ভবঘুরেকথা
ইবাদত সিয়াম সাধনা মোনাজাত প্রার্থনা ভক্তি

-ড. হাসান রাজা

মহান সৃষ্টিকর্তা রব্বুল আলামিন অনেক শখ করে তাঁর নিজ সুরতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। অত:পর যুগে যুগে সেই মানুষকে সঠিক সুপথে পরিচালিত করার জন্য মানুষেরই মধ্যে থেকে তাঁর যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করে পৃথিবীতে প্রেরণ করে চলেছেন।

এই মানুষের মস্তিষ্ক সকল প্রাণিকুলের মধ্যে সবচেয়ে সূক্ষ্ম আর সৃজনশীল। পশু-পাখির চাইতে বুদ্ধি, বিবেক আর স্বাধীন ইচ্ছা শক্তিই মানুষকে এই পৃথিবীতে সকল সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে। সকল সৃষ্টিজীব মহান আল্লাহর বেঁধে দেওয়া সুনির্দিষ্ট জীবনচক্রে তাঁরই ইবাদতে মশগুল রয়েছে।

তাদের নিজস্ব কোন ইচ্ছা শক্তি দান করা হয় নি। তাঁদের কোন উন্নত বিবেক বোধ নেই। কিন্তু মানুষের এই উন্নত সৃজনশীল বিবেক বোধের দরুণ মানুষ নানাভাবে বিপথগামীতায় আচ্ছন্ন হয়। এই বিপথগামী নিয়ন্ত্রণহীন কুচিন্তার নাম শয়তান। শয়তানের আরেক নাম আমিত্ব।

এই আমিত্বরূপী শয়তানের প্ররোচনায় যুগে যুগে মানুষ তার সহজাত সুপ্রবৃত্তি মানবিক বোধ থেকে ক্রমশ নিম্নগামী হয়ে ধ্বংসাত্মক পশু প্রবৃত্তির কাছে ধরাশায়ী হয়ে মানবজীবনকে অস্থিতিশীল করে তোলে। পৃথিবীর সকল জ্ঞানের সিংহদ্বার সারোয়ারে কায়েনাত মাওলাল মুমেনিন হযরত আলীর মতে পৃথিবীর সকল মানুষকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে একদল ভাল মানুষ আর একদল খারাপ মানুষ।

এবং পবিত্র কোরানে মহান সৃষ্টিকর্তা পরম আল্লাহরূপে বলেছেন, মানুষকেই তিনি তার প্রতিনিধি হিসেবে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। এই মানুষই তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়। তাই এই মানুষ সম্পর্কে তিনি আরও ঘোষণা করেছেন যে, মানুষ তার রহস্য এবং তিনি মানুষের রহস্য।

এই খারাপ মানুষরা বিভিন্ন সময় মানুষে-মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ, হানা-হানি, খুন-রাহাজানিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে এই মানব সমাজকে বিপন্ন করে তোলে। এমনি বিপথগামীতায় আত্ম প্রতারিত মানব সমাজকে স্থিতিশীল করতে মহান আল্লাহ তার মনোনীত ব্যক্তিকে প্রতিটি ভাষায় এবং প্রতিটি কাওমে বা গোত্রের মধ্যে প্রতিনিধিরূপে প্রেরণ করেন। যাতে তারা মানুষকে মহান আল্লাহর ইবাদত ও তাগুত পরিহার করতে শেখাতে পারেন।

এই সুপথ নির্দেশকদের নবী, রাসুল, পীর-পয়গম্বর, অলি-আল্লাহ, সুফি-দরবেশ, মুণি-ঋষি, গুরু-মূর্শেদ, সাধক-ফকির ইত্যাদি নামে আমাদের মানব সমাজে সম্বোধন করা হয়ে থাকে। এই সমস্ত নবী-রসুলদের মূল কাজ হচ্ছে মানুষকে তাঁর পরম সত্ত্বার প্রকৃত স্বরূপকে জানিয়ে দেয়া।

‘নূর মুহাম্মদ’ সকল সৃষ্টির আদিশক্তি-স্রষ্টা পরম আল্লাহ। ধর্মগ্রন্থ মতে পরম শূন্যতার মধ্যে একক অর্থ- নিরাকার সত্তারূপে তিনি আদিতে গোপন ছিলেন। অতঃপর তিনি নিজেকে প্রকাশ করতে চাইলেন। প্রথমে ডিম্বাকারে পানিতে ভাসমান ছিলেন। এরপর ৬ দিনে তিনি সকল মূর্তিমান বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করলেন।

এই অশেষ সৃষ্টির মাঝে ‘রব’ রূপে মহান সৃষ্টিকর্তা সকল বস্তুতে বর্তমান রয়েছেন। তবে সৃষ্টিজগৎ জুড়ে শতকোটি প্রাণের উপস্থিতি থাকলেও তিনি কেবল মাত্র মানুষের মাঝেই নিজেকে প্রকাশিত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাই নিজেকে প্রকাশ বিকাশের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে মানুষকেই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে তথা আশরাফুল মাখলুকাত রূপে তিনি সৃষ্টি করেছেন।

এবং পবিত্র কোরানে মহান সৃষ্টিকর্তা পরম আল্লাহরূপে বলেছেন, মানুষকেই তিনি তার প্রতিনিধি হিসেবে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। এই মানুষই তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়। তাই এই মানুষ সম্পর্কে তিনি আরও ঘোষণা করেছেন যে, মানুষ তার রহস্য এবং তিনি মানুষের রহস্য।

সুতরাং সকল সৃষ্টির মাঝে তিনিই পরমসত্তা রব রূপে প্রচ্ছন্ন থাকলেও একমাত্র মানুষের মনোজগতেই তিনি নিরন্তরভাবে নিজেকে প্রকাশিত করতে চান। পবিত্র কোরানুল কারীমের প্রথম সুরা আলা ফাতিহার প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠিত প্রশংসা রব্বুল আলামীন তথা সকল মনোজগতের রবের জন্য।

‘ধৃ’ ধাতু থেকে ধর্মের উৎপত্তি। যে ব্যক্তি বা বস্তু যা ধারণ করে তাই তার ধর্মের প্রকাশ। মানুষের দেহমনে রয়েছে সাতটি ইন্দ্রিয় দ্বার। চোখ, কান, নাক, মুখ, জিহ্বা, চামড়া ও মনরূপে সাতটি ইন্দিয় দিয়ে বিষয়রাশী হয়ে যা কিছু দৃশ্য, শব্দ, ঘ্রাণ, কথা, স্বাদ, স্পর্শ ও অনুভূতিরূপে আমাদের মানব অস্তিত্ত্বে প্রবেশ করে এগুলিকেই মূলত বলা হয় ধর্মরাশী।

সুতরাং রহস্যময় মানবদেহে তিনি রবরূপে গোপন ও বন্দি অবস্থায় দেহমনের জ্যোতি রূপে ঘুমন্ত রয়েছেন। এখন মানুষ কিভাবে তার এই ঘুমন্ত বন্দি অবস্থা থেকে সাধনাবলে নিজের চিরমুক্ত রবরূপী আত্মপরিচয় লাভ করে আপন সত্তাকে জাগ্রত করে সৃষ্টির এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হবে এই সত্যের অনুসন্ধানই মূলত মানুষের সাধনা-আরাধনা আর ব্যক্তি নিরপেক্ষ ধর্মদেশনা। যা অর্জনের জন্য তার আপন অস্তিত্বের পরম প্রজ্ঞা আত্মজ্ঞান থাকাটা প্রাথমিক শর্ত।

মানব সভ্যতার ইতিহাসে সময়ের প্রয়োজনে যুগে যুগে যুগ-সমস্যা অনুসারে মানুষকে সুপথ প্রদর্শক মাহাদী রূপী নবী- রাসুলগণ সমাজে যে জীবনব্যবস্থা বা জীবনদর্শন জগৎবাসীদের জন্য দান করেছেন তা সকল সময়ের জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য। এই জীবনাদর্শকে অতীত সময়ের এক একজন নবী রাসুলের কতিপয় অনুসারীগণ নিজেদের সম্পদ বলে মিথ্যা দাবী করে নিজেদের আলাদা সম্প্রদায়রূপে প্রকাশ করেছেন।

কিস্তু অতীতের সকল নবী-রাসুলের জীবনাদর্শকে স্বীকৃতি দিয়ে মানবজাতীর মুক্তির জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণরূপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব হিসাবে ‘আল কোরান’কে মহান রব্বুল আলামিন নাজেল করেন, পৃথিবীর সকল নবী-রাসুলগণের সত্যায়ণকারী জগতের রহমত শাহানশাহে দো-জাহা হযরতে মুহাম্মদ মুস্তাফা আহমদ মুস্তাফা মাওলানা মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহর উপর।

যদিও পৃথিবীর সকল নবী-রাসুলগণই মহান আল্লাহর কাছে সর্বস্ব দিয়ে আত্মসমর্পণের ধর্ম ইসলাম প্রচার করেছেন। কিন্তু এই ইসলাম তথা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের পবিত্র ধর্ম ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবনদর্শন হিসেবে এর উপর রাজি-খুশি থাকার ঘোষণা পবিত্র কোরানুল কারীমে মহান আল্লাহতায়ালা সুরা মায়েদায় ঘোষণা করেন। সুতরাং পৃথিবীর সকল মানুষের আত্মমুক্তির দিক নির্দেশক জীবনদর্শন যে আল কোরান সেটি সম্পর্কে কোন সংশয় নেই কারও।

তাই পবিত্র ইসলাম ধর্মের সকল ভিতর-বাহিরে যে সকল নিয়ম-কানুন, বিধি-নিষেধ অবশ্য পালনীয় তা পৃথিবীর সকল মানুষের আত্মমুক্তিার জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য। গবেষণায় দেখা যায়, কালেমা, সালাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত ও কুরবানীসহ পবিত্র ইসলাম ধর্ম দর্শনের সকল বিধি-নিষেধসমূহই মানব জাতির সামগ্রিক কল্যাণের জন্য সর্বোত্তম জীবনাদর্শ।

‘ধৃ’ ধাতু থেকে ধর্মের উৎপত্তি। যে ব্যক্তি বা বস্তু যা ধারণ করে তাই তার ধর্মের প্রকাশ। মানুষের দেহমনে রয়েছে সাতটি ইন্দ্রিয় দ্বার। চোখ, কান, নাক, মুখ, জিহ্বা, চামড়া ও মনরূপে সাতটি ইন্দিয় দিয়ে বিষয়রাশী হয়ে যা কিছু দৃশ্য, শব্দ, ঘ্রাণ, কথা, স্বাদ, স্পর্শ ও অনুভূতিরূপে আমাদের মানব অস্তিত্ত্বে প্রবেশ করে এগুলিকেই মূলত বলা হয় ধর্মরাশী।

শুধুমাত্র ২৪ ঘণ্টা পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম ‘সিয়াম’ নয়। মূলত পানাহার গ্রহণ করেও সদা সর্বদা মস্তিষ্কে আগত ধর্মারাশীকে মোহাবিষ্ট হয়ে গ্রহণ না করে সেগুলো সূক্ষ্মভাবে জানার মাধ্যমে প্রত্যাখান করা বা বর্জন করায় হচ্ছে সর্বক্ষণিক সিয়াম।

এগুলোর সামগ্রিক রসায়নের ফলে আমাদের অস্তিত্ত্বের সামগ্রিক যে কর্মকাণ্ড- প্রকাশ পায় তাকেই বলা হয় ধর্ম। সুতরাং যে বস্তু বা ব্যক্তি যে আচরণ ধারণ করে তাই তার ধর্ম। এই ধর্মরাশীসমূহকে নিরপেক্ষরূপে খুঁটে খুঁটে জানার মাধ্যমে একজন মানবসত্ত্বা তার আপন অস্তিত্বের প্রকৃত স্বরূপকে জানতে পারেন।

মানুষ সৃষ্টির পর থেকে অদ্যাবধি মানবসমাজে নানারকম বিশৃঙ্খলা অবক্ষয় আর মানবিক অধঃপতনের সূত্রপাত ঘটলে এই অধঃপতিত মানব সমাজকে সুশৃঙ্খলিত করতে যুগে যুগে যে সকল মহামানবের আগমন ঘটেছে তাদের জীবনাদর্শই ক্রমাগত কালে কালে তাদের অনুসারীদের কাছে ধর্মীয় বিধি-নিষেধে পরিণত হয়েছে।

এই মহামানবগণের প্রজ্ঞাময় আত্মদর্শী জীবনাচারের লিখিত রূপই হচ্ছে প্রচলিত ধর্মগ্রন্থ। প্রায় চার হাজার ভাষাভাষীর প্রসিদ্ধ ১০৪খানা ধর্মগ্রন্থের মধ্যে ৪খানা বহুল জনপ্রিয়। এর মধ্যে যবুর, তাওরাত, ইঞ্জিল ও পরিশেষে আল কোরানই মহান স্রষ্টার মনোনীত জীবনাদর্শ হিসেবে মানবজাতির আত্মিক আশ্রয়ের স্থল। তবে পৃথিবীর সকল মানুষ আজও এই সমস্ত ধর্মাদর্শের নিরপেক্ষ সুফল লাভ করতে পারেন নি।

মানব জীবন মহান রব্বুল আলামিনের বিশেষ প্রকার দয়ার নান্দনিক প্রকাশ। মহান সৃষ্টিকর্তা রব্বুল আলামীনের নৈকট্যলাভের তথা তার দর্শন লাভের জন্য যুগে যুগে যত প্রকার আত্মশুদ্ধির সাধনা জগতে প্রচলিত রয়েছে তার মধ্যে সিয়াম সাধনা খুবই গুরুতপূর্ণ একটি সাধনা।

কোরানে রব্বুল ইজ্জত তাই বলেছেন যে, সিয়াম শুধুমাত্র উম্মতে মুহাম্মদীর উপর ফরজ করা হয়নি, এটি পূর্ববর্তী সকল নবীর উম্মতদের উপরও ফরজ করা হয়েছে। সুতরাং সিয়াম পৃথিবীর সকল মানুষের আত্মমুক্তির একটি সর্বকালীন সাধনা।

‘সিয়াম’ আরবি শব্দ। ফার্সি ও উর্দূতে একে বলা হয় রোজা। এই শব্দটি বাংলায় বহুল প্রচলিত। বাংলায় সিয়ামকে উপবাস বলা যেতে পারে। ইংরেজিতে একে বলা হয় Fasting। ‘সিয়াম’ অর্থ প্রত্যাখান, ‘Rejection’ বর্জন, ত্যাগ, বিরতি বা পরিত্যাগ করা। আর রসনার উপরে বাস করা বা ভাসমান থাকাই হচ্ছে উপবাস।

শুধুমাত্র ২৪ ঘণ্টা পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম ‘সিয়াম’ নয়। মূলত পানাহার গ্রহণ করেও সদা সর্বদা মস্তিষ্কে আগত ধর্মারাশীকে মোহাবিষ্ট হয়ে গ্রহণ না করে সেগুলো সূক্ষ্মভাবে জানার মাধ্যমে প্রত্যাখান করা বা বর্জন করায় হচ্ছে সর্বক্ষণিক সিয়াম।

জগতে প্রচলিত সকল সাধনার মূল আকাঙ্খা হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার সাথে তথা স্বীয় প্রভুর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা। এই সংযোগ প্রক্রিয়ার নাম সালাত। আর সার্বক্ষণিক সালাতের প্রতিষ্ঠিত অবস্থার নাম সিয়াম।

মূলত সিয়াম কোনও নতুন বিষয় নয় বরং সর্বকালের সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য। আমানু সাধকগণ যাদেরকে সম্যকভাবে আধ্যাত্মিক গুরু বা ঈমাম হিসাবে গ্রহণ করেন তাদের মধ্যে একমাত্র কামেল মুর্শেদগণই কেবল সিয়ামকে দেহস্ত করতে পেরেছেন অর্থাৎ তাঁহারা আপন দেহমন হতে আপন সত্তাকে স্বাভাবিক মৃত্যুর পূর্বেই বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন।

‘সিয়াম’ একটি সর্বজনীন আত্মদর্শন বা আত্মমুক্তির সাধনা। কলেমা, সালাত, হজ্জ্ব, জাকাত ও কুরবানীর সাথে এর গভীর সংযোগ রয়েছে। যিনি সিয়াম পালন করেন তিনি সায়েম বা রোজাদার। যেহেতু ধর্মরাশীসমূহকে মোহাবিষ্ট হয়ে মস্তিষ্কে ধারণ করলে শিরিক হয়, তথা পরজন্মের বীজ রোপিত হয়, তাই এই সকল ধর্মকে গ্রহণ নয় বরং বর্জন করতেই হয়।

এই প্রক্রিয়ায় শুধু রসনার উপরে ভাসমান থাকায় নয় বরং সর্বক্ষণিক ধর্মরাশীকে পরিত্যাগ বা বর্জনের গভীর নিরবচ্ছিন্ন সাধনার মধ্যে দিয়ে সাধক তার ফল স্বরূপ দেহমনের বন্দিদশা থেকে আপন রবের চিরস্থায়ী মুক্তি নিশ্চিত করতে সক্ষম হন।

‘সিয়াম’ একটি সর্বকালীন সাধন ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা অত্যন্ত স্থিতিস্থাপক। ঈমানের অর্জনের মহড়াকারী আমানু তথা গুরুমুখী যে কোনও ব্যক্তি সাধ্যমত এই সাধনার মাধ্যমে কল্যাণ লাভ করতে পারেন।

ইসলাম ধর্মদর্শনের মৌলিক গ্রন্থ আল কোরানে ঘোষিত হয়েছে, ‘হে ঈমানের মহড়াকারীগণ, তোমাদের উপর সিয়াম কেতাবস্থ করা হইল যেমন কেতাবস্থ করা হইয়াছিল তেমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেনো তোমরা তাকওয়া কর, অথবা… কেতাবস্থ করা হইল যেমন কেতাবস্থ করা হইয়াছিল তোমাদের কবুলকৃতগণ হইতে যেন তোমরা আল্লাহর প্রতি কর্তব্যপরায়ণ হও।’ (আল কোরান ২:১৮৩)

যারা পূর্ণ ঈমান অর্জনের জন্য সাধনারত থাকেন তাদের বলা হয় ‘আমানু’। ‘আমানু’ অর্থ গুরুভক্ত সাধক। কোরানে উল্লিখিত কেতাব শব্দটির সর্বজনীন রূপক অর্থ মানবদেহ। গুরুভক্ত সাধকগণই কেবল একথা সত্যিকার উপলব্ধি করতে পারেন যে, তাদের উপর সিয়াম দেয়া হয়েছে দেহস্ত করে; অর্থাৎ দেহের সঙ্গে জড়িত করে।

প্রত্যেক মানব সত্তার সাথে সিয়াম অর্থাৎ ‘দেহমন বিসর্জন’ জড়িয়ে আছে প্রকৃতিগতভাবে। কিন্তু আমানু সাধক ব্যতীত সাধারণ অমনোযোগী মানুষরা সেটা উপলব্ধি করে না। যদিও সবাই জানে যে, মৃত্যুর মাধ্যমে আপন সত্তা থেকে দেহমন বারবার বিচ্ছিন্ন হয়ে চলেছে।

মূলত সিয়াম কোনও নতুন বিষয় নয় বরং সর্বকালের সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য। আমানু সাধকগণ যাদেরকে সম্যকভাবে আধ্যাত্মিক গুরু বা ঈমাম হিসাবে গ্রহণ করেন তাদের মধ্যে একমাত্র কামেল মুর্শেদগণই কেবল সিয়ামকে দেহস্ত করতে পেরেছেন অর্থাৎ তাঁহারা আপন দেহমন হতে আপন সত্তাকে স্বাভাবিক মৃত্যুর পূর্বেই বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন।

সুতরাং আমানুগণের লক্ষ্য হলো দেহমন বর্জনের জন্য গুরুর প্রতি কর্তব্যপরায়ণ হওয়া বা ঈমামকে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করা।

(চলবে…)

………………………………….
ড. হাসান রাজা
লেখক ও গবেষক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………………………….
আরো পড়ুন:

রমজান: সংযোমের সাধন:: এক
রমজান: সংযোমের সাধন:: দুই
রমজান: সংযোমের সাধন:: তিন
মানুষের জন্য সিয়াম: এক
মানুষের জন্য সিয়াম: দুই

শবে বরাত: নাজাতে ফিকির
শবে মেরাজ: ঊদ্ধলোকের রহস্যযাত্রা
মেরাজতত্ত্ব
মেরাজ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!