ভবঘুরেকথা

মিনতীর পুত্রের জন্ম
হরিচাঁদ লীলা কথা, বর্ণিবারে পারে কেতা
হরি হতে বড় হরিনাম’’
নাম হতে বড় ভক্ত, এ জগতে আছে ব্যাক্ত
ব্যাক্ত আছে এ মরত ধাম।
অধমের এ মিনতী, লিখি আজি ভক্তিগীতি
সে কেমল শ্রীহরি কৃপায়।
হরি ভক্ত কৃপা করে অশির্বাদ কর মোরে
মনবাঞ্ছা যেন পূর্ণ হয়।।
অশ্বিনীর কথা ধরে, মিনতী আসিয়া ঘরে
ভক্তি করি অশ্বিনীর পায়।
হরি হরি হরি বলে, ভাসিত নয়ন জলে
অশ্বিনীকে রাখিয়া হৃদয়।।
এইভাবে দিন গেল, দশমাস গত হল্
শুভক্ষণে জন্মিল নন্দন।
পুত্র মুখ চক্ষে হেরি, শিশুপুত্র কোলে করি
অশ্বিনীকে করিছে স্মরণ।।
বলে বাবা কোথা তুমি, বড় অভিাগিনী আমি
তোমার যে মুখের কথায়।
এল পুত্র মোর ঘরে, তুমি বাবা কৃপা করে
দেখে যাও আসিয়া হেথায়।।
এইভাবে সে মিনতী, করে কত স্তবস্ততি
প্রতিবেশী আসিল সবাই।
কেহ করে উলধ্বনি, কেহ করে জয়ধ্বনি
আনন্দের সীমা নাই।
প্রতেবেশী ছিল যারা, আনন্দেতে আত্মহারা
কেহ কেহ করে শঙ্খধ্বনি।
কেহ কেহ হরি বলে, নাচে দুই বাহু তুলে
কেহ কেহ করে হরিধ্বনি।
উপেন্দ্র ছিল না ঘরে, শহরে চাকুরী করে
একজন সংবাদ জানায়।
যখনে জানিতে পারে, পুত্র এল মোর ঘরে
আনন্দেতে আত্মহারা হয়।
একমাস ছুটি নিয়ে, আসিল ঘরে ফিরিয়ে
পুত্র মুখ করি দরশন।
হরি হরি হরি বলে, ভাসিয়া নয়ন জলে
কোলে করে আপন নন্দন।।
কোলেতে সোনার চাঁদ, মিটাইল পুত্র স্বাদ
অশ্বিনীর গায় গুণগান।
ধন্য ধন্য শ্রী অশ্বিনী, হরিভক্ত শিরমণি
আশীর্বাদ কর মোরে দান।
জানিলাম ধরাতলে, হরিভক্ত কৃপা হলে
সব কিছু হয় দুনিয়ায়।
অপুত্রকে পুত্র পায়, বোবা লোকে কথা কয়
অন্ধ জনে চক্ষু পায়।।
এত ভাবি সে উপেন, গঙ্গাচন্না চলিলেন
অশ্বিনীকে আনিবারে গেল।
হরি হরি হরি বলে, ভাসি দুই আখি জলে
গঙ্গাচন্না হইল উদয়।।
অশ্বিনীর পড়ি পায়, কেঁদে গড়াগড়ি যায়
বলে বাবা চল মম ঘরে।
তোমার হয়েছে ভাই, তোমা নিতে আসি তাই
একবার দেখে এস তারে।
এই কথা শুনি কানে, আনন্দ পাইয়া মনে
বলে বাবা চল শ্রীঘ্র যাই।
রাখিতে ভক্তের মান্য, হরিচাঁদ অবতীর্ণ
তাই দেখে পরান জুড়াই।।
মুখে হরি হরি বলে, দুই জনে দ্রুত চলে
উলপুর হইল উদয়।
ছোট্ট শিশু কোলে করি, মুখে বলি হরি হরি
আনন্দেতে নাচিয়া বেড়ায়।।
আনন্দতে আত্মহারা, প্রেম রসে তনু পোরা
সে ছেলের হস্ত দিয়া গায়।
হাসি মাখা বদনেতে, ছলছল নয়নেতে
হরি বলে আশীর্বাদ দেয়।।
মিনতী চরণ ধরি, কেদে যায় গড়াগড়ি
বলে বাবা বলি যে তোমায়।
আমার মনের ব্যাথা, ঘুচাইলে ওগো পিতা
পুত্র পাই তোমার কথায়।।
ভক্তি নাই জ্ঞান নাই, বিভাবে পুজিব তাই
তব যুগল চরণ খান।
নিজ গুনে কৃপা করে, আশীর্বাদ কর মোরে
জুড়াইব এ তাপিত প্রাণ।।
মিনতীর শুনে বাণী, কহিলেন সে অশ্বিনী
শুন মাগো তোমাকে জানাই।
ছয় মাস হলে পরে, তব পুত্র কোলে করে
যেতে হবে গুরুচাঁদ ঠাই।।
গুরুচাঁদ গুণমনী, আশীর্বাদ দিবে তিনি
তাহলেই মঙ্গল হইবে।
আমি এবে যাই ঘরে, আবার আসিব পরে
দিবানিশি হরি গুণ গাবে।।
এত বলি সে অশ্বিনী, গঙ্গাচন্না চলে তিনি
হরি হরি মুখেতে বলিয়া।
এইভাবে দিন গেল, ছয় মাস গত হলো
উলপুর আসিল চলিয়া।।
মিনতী চোখেতে হেরি, পদে যায় গড়াগড়ি
কেদ কেদে চরণ দোয়ায়।
উপেন্দ্র বাড়ীতে ছিল, তিনি এসে পদে পল
পদধূলী লইল মাথায়।।
তারপর সে মিনতী, রন্ধন করিয়া সতী
অশ্বিনীকে ভোজন করাল।
তারপর সবে মিলে, মুখে হরি হরি বলে
ওড়াকান্দি গমন করিল।।
মিনতীর পুত্র কোলে, অশ্বিনীর পিছে চলে
উপেন্দ্র সে চলে সাথে সাথে।
হরি হরি হরি বলে, ভাসিছে নয়ন জলে
এইভাবে লাগিল হাটিতে।।
অশ্বিনী প্রেমের সুরে, সদা হরিনাম করে
প্রেম রসে মাখা তনু মন।
এইভাবে কাদি কাদি, উতরিল ওড়াকান্দি
গদি ঘরে উঠিল তখন।।
সাজায়ে ভক্তের মেলা, গুরুচাঁদ করে খেলা
মাঝাখানে সবে গুরুচাঁদ।
চারিদিকে ভক্তসব, করোজো কের স্তব
ঠিক যেন আকাশের চাঁদ।।
গুরুচাঁদ শ্রীচরণে, রাখিয়া সে পুত্র ধনে
মিনতী কেদে কেদে কয়।।
আমি বড় অপরাধী, তুমি মোর গুণনিধি
মম পুত্র রেখ রাঙ্গা পায়।।
হও তুমি দয়াবান, পুত্রে কর প্রাণ দান
দীর্ঘজীবি হয়ে যেন রয়।
গুরুচাঁদ দেখে চেয়ে, আসিয়াছে সেই মেয়ে
বন্ধা বলে ছিল এ ধরায়।।
আমি দিনু ফিরাইয়ে, অশ্বিনীর কথা নিয়ে
পুত্র পেল অশ্বিনী কৃপায়।
সেই পুত্র কোলে, গুরুচাঁদ কেদে বলে
ভক্তগন ডেকে ডেকে কয়।।
হরি হতে নাম বড়, নাম হতে ভক্ত বড়
এ জগতে রহিল প্রমাণ।।
সেই ছেলে বুকে ধরে, আশীর্বাদ করে শিরে
মুখে করে হরি গুণগান।।
তাই দেখে ভক্তগণে, পড়িলেন শ্রীচরণে
কেদে কেদে চরণ ধোয়ায়।
গুরুচাঁদ ডেকে বলে, ধর মাতা তব ছেলে
কোলে কর তোমার তনয়।।
পুত্র নিয়ে সে মিনতী, ভক্তগণ পদে নতী
করিতেছে কাদিয়া কাদিয়া।।
ভক্তগনে হরি বলে, নাচে দুই বাহু তুলে
কেহ কাঁদে গড়াগড়ি দিয়া।।
প্রেমনিধি হয়ে ক্ষান্ত, গুরুচাঁদ হলে শান্ত
ভক্তগনে ডেকে ডেকে কয়।
গুণ গুণ ভক্তগণ, করি এই নিবেদন
পদধুলি দাওহে আমায়।।
তাই শুনে ভক্তগণ, করে সবে পলায়ন
গদিঘর শূণ্য হয়ে গেল।
শুধু আছে সে অশ্বিনী, হরিভক্ত শিরোমণি
হেন দৃশ্য দেখিবারে পেল।।
গুরুচাঁদ চোখে জল, করিতেছে টলমল
মুখে শুধু বলে হরি বল।।
অশ্বিনী কহিছে বাবা, পদধুলি কত নিবা
কেন তুমি হয়েছ দুর্বল।।
তুমি যদি সুখে রও, পদধুলি কত চাও
দরকার যত তব লও।
তোমা করি আশীর্বাদ, পোরে যেন মনসাদ
তুমি যাতে সুখী হয়ে রও।।
তুমি প্রভু থাক সুখে, আমি যেন কাদি দুখে
তব কাছে এই ভাক্ষি চাই।
হরিনাম করি সার, ভব নদী হব পার
মাঝি রূপে তোমা যেন পাই।।
গুরুচাঁদ বলে হরি, অশ্বিনীকে বুকে ধরি
কেদে কেদে গড়াগড়ি যায়।
কেহ দেয় হুলুধ্বনি, কেহ দেয় হরিধ্বনি
সবে এসে পড়িল ধরায়।।
বহু পরে হল শান্ত, প্রেমনিধি হলে ক্ষান্ত
ভক্তি করি গুরুচাঁদ পায়।
হরি হরি হরি বলে, যার যার ঘরে চলে
আনন্দেতে হরি গুণ গায়।।
হরি হতে নাম বড়, নাম হতে ভক্ত বড়
এই যুগে দেখিবারে পাই।
কান্দিয়া বিনোদ বলে, এ জনম গেল চলে
হরি হরি বল সবে ভাই।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!