ভবঘুরেকথা
প্রজাপিতা ব্রহ্মা

আত্মা অবশ্যই পুর্জন্ম লয়। কেন না দেখা যায়, সংসারে কেহ সুশিক্ষিত, সভ্য, কুলীন এবং ধনবান মাতা পিতার ঘরে আবার কেহ অশিক্ষিত অসভ্য এবং নির্ধন মাতা পিতার ঘরে জন্মগ্রহণ করে। এখন বলুন, ইহার কারণ কি? বিনা কারণে কোন কার্যই হয় না। অতএব এই বিভিন্ন পরিস্থিতি যথা ধনী-নির্ধন, রোগী-নিরোগী, স্ত্রী-পুরুষ রূপে জন্ম হওয়া কি এই সিদ্ধ করে না যে প্রত্যেক আত্মার পূর্বজন্মের- কিছু এমন কর্ম ছিল যাহার ফল সে ঐ জন্মে ভোগ করিয়া শেষ করিতে পারে নাই। শরীর ত্যাগ করিবার পর আপন কর্ম এবং সংস্কার অনুযায়ী পুনরায় কর্মানুসারে সেই পরিবেশে জন্মগ্রহণ করিয়াছে?

…এই জন্মে আমরা যে সুখ-দু:খ ভোগ করি তাহার কিছুটা পূর্বজন্মের কর্মের ফল এবং বাকিটা এই জন্মের কৃতকর্মের ফল। …পূর্বজন্মের কথা কি আর বলিব, আত্মা এই জন্মেরই অনেক কথা বা ঘটনা ভুলিয়া যায়! যেমন আত্মার মধ্যে স্মৃতির শক্তি আছে, তেমনি আবার অল্পজ্ঞ স্বভাব বিস্মৃত হওয়া। ইহা প্রায়ই দেখা যায়, মানুষ দুই-এক মাসের আগের ঘটনা ও ভুলিয়া যায়। নিদ্রার পর, মানসিক আঘাতের পর মূর্ছার পর অথবা স্থান, সম্বন্ধ এবং পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ অনেক কথা ভুলিয়া যায়। এই রূপ মৃত্যুও এক প্রকার ঘটনা যাহার ফলে মানুষ অনেক কথাই ভুলিয়া যায় অল্প যাহাও বা মনে থাকে, শৈশব অবস্থার জন্য সে তাহা ব্যক্ত করিতে পারে না। আপনারা দেখিয়া থাকিবেন, জন্মাইবার অল্পক্ষণ পরেই শিশু কখনো বা কাঁদে, কখনও বা হাসে। তাহার নিকট দৃষ্টি আকর্ষণ করিবার মত কোন ব্যক্তি বা বস্তু যদি নাও থাকে, অথাপি সে কাঁদিতে বা হাসিতে থাকে। এখন বলুন, ঐ শৈশব অবস্থায় যখন তাহার সাংসারিক লাভ-ক্ষতি, সুখ-দু:খ, জয়-পরাজয় কোন কিছুরই অনুভতি নাই তখন কোন্ কারণে সে কাঁদে বা হাসে? ইহা স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে পূর্বজন্মের কাহিনী উহার স্মরণে আসিতেছে। কিন্তু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিপূর্ণ বিকাশ না হওয়ার জন্য সে মুখ দ্বারা তাহার এ অনুভূতি ব্যক্ত করিতে পারিতেছে না।

সংবাদপত্রে আমরা এইরূপ খবর প্রায়ই পাই যে শিশু জন্মাইবার কিছুদিন পর অর্থাৎ শৈশবে সে আপনার পূর্ব জন্মবৃত্তান্ত বলিতেছে। পূর্বজন্ম বৃত্তান্ত বলিবার সময় সে নিজের মৃত্যুর কারণও বলিতেছে এবং তাহার ঘর ও মাতা-পিতার নামও বলিতেছে। কিন্তু সকল শিশুই পূর্বজন্ম বৃত্তান্ত বলিতে পারে না। বাস্তবিক-পক্ষে পূর্বজন্মের কথা স্মরণ না থাকা ভাল। কারণ তাহাতে অনেক প্রকার অসুবিধা ও জটিল সমস্যার সৃষ্টি হইতে পারে। যেমন ধরুন কোন ব্যক্তি বাজার যাইবার পথে অন্য ব্যক্তিকে দেখিতে পাইয়া তাহার মনে পরিয়া গেল যে ঐ ব্যক্তি তাহাকে পূর্বজন্মে প্রহার করিয়াছিল, তাহা হইলে ঐ সময়ে উভয়েই বিবাদে লিপ্ত হইয়া পরিবে। আবার ধরুন, স্কুল যাইবার পথে কোন বালকের মনে পূর্বজন্মের স্মৃতি ফিরিয়া আসিল এবং পথে চলমান কোন স্ত্রী-পুরুষকে দেখিয়া চিনিয়া ফেলিল যে তাহার পূর্বজন্মের মাতা-পিতা। তাহা হইলে সে তৎক্ষণাৎ স্কুল ভুলিয়া তাহাদের সঙ্গে যাইবার জন্য পথ ধরিবে। এদিকে তাহার এই জন্মের মাতা-পিতা তাহাকে খুঁজিয়া খুঁজিয়া ব্যাকুল হইবে। সুতরাং পূর্বজন্মের কথা মনে না থাকাই ভাল কারণ তাহাতে মানুষের জীবনে জটিলতা বাড়িবে। আবার পূর্বজন্মের বৃত্তান্ত মনে থাকিলে এই জন্মে উত্তম কার্যে ও কর্মফল ভোগে বিঘ্ন সৃষ্টি হইবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!