ভবঘুরেকথা
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

সরলতা ও ঈশ্বরলাভ – ঈশ্বরের সেবা আর সংসারের সেবা

কীর্তনান্তে ঠাকুর ভক্তসঙ্গে একটু উপবেশন করিয়াছেন। এমন সময়ে নিরঞ্জন আসিয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন। ঠাকুর তাঁহাকে দেখিয়াই দাঁড়াইয়া উঠিলেন। আনন্দে বিস্ফারিত লোচনে সস্মিত মূখে বলিয়া উঠিলেন, “তুই এসেছিস!”

(মাস্টারের প্রতি) – “দেখ, এ-ছোকরাটি বড় সরল। সরলতা পূর্বজন্মে অনেক তপস্যা না করলে হয় না। কপটতা, পাটোয়ারী – এ-সব থাকতে ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না।

“দেখছো না, ভগবান যেখানে অবতার হয়েছেন, সেখানেই সরলতা। দশরথ কত সরল। নন্দ – শ্রীকৃষ্ণের বাবা কত সরল। লোকে বলে, আহা কি স্বভাব, ঠিক যেন নন্দ ঘোষ!”

ভক্তরা সরল। ঠাকুর কি ইঙ্গিত করিতেছেন যে, আবার ভগবান অবতীর্ণ হয়েছেন?

শ্রীরামকৃষ্ণ (নিরঞ্জনের প্রতি) – দেখ, তোর মুখে যেন একটা কালো আবরণ পড়েছে। তুই আফিসের কাজ করিস কি না, তাই পড়েছে। আফিসের হিসাবপত্র করতে হয়, – আরও নানারকম কাজ আছে; সর্বদা ভাবতে হয়।

₀সংসারী লোকেরা যেমন চাকরি করে তুইও চাকরি করছিস। তবে একটু তফাত আছে। তুই মার জন্য চাকরি স্বীকার করেছিস।

“মা গুরুজন ব্রহ্মময়ীস্বরূপা। যদি মাগছেলের জন্যে চাকরি করতিস, তাহলে আমি বলতুম, ধিক্‌! ধিক্‌! শত ধিক্‌! একশ ছি!

(মণি মল্লিকের প্রতি) – ₀দেখ, ছোকরাটি ভারী সরল। তবে আজকাল একটু-আধটু মিথ্যা কথা কয়, এই যা দোষ। সেদিন বলে গেল যে আসবে, কিন্তু আর এল না। (নিরঞ্জনের প্রতি) তাই রাখাল বলেছিল – তুই এঁড়েদয়ে এসেও দেখা করিস নাই কেন?”

নিরঞ্জন – আমি এঁড়েদয়ে সবে দুদিন এসেছিলাম।

শ্রীরামকৃষ্ণ (নিরঞ্জনের প্রতি) – ইনি হেডমাস্টার! তোর সঙ্গে দেখা করতে গিছিলেন। আমি পাঠিয়েছিলাম। (মাস্টারের প্রতি) তুমি সেদিন বাবুরামকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলে?

-১৮৮৪, ১৫ই জুন-

………………………..
রামকৃষ্ণ কথামৃত : ঊনবিংশ অধ্যায় : দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!