ভবঘুরেকথা

গৃহী প্রাতে ও মধ্যাহ্নে দুইবার স্নান করিবে। যতি তিনবার স্নান করিবে ও ব্রহ্মচারী একবার স্নান করিবে। জলাশয়ে যাইয়া যে ব্যক্তি স্নান করিতে অক্ষম, তাহার পক্ষে গৃহস্নান করিতে হয়। অক্ষম পক্ষে ভিজা কাপড় বা ভিজা হাতে দেহ মার্জ্জনা করিলেও স্নান হয়। স্বগৃহে স্নান পূর্ব্বক হস্ত পদ মুখ ধৌত করিয়া প্রাণায়াম করত-

নমো অপবিত্র: পবিত্রো বা সর্ব্বাবস্থাং গতোহপিবা,
য: স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স: বাহ্যাভ্যন্তর: শুচি:।

অত:পর-

পালোহং পাপকর্ম্মাহং পাপাত্মা পাপসম্ভবা,
ত্রাহি মাং পুণ্ডররীক্ষং সর্ব্বপাপ হরো হরিং।।

এই মন্ত্রে দেহশুদ্ধি করিয়া শ্রীহরিকে স্মরণ করিবে। তুলসপিত্র সমন্বিত জলপূর্ণ পাত্রে অঙ্কুশ মুদ্রা (দক্ষিণ হস্তের মুষ্টি হইতে মধ্যমাঙ্গুলি বাহির করিয়া ঈষৎ বক্র করিলেই) দ্বারা জল আলোড়ন করিয়া-

গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী।
নর্ম্মদে সিন্ধুকাবেরী জলেহাস্নন সন্নিধিং কুরু।।

এই মন্ত্রে সমস্ত তীর্থ আবাহন করিয়া নিম্ন মন্ত্র পাঠ করিবে-

নম: কুরুক্ষেত্র গয়া গঙ্গা প্রভাস পুস্করাণি চ।
তীর্থান্যেতানি পুণ্যানি স্নানকালে ভবস্ত্বিহ।।

শিক্ষা মোচন মন্ত্র-
গচ্ছন্তু সকল দেবা ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর:।
তিষ্ঠুতু অচলা লক্ষ্মী শিখামুক্তং করোম্যহম।।

আচমন মন্ত্র-
অত:পর বিশুদ্ধ বস্ত্র পরিয়া “ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু” মন্ত্রে আচমন করিবে এবং “ওঁ তদ্বিষ্ণু পরমং পদং সদা পশ্যতি সুরয়:” মন্ত্র তিনবার পড়িয়া তিনবার মাথায় জল দিবে। তৎপর এক গণ্ডুষ জল মুখে দিয়া নিম্ন মন্ত্রে শিখা বন্ধন করিবে।

ওঁ ব্রহ্মবাণী সহস্রাণি শিববাণী শতানি চ।
বিষ্ণোর্নাক সহস্রানি শিক্ষাবন্ধনং কমোম্যহম।।

তিলকের মাটি সংগ্রহ মন্ত্র-

অশ্বক্রান্তে রথক্রান্তে বিষ্ণক্রান্তে বসুন্ধরে।
মৃর্ত্তিকা হরমে পাপং যন্ময়া দুস্কৃতং কৃতং।।

তিলক গুলিবার মন্ত্র-
নমো কেশবানন্ত গোবিন্দ বরাহ পুরুষোত্তম:।
পুণ্যর্যশাস্যামায়ষ্য তিলকং মে প্রসাদ তু।।

অত:পর নিম্ন মন্ত্র তিলক ধারণ করিবে, মন্ত্র যথা-
ললাটে- শ্রীকেশবায় নম:।
উদরে- শ্রীনারায়ণায় নম:।
বক্ষস্থলে- শ্রীমাধবায় নম:।
কণ্ঠে- শ্রীগোবিন্দায় নম:।
ডান কুক্ষিতে- শ্রীবিষ্ণবে নম:।
ডান বাহুতে- শ্রীমধুসূদনায় নম:।
ডান স্কন্ধে- শ্রীত্রিবিক্রমায় নম:।
বাম কুক্ষিতে- শ্রীবামনায় নম:।
বাম বাহুতে শ্রীধারায় নম:।
বাম স্কন্ধে- শ্রীহৃষিকেশায় নম:।
পৃষ্ঠে- ওঁ পদ্মনাভায় নম:।
কটিতে- শ্রীদামোদরায় নম:।

কেহ কেহ উক্ত দ্বাদশ ফোঁটা তিলকের পরিবর্তে নিম্নরূপ পঞ্চ ফোঁটা দ্বরা তিলক করিয়া থাকেন। ইহা গুরুর উপদেশ অনুযায়ী করিতে হয়। যথা-

ললাটে যুগলমূর্ত্তয়ে নম:। নাসিকায় গোবিন্দায় নম:। কণ্ঠমূলে- গোপীনাথায় নম:। বাহুদ্বয়ে- মদনগোপালায় নম:। বক্ষে- গিরিধারীয়ে নম:। বলিয়া পঞ্চস্থানে পঞ্চ ফোঁটা তিলক রচনা করিয়া হস্তধৌত তিলক মস্তকে মুছিয়া থাকেন।

কেহ বা গোপীচন্দনের ব্যবহার করিয়া থাকেন। ইহাতে অঙ্গহীন, মন্ত্রহীন, শ্রদ্ধাহীন ও ক্রীয়াহীন মন্ত্রাদির সফলতা ঘটিয়া থাকে।

অত:পর তর্পণাদি করিয়া ক্লীং কামদেবায় বিদ্মহে পুষ্পবাণায় ধীমহী তন্নোহনঙ্গ: প্রচোদয়াৎ, এই কামগায়ত্রী উচ্চারণপূর্ব্বক ‘ইদমর্ব্যং শ্রীকৃষ্ণায় নম:’ বলিয়া তিনবার অর্ঘ্য দিয়া ঐ কামগায়ত্রী দশবার জপ করিবে, তৎপর ‘ইদমর্ঘ্যং শ্রীসূর্য্যায় নম:’ বলিয়া সূর্য্যকে অর্ঘ্য দিবে। কেহ বা ‘ওঁ নমো বিবস্বতে ব্রাহ্মণ ভাস্বতে বিষ্ণুতেজসে জগৎ সবিত্রে শুচিয়ে সবিত্রে কর্ম্মদায়িনে ইদমর্ঘ্যং ওঁশ্রীসূর্য্যায় নম:, মন্ত্রে সূর্য্যার্ঘ্য দেন। অতপর-

ওঁ জবকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং।
ধ্বান্তারিং সর্ব্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকর:।।

এই মন্ত্রে সূর্য্যপ্রণাম করিবে। তৎপর অনেকে প্রাণায়াম করিয়া মূলমন্ত্র ১০৮ বার জপ করেন এবং জপের হাতে জল লইয়া-

গৃহ্যাতিগুহ্য গোপ্তৃত্ব গৃহাণাস্মৎ কৃতং জপং।
সিদ্ধির্ভবতু মে দেব ত্বৎপ্রসাদাৎ ত্বয়িং স্থিতে:।।

এই মন্ত্রে জপে ফল সহ গণ্ডুষ শ্রীকৃষ্ণের করে অর্পণ করেন। অত:পর কেহ কেহ (অন্তত: যাহারা মালা দিয়া জপ করেন না, এইরূপ সাধারণ লোক) অবশ্য ষোড়শী হরিনাম করিয়া যুগল মহামন্ত্র শ্রীরাধা কৃষ্ণের যুগলরূপ স্মরণ করিয়া থাকেন। কেহ বা গুরুর নির্দ্দেশ মত ১০০৮, অসক্ত পক্ষে ১০৮, ৫৮, ৩৮, ২৮, ১৮, ১২ বা ৮ বার জপ করিয়া থাকে।

……………………………………..
তত্ত্বরসামৃত জ্ঞানমঞ্জরী
-শ্রীশ্রী চরণ দাস

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!