ভবঘুরেকথা
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

শ্রীরামকৃষ্ণের কলিকাতায় ভক্তমন্দিরে আগমন –
শ্রীযুক্ত গিরিশ ঘোষের বাটীতে উৎসব
১৮৮৫, ২৪শে এপ্রিল
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরামের বাটীতে অন্তরঙ্গসঙ্গে
[নরেন্দ্র, মাস্টার, যোগীন, বাবুরাম, রাম, ভবনাথ, বলরাম, চুনি ]

শুক্রবার (১২ই বৈশাখ, ১২৯২) বৈশাখের শুক্লা দশমী, ২৪শে এপ্রিল, ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দ। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ আজ কলিকাতায় আসিয়াছেন। মাস্টার আন্দাজ বেলা একটার সময় বলরামের বৈঠকখানায় গিয়া দেখেন, ঠাকুর নিদ্রিত। দু-একটি ভক্ত কাছে বিশ্রাম করিতেছেন।

মাস্টার একপার্শ্বে বসিয়া সেই সুপ্ত বালক-মূর্তি দেখিতেছেন। ভাবিতেছেন, কি আশ্চর্য, এই মহাপুরুষ, ইনিও প্রাকৃত লোকের ন্যায় নিদ্রায় অভিভুত হইয়া শুইয়া আছেন। ইনিও জীবের ধর্ম স্বীকার করিয়াছেন।

মাস্টার আস্তে আস্তে একখানি পাখা লইয়া হাওয়া করিতেছেন। কিছুক্ষণ পরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের নিদ্রাভঙ্গ হইল। এলোথেলো হইয়া তিনি উঠিয়া বসিলেন। মাস্টার ভূমিষ্ঠ হইয়া তাঁহাকে প্রণাম ও তাঁহার পদধূলি গ্রহণ করিলেন।

[শ্রীরামকৃষ্ণের প্রথম অসুখের সঞ্চার – এপ্রিল ১৮৮৫ ]

শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি সস্নেহে) – ভাল আছ? কে জানে বাপু! আমার গলায় বিচি হয়েছে। শেষ রাত্রে বড় কষ্ট হয়। কিসে ভাল হয় বাপু? (চিন্তিত হইয়া) – আমের অম্বল করেছিল, সব একটু একটু খেলুম। (মাস্টারের প্রতি) – তোমার পরিবার কেমন আছে? সেদিন কাহিল দেখলুম; ঠাণ্ডা একটু একটু দেবে।

মাস্টার – আজ্ঞা, ডাব-টাব?

শ্রীরামকৃষ্ণ – হাঁ, মিছরির সরবৎ খাওয়া ভাল।

মাস্টার – আমি রবিবার বাড়ি গিয়েছি।

শ্রীরামকৃষ্ণ – বেশ করেছ। বাড়িতে থাকা তোমার সুবিধে। বাপ-টাপ সকলে আছে, তোমায় সংসার তত দেখতে হবে না।

কথা কহিতে কহিতে ঠাকুরের মুখ শুকাইতে লাগিল। তখন বালকের ন্যায় জিজ্ঞাসা করিতেছেন, (মাস্টারের প্রতি) – আমার মুখ শুকুচ্চে। সবাই-এর কি মুখ শুকুচ্চে?

মাস্টার – যোগীনবাবু, তোমার কি মুখ শুকুচ্চে?

যোগীনদ্র – না; বোধ হয়, ওঁর গরম হয়েছে।

এঁড়েদার যোগীন ঠাকুরের অন্তরঙ্গ; একজন ত্যাগী ভক্ত।

ঠাকুর এলোথেলো হয়ে বসে আছেন। ভক্তেরা কেহ কেহ হাসিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ – যেন মাই দিতে বসেছি। (সকরের হাস্য) আচ্ছা, মুখ শুকুচ্চে, তা ন্যাশপাতি খাব? কি জামরুল?

বাবুরাম – তাই বরং আনি গে – জামরুল।

শ্রীরামকৃষ্ণ – তোর আর রৌদ্রে গিয়ে কাজ নাই।

মাস্টার পাখা করিতেছিলেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ – থাক, তুমি অনেকক্ষণ –

মাস্টার – আজ্ঞা, কষ্ট হচ্চে না।

শ্রীরামকৃষ্ণ (সস্নেহে) – হচ্চে না?

মাস্টার নিকটবর্তী একটি স্কুলে অধ্যাপনা কার্য করেন। তিনি একটার সময় পড়ান হইতে কিঞ্চিৎ অবসর পাইয়া আসিয়াছিলেন। এইবার স্কুলে আবার যাইবার জন্য গাত্রোত্থান করিলেন ও ঠাকুরের পাদবন্দনা করিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) – এক্ষণই যাবে?

একজন ভক্ত – স্কুলে এখনও ছুটি হয় নাই। উনি মাঝে একবার এসেছিলেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (হাসিতে হাসিতে) – যেমন গিন্নি – সাত-আটটি ছেলে বিয়েন – সংসারে রাতদিন কাজ – আবার ওর মধ্যে এক-একবার এসে স্বামীর সেবা করে যায়। (সকলের হাস্য)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!