দেবার জন্য প্রদীপ বলে তা আসমানের শূন্যস্থানে থাকুক; তাতে সেরকম হল। ফলত ঈশ্বর দিনের উপরে কর্তৃত্ব করতে একটি মহাজ্যোতি ও রাতের উপরে কর্তৃত্ব করতে তার চেয়ে ক্ষুদ্র একটি জ্যোতি- এই দুটি বড় জ্যোতি এবং নক্ষত্রগুলো সৃষ্টি করলেন।

আর দুনিয়াতে আলো দেবার জন্য, দিন ও রাতের উপরে কর্তৃত্ব করার জন্য, এবং আলো থেকে অন্ধকার পৃথক করার জন্য ঈশ্বর ঐ জ্যোতির্গণকে আসমানের শূন্যস্থানে স্থাপন করলেন। ঈশ্বর দেখলেন যে, সেসব উত্তম। আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে চতুর্থ দিন হল।

পরে ঈশ্বর বললেন, পানি বিভিন্ন জাতের জীবন্ত প্রাণীকুলে ভরে উঠুক এবং ভূমির উপরে আসমানের শূন্যস্থানে পাখিগুলো উড়ে বেড়াক। তখন ঈশ্বর বড় বড় তিমি ও পানিতে চলাচলকারী বিভিন্ন জাতের জীবন্ত প্রাণীকুল এবং নানা জাতের পাখির সৃষ্টি করলেন। পরে ঈশ্বর দেখলেন যে, সেসব উত্তম। আর ঈশ্বর তাদের দোয়া করে বললেন, তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, সমুদ্রের পানি পরিপূর্ণ কর এবং দুনিয়াতে পাখিদেরও বৃদ্ধি হোক। আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে পঞ্চম দিন হল।

এভাবে আসমান ও দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত কিছুর সৃষ্টির কাজ সমাপ্ত হল। পরে ঈশ্বর সপ্তম দিনে তাঁর কাজ থেকে নিবৃত্ত হলেন, সেই সপ্তম দিনে তাঁর কৃত সমস্ত কাজ থেকে বিশ্রাম করলেন। আর ঈশ্বর সেই সপ্তম দিনকে দোয়া করে পবিত্র করলেন, কেননা সেই দিনে ঈশ্বর তাঁর সৃষ্ট ও কৃত সমস্ত কাজ থেকে বিশ্রাম করলেন।

পরে ঈশ্বর বললেন, ভূমি বিভিন্ন জাতের প্রাণী, অর্থাৎ নিজ নিজ জাত অনুসারে গৃহপালিত পশু, সরীসৃপ ও বন্য পশু উৎপন্ন করুক; তাতে সেরকম হল। ফলত ঈশ্বর নিজ নিজ জাত অনুসারে বন্য পশু ও নিজ নিজ জাত অনুসারে গৃহপালিত পশু ও নিজ নিজ জাত অনুসারে যাবতীয় ভূচর সরীসৃপ সৃষ্টি করলেন; আর ঈশ্বর দেখলেন যে, সেসব উত্তম।

পরে ঈশ্বর বললেন, আমরা আমাদের প্রতিমূর্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মানুষ সৃষ্টি করি; আর তারা সমুদ্রের মাছের উপরে, আসমানের পাখিগুলোর উপরে, পশুদের উপরে, সমস্ত দুনিয়ার উপরে ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় সরীসৃপের উপরে কর্তৃত্ব করুক। পরে ঈশ্বর তাঁর নিজের প্রতিমূর্তিতে মানুষ সৃষ্টি করলেন; ঈশ্বরর প্রতিমূর্তিতেই তাকে সৃষ্টি করলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করে তাদেরকে সৃষ্টি করলেন।

পরে ঈশ্বর তাদেরকে দোয়া করলেন; ঈশ্বর বললেন, তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও এবং দুনিয়া পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর আর সমুদ্রের মাছের উপরে, আসমানের পাখিগুলোর উপরে এবং ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর উপরে কর্তৃত্ব কর। ঈশ্বর আরও বললেন, দেখ, আমি সমস্ত ভূতলে অবস্থিত যাবতীয় বীজ উৎপাদনকারী ওষধি ও যাবতীয় বীজসুদ্ধ ফলদায়ী গাছ তোমাদেরকে দিলাম, তা তোমাদের খাদ্য হবে।

আর যাবতীয় ভূচর পশু ও আসমানের যাবতীয় পাখি ও ভূমিতে যাবতীয় গমনশীল কীট, এসব প্রাণীর খাবারের জন্য সবুজ সমস্ত ওষধি গাছ দিলাম। তাতে সেরকম হল। পরে ঈশ্বর তাঁর সৃষ্ট সমস্ত বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন, আর দেখ, সকলই অতি উত্তম। আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে ষষ্ঠ দিন হল।

এভাবে আসমান ও দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত কিছুর সৃষ্টির কাজ সমাপ্ত হল। পরে ঈশ্বর সপ্তম দিনে তাঁর কাজ থেকে নিবৃত্ত হলেন, সেই সপ্তম দিনে তাঁর কৃত সমস্ত কাজ থেকে বিশ্রাম করলেন। আর ঈশ্বর সেই সপ্তম দিনকে দোয়া করে পবিত্র করলেন, কেননা সেই দিনে ঈশ্বর তাঁর সৃষ্ট ও কৃত সমস্ত কাজ থেকে বিশ্রাম করলেন।

<<গ্রীক পৌরাণিকে সৃষ্টিতত্ত্ব ।। সৃষ্টিতত্ত্ব : জালালী মত>>

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………………
আরো পড়ুন:
গ্রীক পৌরাণিকে সৃষ্টিতত্ত্ব
বাইবেলে সৃষ্টিতত্ত্ব
সৃষ্টিতত্ত্ব : জালালী মত
মৎস্য অবতারের কাহিনী
কূর্ম অবতারের কাহিনী
বরাহ অবতারের কাহিনী
নৃসিংহ অবতারের কাহিনী
বামন অবতারের কাহিনী
পরশুরাম অবতারের কাহিনী
শ্রীরাম অবতারের কাহিনী

বলরাম অবতারের কাহিনী

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!