ভবঘুরেকথা
মাতৃময়ী তিনরূপ সারদা শ্রীমা আনন্দময়ী

মাতৃময়ী তিনরূপ

-জলি সাহা

ঈশ্বরের এক অসাধারণ রূপ, মা। ‘পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম।ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।’ এই নিয়মের পালন করতে স্বয়ং ভগবানও এক মায়ের মাধ্যম ছাড়া যুগে যুগে মানব উদ্ধারের জন্য ধরাধামে অবতীর্ণ হতে পারেননি।

ব্রহ্মাণ্ডের সর্বময় কর্তা দেখেছিলেন জগতে পিতা, প্রভু, গুরুদেবদের কর্তৃত্ব বজায় থাকলেও সেই পিতৃস্নেহ ও পুরুষালী কঠোর শাসনে ফাঁক কোথাও ছিলই। তিনি বুঝেছিলেন, অবাধ্য সন্তান বাপ অপেক্ষা বেশি মা ঘেঁষা। তাই জগৎ শাসন করতে অপরূপ মায়েদের প্রয়োজন ছিলই। প্রয়োজন ছিল এমন আধারের যিনি সর্ব অর্থেই যোগ্য মা হবেন।

বহু পূর্বে মা বলতে ছিল তন্ত্রশক্তি বিমূর্ত মাতৃ আরাধনা। সেই শক্তিকে ভক্তির রসে ঘরের মেয়ে, ছেলের মা করে তুললেন রামপ্রসাদ, রাজারামকৃষ্ণ, কমলাকান্তের মতো মাতৃসাধকরা।

জগতের এই সর্বশ্রেষ্ঠ মায়েরা সংখ্যায় একজন নন অসংখ্য। তাঁদের কাউকে আমরা চিনি, আবার কাউকে নয়। এই পূজনীয় মায়েদের মধ্যে থেকে তিনজনের জীবনের কিছু উল্লেখযোগ্য দিকগুলিই এই প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়। তাঁরা হলেন-

‘শ্রীমা সারদা, শ্রীমা আনন্দময়ী এবং পণ্ডিচেরিতে ঋষি অরবিন্দের আশ্রমের এক অসামান্য সাধিকা শ্রীমা।’

এই তিনমায়ের অদ্ভুত কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। এই তিন মা-ই ‘শ্রীমা’ নামে জগতে পরিচিতা ও সর্বত্র পূজিতা। তাঁরা তিনজনই আদ্যাশক্তির অংশ।

শ্রীশ্রী মা সরদামণি:

শ্রীশ্রীমা সারদামণি নিজ স্বামীর দ্বারা ষোড়শী রূপে পূজিত হয়েছিলেন এবং শ্রীরামকৃষ্ণের কাছ থেকে দীক্ষামন্ত্র পেয়েছিলেন। শ্রীশ্রী মা আনন্দময়ী আবার স্বয়ং নিজ স্বামীকে মন্ত্র দীক্ষা ও সন্ন্যাস দিয়েছিলেন। তাঁর স্বামীও মা আনন্দময়ীকে কালীরূপে পুজো করেছিলেন এবং শ্রীমাও নিজের গুরু ঋষি অরবিন্দের দ্বারা বন্দিত জগতে মহাদেবীরূপে প্রচারিত হয়েছিলেন।

দক্ষিণেশ্বর মন্দির থেকে, শ্যামপুকুর হয়ে কাশীপুর উদ্যানবাটি। কিন্তু যিনি এই অবতার শ্রেষ্ঠের বাসুকি নাগ হয়েছিলেন, তিনি তাঁরই লীলাসঙ্গিনী শ্রীশ্রীমা সারদা। তিনি সর্ব অর্থেই ছিলেন একজন যোগ্য মায়ের স্বরূপ। শ্রীরামকৃষ্ণের শক্তি। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ভাবধারায় অদ্ভুত মিশেল। তিনি শুধু মানুষ, জীব-জন্তুর মা ছিলেন না; গরু, বিড়াল, পাখি, পিঁপড়ে ইত্যাদি জগতের প্রতিটি চেতন প্রাণীকে তিনি আপন স্নেহডোরে বেঁধে ফেলেছিলেন।

আজ যখন তিনি সূক্ষ্ম দেহে রয়েছেন তখনও প্রতিটি জীবের প্রতি প্রকাশিত হয়ে চলেছে মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা। ‘আমি সত্যিকারের মা, গুরুপত্নী নয়, কথার কথা মা নয় সত্য জননী।’

শ্রীমা:

মীরা আলফাসা তিনি মা বা শ্রীমা বা দি মাদার বালিকা বয়সেই তাঁর পূর্ণ যোগসিদ্ধির প্রমাণ পাওয়া, গিয়েছিল আলজিরিয়ার ক্লেমসন শহরের নিকটস্থ একটি অরণ্যে। আগেই মীরা কঠোর যোগসাধনায় সেই চার বছর বয়সেই। একটু পরিণত বয়সে পৌঁছে মীরার জীবনে এক নতুন অধ্যায় সূচিত হয়। তিনি ধ্যান ও প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে বাক্যলাপ করতেন।

আশ্চর্যের বিষয় মীরা আধ্যাত্মিক পথে চলার যাবতীয় শিক্ষা পেয়েছেন স্বপ্নে ও ধ্যানের গভীরে। স্বপ্নে এক ‘নির্বাক ও প্রশান্তমতি বৃদ্ধ’ মীরাকে ধ্যানে যাবতীয় আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিয়ে এসেছেন এবং মীরা তাঁকে ‘কৃষ্ণ’ বলে ডাকতে শুরু করেন।

শ্রী অরবিন্দের মতে, স্বয়ং জগন্মাতা তাঁর বিশ্বাতীত ও বিশ্বগত সবকিছু বৃহত্তর শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীমায়ের রূপ ধরে পৃথিবীতে জীবের কল্যাণের জন্য অবতীর্ণ হয়েছেন। মায়ের চেহারার মধ্যে লক্ষ্যণীয় হল মায়ের চোখের অপূর্ব চাউনি ও মুখের মিষ্টি হাসি। মায়ের চোখের দিকে কেউ সরাসরি তাকালে এক পলকের মধ্যে মা দর্শকের অন্তরের সবকিছু জেনে নিতেন। যেন মায়ের হাসি অভয় দিয়ে বলছে, ‘ভয় নেই,ও বিপদ শিঘ্রই কেটে যাবে।’

পরবর্তীকালে ১৯১৪ সালের ২৯ মার্চ তিনি যখন প্রথম ভারতের মাটিতে পা রাখেন এবং পণ্ডিচেরিতে উপস্থিত হন, তখন দেখলেন পণ্ডিচেরি আশ্রমের ঋষি অরবিন্দই তাঁর স্বপ্নের গুরু ও কৃষ্ণ। যোগীবর অরবিন্দকে যেমন মীরা চিনলেন, তেমনি মীরাকে দেখামাত্র ঋষি অরবিন্দও চিনতে পারলেন, ইনিই হলেন জগ্নমাতার চার মহাশক্তির প্রতীক। জগতের উদ্ধারকার্যে মহাশক্তি মানবের রূপ ধরে অবতীর্ণ হলেও নিজের ভগবৎসত্তাকে ছেড়ে, আসেননি।

লোকশিক্ষার হেতু মীরা শ্রী অরবিন্দের কাছে দীক্ষা নিলেন এবং পণ্ডিচেরিতেই থাকবেন বলে স্থির করলেন। পুনরায় যখন পণ্ডিচেরিতে মীরার আগমন ঘটল ১৯২০ সালের ২৪ এপ্রিল। তখন থেকেই মীরা নামক পোশাকটি চিরকালের মতো পরিত্যাগ করে স্বমহিমায় আত্মপ্রকাশ করলেন শ্রীমা।

শ্রী অরবিন্দের মতে, স্বয়ং জগন্মাতা তাঁর বিশ্বাতীত ও বিশ্বগত সবকিছু বৃহত্তর শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীমায়ের রূপ ধরে পৃথিবীতে জীবের কল্যাণের জন্য অবতীর্ণ হয়েছেন। মায়ের চেহারার মধ্যে লক্ষ্যণীয় হল মায়ের চোখের অপূর্ব চাউনি ও মুখের মিষ্টি হাসি। মায়ের চোখের দিকে কেউ সরাসরি তাকালে এক পলকের মধ্যে মা দর্শকের অন্তরের সবকিছু জেনে নিতেন। যেন মায়ের হাসি অভয় দিয়ে বলছে, ‘ভয় নেই,ও বিপদ শিঘ্রই কেটে যাবে।’

মায়ের জীবদ্দশায় যখন কেউ পণ্ডিচেরি আসতে পারত না, তখন সে দূর থেকে শ্রীমায়ের আশির্বাদ চাইত। মা তখন সেই আশীর্বাদ প্রার্থীকে টেলিগ্রাম বা চিঠিতে ‘’Blessings’ কথাটা লিখে পাঠাতেন। মা বলতেন, ‘যে ভগবানকে ভালবাসতে পারে সে অত্যন্তই ভাগ্যবান, কারণ ভগবান সব সময়ই তার কাছে রইলেন।

…ভগবানের দিকে ফেরো, তা হলে সব দুঃখই ঘুঁচে যাবে। জগন্মাতার এই রূপের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল জগতে শিক্ষার মহাযজ্ঞ প্রজ্বলিত করা। মীরা জন্মসুত্রে বিদেশিনী ছিলেন ঠিকই, কিন্তু ছোট থেকেই ভারতবর্ষকেই নিজের মাতৃভূমি বলে মেনেছেন-ভালবেসেছেন।

শ্রীশ্রীমা আনন্দময়ী:

‘তোমরা প্রতিদিনই একটা নির্দিষ্ট সময় দশ মিনিট তাঁকে (ঈশ্বরকে) ডাকবে। যদি সংসারে কাজের জন্য এক জায়গায় চুপ করে বসতে না পারো, তবে অন্তত সেই নির্দিষ্ট সময় মৌন থেকে(হাতের কাজ করো) যার যেভাবে ইচ্ছে তাঁকে স্মরণ করবে। এতে শুদ্ধ-অশুদ্ধ বিচার নেই। কাপড় ছেড়ে শুচি হওয়ার দরকার নেই। এমনকি সেই নির্দিষ্ট সময়টাতে যদি শৌচে যাও, তাও বাঁধা নেই। সেখানে বসেই তাঁকে ডাকবে।

নাম করবে, মনে করবে এই দশ মিনিট তাঁকে দিয়েছি।’ এমন সহজ-সরল ভাষায় ঈশ্বরকে দশ মিনিটের জন্য নিজের সন্তানদের কাছে বেঁধে দিয়েছিলেন যিনি, তিনিই শ্রীশ্রীমা আনন্দময়ী মা।

নিত্য-শুদ্ধ-মুক্ত-চৈতন্যরূপিনী মা আনন্দময়ী। পুঁথি-শাস্ত্র কিছুই তিনি পড়েননি। তাঁর ছিল না কোনো দীক্ষাগুরু। নিজেই নিজেকে দীক্ষা দিয়েছিলেন। নিজেই নিয়েছিলেন লোক শিক্ষার চাপরাস। ভারত জুড়ে হরিনাম ও কর্মযজ্ঞের বান ডেকেছিলেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দু’হাত ভরে বিলিয়েছিলেন অহেতুকী কৃপা। জীবন্ত কালী মা আনন্দময়ী।

জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয়েছিল নির্মলাসুন্দরী। অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন নির্মলা। আশ্চর্যের বিষয় কেউ শিখিয়ে না দিলেও সংসারের বহু কাজ দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতেন। অত্যন্ত সরল মনের ছিলেন বলে লোকে তাঁকে বোকা ভাবত। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেব-দেবীদের আনাগোনা দেখতে পেতেন। আর ছিলেন প্রচণ্ড সত্যবাদী।

কোনদিন কেউ নির্মলাকে সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। চৌদ্দ বছর বয়সে ঢাকা বিক্রমপুরের রমণীমোহন চক্রবর্তীর সঙ্গে নির্মলার বিবাহ হয়। পরবর্তীকালে নির্মলা স্বামীর রমণীমোহন নামটি বদলে ‘ভোলানাথ’ রাখেন এবং মায়ের ভক্তরা তাঁকে ‘বাবা ভোলানাথ’ নামে সম্বোধন করত। বিয়ের পর শুরু হয় নির্মলার সাধনজীবন।

এই তিন মায়ের জন্মের সময়, স্থান ও কর্মক্ষেত্র আলাদা হলেও তাদের জীবনের ব্রত ছিল একটি – অচৈতন্য জীবের মনে চৈতন্য সম্পাদন। তাঁরাই জগতের সার্থক মা। এঁরা তিনে এক, একে তিন। সন্তান মায়ের সম্বন্ধে যতই অজ্ঞ হোক না কেন, মা তাঁর সন্তানের সম্বন্ধে অজ্ঞ হতে পারেন না।

স্বামী-স্ত্রীর চিরায়ত সম্পর্কে তাঁরা কোনও দিন বাঁধা পরেননি। দিন-রাত নির্মলা ধ্যান বা সমাধিতে মগ্ন থাকতেন। দিনের পর দিন রাতের পর রাত ভোলানাথ দেখেছেন নির্মলার অসাধারণ সব ক্রিয়া। নির্মলাকে যখন প্রশ্ন করা হয়, ‘তুমি কে? নির্মলা তখন ধীরে ধীরে উত্তর দেন, পূর্ণব্রহ্ম নারায়ণ।’ মহাশক্তি অন্নপূর্ণা রূপে স্বামীকে ভিক্ষা দিয়েছেন এবং আনন্দময়ীরূপে স্বামীকে দীক্ষা দিলেন।

জ্যোতিষচন্দ্র, ইনি ভক্তমহলে ‘ভাইজি’ নামে পরিচিত ছিলেন ইনি প্রথম দর্শনেই মায়ের ভেতর নিজ ইষ্টমূর্তির দর্শন পান। মা যখন ভোলানাথ এবং ভাইজির সঙ্গে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতলায় যান, তখন সেখানে নির্মলার আনন্দঘনমূর্তি দেখে অভিভূত ভাইজির মুখ থেকে উচ্চারিত হল ‘আনন্দময়ী মা।’ সেই দিন থেকে নির্মলা নামটি সম্পূর্ণ আড়ালে সরে গিয়ে জগৎ সভায় প্রকাশিত হলেন মা আনন্দময়ী।

মায়ের ভক্তদের কথায়, ‘…অনেক সাধুরা ওষুধপত্র দেন, তাই সাধুরকাছে ভিড় হয়। আর ইনি (শ্রীশ্রীমা) তো কিছুই দেন না। তবুও হাসি ও কথায় এমন মিষ্টত্ব যে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হয় না।’

মা সহজভাবে বুঝিয়ে দিতেন, ‘ভগবানের ফল হবেই। ভগবানের নামেই যে সব শক্তি রয়েছে। তবে নিষ্ঠা চাই।তাইতো সর্বদাই এই শরীরটা বলে নাম করে যাও। চিত্তশুদ্ধি, মনস্থির এইসব নামের দ্বারাই হয় …হরিকথায় কথা আর সব বৃথা ব্যথা। হরি নামে যিনি দুঃখ হরণ করেন।’

এই তিন মায়ের জন্মের সময়, স্থান ও কর্মক্ষেত্র আলাদা হলেও তাদের জীবনের ব্রত ছিল একটি – অচৈতন্য জীবের মনে চৈতন্য সম্পাদন। তাঁরাই জগতের সার্থক মা। এঁরা তিনে এক, একে তিন। সন্তান মায়ের সম্বন্ধে যতই অজ্ঞ হোক না কেন, মা তাঁর সন্তানের সম্বন্ধে অজ্ঞ হতে পারেন না।

যুগে যুগে এমন মায়েদের প্রেমঢালা সরলতা ঈশ্বরের অতুল ঐশ্বর্যকেও ম্লান করেছে। তাঁদের আধ্যাত্মিকা প্রেরণা সাধারণ মানুষের দেহ-মনে সেই পরম সত্যকে উপলদ্ধি করিয়ে পরমানন্দের সন্ধান দিয়েছে।

……………………………………..
অরিণাভ দত্তের নিবন্ধ থেকে।
শ্রুতিলিখন জলি সাহা (ঠাকুর)

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………………..
আরো পড়ুন:
মা সারদা দেবী
প্রজ্ঞাপারমিতা শ্রীশ্রীমা সারদা
বহুরূপিনী বিশ্বজননী সারদামণি
মা মনোমোহিনী
শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে সপ্তসাধিকা
মাতৃময়ী তিনরূপ
মা আনন্দময়ী
আনন্দময়ী মায়ের কথা
ভারত উপাসিকা নিবেদিতা
রাসমণি
নিরাহারা যোগিনী মায়ের সন্ধানে
পূণ্যশীলা মাতা কাশীমণি দেবীর সাক্ষাৎকার
আনন্দময়ী মা
মা মারিয়াম :: পর্ব-১
মা মারিয়াম :: পর্ব-২
মা মারিয়াম :: পর্ব-৩
মা মারিয়াম :: পর্ব-৪
মীরার কথা
অলৌকিক চরিত্র মাদার তেরেসা
মা আনন্দময়ীর কথা
বৈষ্ণব সাধিকা যশোদা মাঈ
আম্মার সঙ্গলাভ
শ্রীশ্রী সাধিকা মাতা
জগৎ জননী ফাতেমা-১
জগৎ জননী ফাতেমা-২
জগৎ জননী ফাতেমা-৩
জগৎ জননী ফাতেমা-৪
জগৎ জননী ফাতেমা-৫
জগৎ জননী ফাতেমা-৬
জগৎ জননী ফাতেমা-৭
জগৎ জননী ফাতেমা-৮
জগৎ জননী ফাতেমা-৯
জগৎ জননী ফাতেমা-১০
জগৎ জননী ফাতেমা-১১
জগৎ জননী ফাতেমা-১২

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!