ভবঘুরেকথা

ভদ্রেশ্বরে ছিলেন এক বৃদ্ধ বণিক।
নাম যশ খ্যাতি তার ছিল চারিদিক।।
সপ্ত পুত্র রাখি বৃদ্দ গেল লোকান্তর।
ক্রমে ক্রমে বড় হয় সপ্ত সহোদর।।
এক অন্নে রাখি মাতা করিছে পালন।
তাদের বিবাহ দেন করিয়া যতন।।
ক্রমে ক্রমে সব অর্থ ফুরাইয়া যায়।
কার্য বিনা পুত্রদের না থাকে উপায়।।
সাত পুত্র কার্য লাগি ঘোরে নানা স্থানে।
কাজ পায় ছয় পুত্র এক এক স্থানে।
ছয় পুত্র কাজ করি টাকা আনে ঘরে।
টাকা হাতে পেয়ে মাতা আনন্দেতে মরে।
ছোট পুত্র কাজ লাগি ঘোরে দ্বারে দ্বারে।।

কাজ না পেয়ে রামু বেকার হয়ে পরে।
ছয় পুত্রে খাওয়ায় মাকে যত্ন করিয়া।।
রামুকে খেতে দেয় বিষাদিত হইয়া।
একে একে দেখে রামু বুঝিল সকল।।
টাকা বিনা কোন কাজ হয় না সফল।।
টাকা লাগি সদ্য তার ব্যথিত অন্তর।
ভেবে চিন্তে ঠিক করে হবে দেশান্তর।।
রামু এসে স্ত্রীর কাছে সব কথা বলে।
সাবিত্রী কথা শুনে ভাসে নয়ন জলে।।
স্বামীর শোকে সাবিত্রী বলে এক মনে।
পতি ছাড়া সন্তোষী মা থাকিব কেমনে।।
বল মোরে কোন নারী আছে পতি ছাড়া।
পতি হীনা নারী আমি হব গৃহহারা।।

তারপর ভেবে চিন্তে ঠিক করে মনে।
সন্তোষী মা ক্ষমা কর মোরে নিজ গুণে।।
যত কষ্ট হৌক তব দু:খ নাহি মনে।
ধন ছাড়া গতি নাই বুঝেছি এক্ষণে।।
দু:খিত সাবিত্রী ধরে রামুর চরণ।
বিদেশেতে যেতে হবে অর্থের কারণ।।
ছোট এক কাজ পায় মায়ের কৃপায়।
দিনে দিনে তার সেথা উন্নতি হইল।
তারপর নিজে ব্যবসা শুরু করিল।।
ব্যবসা লাভেই ধনী হয়ে যায় ধনে।
সাবিত্রীর কাছে টাকা পাঠায় যতনে।।
একশ টাকা রামু পাঠায় প্রতি মাসে।
সাবিত্রীর হাতে টাকা কভু নাহি আসে।।

দিবারাত্র খাটে তবু অন্ন নাহি তার
শ্বাশুরীর মুখ তবু দেখা যেন ভার।।
বনেতে কাঠ কুড়াতে যখনই যেত।
সারাদিন অন্ন জল কিছুই নাহি পেত।।
পথ মাঝে সাবিত্রী এক মন্দিরে যায়।
সন্তোষী মাতার ব্রত দেখে সে তথায়।।
সাবিত্রী বলেন এবে কোন দেবী হন।
ব্রত যদি করি আমি পাব কি ধন।।
সাবিত্রীর কথা শুনি সব নারী কয়।
শ্রীসন্তোষী মাতা তিনি সিদ্ধিদাত্রী হয়।।
প্রতি শুক্রবারে হয় ব্রতের বিধান।
ছোলা গুড় দিয়া ভোগ ভক্তিতে কর দান।।
অক্ষমকে দেয় ধন মূর্খে দেয় জ্ঞান।
পুত্র যশ সুখ শান্তি করেন প্রদান।।

পরম ভক্তি ভরে ব্রত কর পালন।
গ্রন্থ পাঠ করি ব্রত কর সমাপন।।
সেদিন সাবিত্রী বনে উপবাসী ছিল
পরম ভক্তি ভরে মার ব্রত করিল।।
এইরূপে ব্রত করি প্রতি শুক্রবারে।
ব্রত করি অবশেষে আসে নিজ ঘরে।।
তাহার ব্রতেতে দেবী সন্তুষ্ট হইল।
স্বপ্ন-মাঝ রামুকে মা রাত্রে দেখা দিল।।
রামু কহে, বল মাতা কেবা হও তুমি।
মা কহে শুন রামু সন্তোষী মাতা আমি।।
তব পত্নী ব্রত মোর করে যে যতনে।
তাই স্বপনে দেখা দেই আমি তব সনে।।
কাল ভোরে ভক্তি ভরে প্রণাম করিয়া।
অত:পর বসিবেক দোকান খুলিয়া।।

পরদিন রামু দেকে আনন্দিত মনে।
ক্রমে ক্রমে মাল বিক্রি হয় সারাদিনে।।
একদিন সব মাল বিক্রয় করিয়া।
বাড়ি গেল পত্নীর কাছে সে টাকা নিয়া।।
সেথায় দেখে সাবিত্রী খাটে প্রতিদিন।
তবু মাতা ঘৃণা ভরে দেখে সারাদিন।।
রামু কয় মা তব এ কেমন বিচার।
এরূপ করিবার কি কারণ তোমার।।
শুনি মাতা কয় তুমি কত টাকা দিবে।
এর চেয়ে বেশি সুখ কোথা হতে পাবে।।
কোন কথা না বলিয়া স্ত্রীকে নিয়ে যায়।
ছোট এক গৃহ মাঝে থাকে দুজনায়।।

সেই গৃহে অতি সুখে থাকে গো যতনে।
ব্যবসা সেথায় রামু করে এক মনে।।
সন্তোষী মার কৃপায় নাহি পারাপার।
কিছুদিনে হয় ধনী ঐশ্বর্য অপার।।
দেখি মাতা ভাই সব যায় তার দ্বারে।
তাদের কথায় রামু ভোলে না অন্তরে।।
বিষাদিত হয়ে সব নিজ গৃহে যায়।
কিসে রামু ধনী হল ভেবে নাহি পায়।।
এক বৎসর পরে পুত্র হইল রামুর।
অপরূপ দিব্যকান্তি অতি সুচতুর।।
পুত্র ধন দেখি সবে জ্বলিতে লাগিল।
নিশ্চয় জানিতে হবে কেমনে পাইল।।

সাবিত্রীর কাছে সবে করে নিবেদন।
কিসে এত সুখ হয় বল সে কারণ।।
সাবিত্রী তখন কয় জুড়ি দুই কর।
মার কৃপায় হয় তাই মোদের উপর।।
যেন জন করে পূজা ভক্তিযুক্ত মনে।
ধন, অর্থ, যশ তার বাড়ে অণুক্ষণে।।
মাকে ভোগ দাও তবে, গুড় ছোলা দিয়া।
শুক্রবারে কর পূজা এক মন দিয়া।।
টক দ্রব্য কোন কিছু খাইবে না আর।
টক খেলে মাহাপাপ হইবে তোমার।।
এইরূপে যদি মিলি ব্রত কর সবে।
ব্রত শেষে ভক্তি ভরে প্রসাদ খাইবে।।
সন্তোষী মাতার কথা হল সমাপন।
প্রেমানন্দে হরি হরি বল সর্বজন।।
প্রণিপাত করিয়া দেবীরে অত:পর।
ব্রতের মানস করি খাবে তারপর।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!