ভবঘুরেকথা
জন্মান্তর

-মূর্শেদূল কাইয়ুম মেরাজ

‘কর্মফল: দুই’

বৌদ্ধ দর্শনে কর্মফল
বুদ্ধ গদ্দুলবদ্ধ-সুত্তং-এ বলেছেন, সংসারের শুরুটা অচিন্তনীয়। অবিদ্যার আবরণে আচ্ছন্ন, তৃষ্ণার শৃঙ্খলে আবদ্ধ, দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করতে থাকা সত্ত্বদের প্রথম শুরুটা জানা যায় না। (সং.নি. ৩.৯৯)

বুদ্ধ জগতের মধ্যে বারবার ঘুরতে থাকা বা জন্মান্তরের কারণ হিসেবে অবিদ্যা আর তৃষ্ণাকে উল্লেখ করেছেন। কাজে কর্মশক্তি থাকতে হলে অবিদ্যা ও তৃষ্ণা থাকতে হয়। আর এই কর্মশক্তিই আবার কর্মফল উৎপন্ন করে।

একে আবার ‘অন্যক্ষণিক কর্ম’ও বলে, কারণ কর্ম উৎপন্ন হয় নির্দিষ্ট সচেতন ক্ষণে। কর্মটি পরিপক্ক হলে এর কর্মশক্তি সেই কর্মের ফল প্রদান করে আরেকটি ক্ষণে। সেটা হয় এই জীবনে বা অন্য কোনো ভবিষ্যৎ জন্মে। তবে অবিদ্যা ও তৃষ্ণারহিত কাজের মধ্যে এই কর্মশক্তি থাকে না।

বিশুদ্ধি-মার্গে এই অবিদ্যাকে পারমার্থিকভাবে অবিদ্যমান নারী, পুরুষের মাঝে এটি ধাবিত হয়; কিন্তু বিদ্যমান স্কন্ধ ইত্যাদির মাঝে এটি ধাবিত হয় না। (বিশুদ্ধিমার্গ.৫৮৭)

অবিদ্যা শুধু প্রচলিত সত্যকে দেখে। অন্তনির্হিত অর্থ বুঝতে পারে না। সে শুধু নারী-পুরুষ, পশুপাখি ইত্যাদি দেখে। এভাবে দেখা ভুল। কারণ বাস্তবে এই জিনিসগুলোর অস্তিত্ব নেই। বাস্তবে যেসব জিনিসের অস্তিত্ব আছে সেগুলো হলো- স্কন্ধ, ধাতু, আয়তন, নামরূপ বা মন ও পদার্থ, কারণসাপেক্ষ উৎপত্তি বা প্রতীত্য-সমুৎপাদ, কর্মপ্রক্রিয়া, ত্রিলক্ষণ ইত্যাদি। অর্থাৎ চার আর্যসত্যেরই অস্তিত্ব আছে।

যেগুলো পরমার্থ সত্য, সেগুলোকে অবিদ্যা দেখতে দেয় না। অবিদ্যা কেবল সত্ত্বের ধারণা মাত্র। আর এই অবিদ্যাই হচ্ছে কর্মের হেতু, যে কারণে সত্ত্বরা জন্ম থেকে জন্মান্তরে পরিভ্রমণ করতে থাকে, দুঃখ থেকে দুঃখান্তরে পরিভ্রমণ করতে থাকে।

বৌদ্ধদর্শনে কর্মফলের কথা বলতে গেল অঙ্গুলোমালের কথা উল্লেখ করতেই হয়। কথিত আছে, অঙ্গুলোমাল হাজার আঙ্গুল দিয়ে গুরুদক্ষিণা দেয়ার জন্য গুরুর অনৈতিক উপদেশে বহুলোক হত্যা করেন। শেষ আঙ্গুলটি সংগ্রহের জন্য বিচরণের সময় নিজ মাকে দেখে মাতৃহত্যা করে হাজার আঙ্গুল পূরণ করতে উদ্যত হন। একথা জেনে বুদ্ধ শ্রাবস্তীর জেতবন বিহার থেকে প্রায় ত্রিশযোজন দূরে জালিনী বনে উপস্থিত হয়ে অঙ্গুলোমালের বোধ উৎপন্ন করে তাঁকে ভিক্ষুত্বে দীক্ষা দেন। (থেরগাথা, ৪৩১-৪৩৩)।

ভিক্ষুত্বে দীক্ষা লাভের পর অঙ্গুলোমাল যখন স্থবির নগরে পিণ্ডপাতে বের হতেন তখন লোকে তাঁকে ঢিল, লাঠি ইত্যাদি ছুঁড়ে রক্তাক্ত করে দিতো। বুদ্ধ তাঁকে বলতেন, সহ্য করো, তুমি যে পাপকর্ম করেছ তার জন্য অনেক হাজার বছর তোমাকে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো। অথচ তুমি সেই কর্মফল ইহজন্মেই ভোগ করে যাচ্ছ। (থেরগাথা, ৪৩৪)

“যস্স পাপং কতং কম্মং কুসলেন পিধীযতি।” (থেরগাথা, ৪৩৪) অর্থাৎ পূর্বকৃত পাপকর্ম লোকোত্তর কুশল কর্ম দিয়ে আবৃত করা যায়।

পূর্বেজন্মে কোন প্রাণীকে নির্যাতন-নিপীড়ন করলে এ জন্মে দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগতে হয়। কর্মফল শেষ না হওয়া পর্যন্ত আরোগ্য লাভ হয় না। অনেক সময় বর্তমান পুণ্যকর্মে সেই কর্মের বিপাক লঘু হয়। অনেকে শীলবান, মহাপুরুষের সেবা-পূজায় রোগ-ব্যাধি, আপদ-বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেয়ে থাকে।

ইসলামে কর্মফল
ইসলাম ধর্মের মূলধারা জন্মান্তরে বিশ্বাস করে না। তাই জীব তার কর্মের ফল রূপে নবদেহ ধারণ করে ধরাধামে পুনরায় ফিরে আসবে এমন কোন বিশ্বাসের অস্তিত্ব নেই। তবে কর্মের ফল প্রত্যেককে পেতেই হবে; তাতে কোন দ্বিমত নেই। আর ইসলামে তা নির্ধারিত হয় দুনিয়া ধ্বংস বা কেয়ামতের পর শেষবিচারে কর্মফলের ভিত্তিতে বেহেশত বা দোজখ প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে।

মানুষ পুণ্য করলে পুরস্কার তথা বেহেশত বা জান্নাত আর পাপ করলে শাস্তি রূপে দোজখ বা জাহান্নাম লাভ করবে। তাই কোরানে বলা হয়েছে- ‘তোমরা সৎ কাজ ও তাকওয়ায় একে অপরকে সহযোগিতা কর। আর মন্দ ও সীমালঙ্ঘনে একে অপরকে সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।’ (সুরা মায়েদা, ২)

বলা হয়ে থাকে, কিয়ামতের দিন প্রত্যেকের আমলনামা প্রত্যেকের হাতে দেয়া হবে। এ সময় মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, হাত-পা প্রত্যেকের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে। শেষ বিচারে প্রত্যেকে তার কর্মফল অনুযায়ী ন্যায্য প্রতিদান পাবে।

ইসলাম মতে, প্রত্যেক মানুষের কাঁধে পাপ-পুণ্য লিপিবদ্ধ করার জন্য কেরামন ও কাতেবীন নামে দু’জন ফেরেশতা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল সময় অবস্থান করে। তারা বান্দার প্রতিটি ভালো-মন্দ কাজ লিপিবদ্ধ করে রাখে। আর প্রতি শবে কদরের রাতে ইবাদত বন্দেগীর ভিত্তিতে প্রত্যেকের বার্ষিক কার্যতালিকা প্রস্তুত করে। মৃত্যুর পর এই সকল কার্যতালিকা একত্রিত করে যে পূর্ণাঙ্গ দলিল প্রস্তুত করা হয় সেটাই আমলনামা।

পূর্ণ্যবানদের আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে এবং অতি সহজে তাদের বিচার শেষ করে জান্নাতে যাবার অনুমতি দেওয়া হবে। আর পাপীদের আমলনামা বাম হাতে দেয়া হবে এবং অতি কঠোরভাবে হিসাব নিকাশ করে জাহান্নামে প্রেরণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে কোরানে বলা হয়েছে-

‘প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে, আজ কারও প্রতি জুলুম করা হবে না। আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর।’ (সুরা মুমিন, ১৭)

‘প্রত্যেকের মর্যাদা তার কর্মানুযায়ী, এটা এ জন্য যে আল্লাহ প্রত্যেকের কৃতকর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেবেন এবং তাদের প্রতি অবিচার করা হবে না।’ (সুরা আহ্কাফ, ১৯)

‘কেউ কোনো সৎকর্ম করলে সে তার দশ গুণ পাবে এবং কেউ কোনো অসৎকাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিদান দেওয়া হবে।’ (সুরা আনআম, ১৬)

‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।’ (সুরা জিলজাল, ৭-৮)

শেষ বিচারের দিন পরম করুণাময় সকলের প্রতিই ক্ষমাসুন্দর আচরণ করবেন। নানা অজুহাতে ইমানদার পাপীদের ক্ষমা করে দেবেন। তাদের ভালো কাজের পুরস্কার বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন। কিন্তু পাপের শাস্তি কোনো মতেই পাপের পরিমাণের চেয়ে অধিক হবে না। এ প্রসঙ্গে কোরানে বলা হয়েছে-

‘তাদের কর্মের মন্দ ফল তাদের ওপর আপতিত হয়েছে, এদের মধ্যে যারা জুলুম করে, তাদের ওপরও তাদের কর্মের মন্দ ফল আপতিত হবে এবং এরা (শাস্তিকে) ব্যর্থও করতে পারবে না। …বলো, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অন্যায়-অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন, তিনিই তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার, ৫১ ও ৫৩)

প্রত্যেক মানুষের পার্থিব জীবনের চুলচেরা হিসাব করা হবে। সৎ কাজের জন্য থাকবে পুরস্কার আর অন্যায় কাজের জন্য থাকবে শাস্তি-

‘যে সৎকর্ম করে সে নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং কেউ মন্দকর্ম করলে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। তোমার প্রতিপালক তার বান্দাদের প্রতি কোনো প্রকার জুলুম করেন না।’ (সুরা হামিম সিজদা, ৪৬)

‘যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে নিয়ামতে ভরা জান্নাত; সেখানে তারা স্থায়ীভাবে থাকবে। আল্লাহতায়ালার প্রতিশ্রুতি সত্য। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা লুকমান, ৮-৯)

যখন সময় আসবে তখন অবশ্যই তোমার প্রতিপালক তাদের সবাইকে তার কর্মফল পুরোপুরি ভাবে দেবেন। তারা যা করে, নিশ্চয়ই তিনি সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (সুরা হুদ, ১১১)

‘চোখের অপব্যবহার ও অন্তরে যা গোপন আছে, সে সম্পর্কেও তিনি অবহিত।’ (সুরা মুমিন, ১৯)

‘প্রত্যেকে নিজ নিজ কর্মের জন্য দায়ী থাকবে। কেউ অন্যের বোঝা বহন করবে না। তারপর তোমাদের পালনকর্তার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি সেসব বিষয়ে বলে দেবেন, যা নিয়ে তোমরা মতবিরোধ করতে।’ (সুরা আনআম, ১৬৪)

খ্রিস্ট ধর্মে কর্মফল
কর্মফল বিষয়ে বাইবেল (কেরী ভার্সন)-এ উল্লেখ আছে- কেহ আপন প্রতিবাসীর বিরুদ্ধে পাপ করিলে যদি তাহাকে দিব্য করাইবার জন্য কোন দিব্য নিশ্চিত হয়, আর সে আসিয়া এই গৃহে তোমার যজ্ঞবেদির সম্মুখে সেই দিব্য করে, তবে তুমি স্বর্গ হইতে তাহা শুনিও, এবং নিষপত্তি করিয়া আপন দাসদের বিচার করিও; দোষীকে দোষী করিয়া তাহার কর্মের ফল তাহার মস্তকে বর্তাইও, এবং ধার্মিককে ধার্মিক করিয়া তাহার ধার্মিকতানুযায়ী ফল দিও। (আদিপুস্তক, ২ বংশাবলি ২২-২৩)

হে বুদ্ধিমানেরা, আমার কথা শুনুন, ইহা দূরে থাকুক যে, ঈশ্বর দুষ্কার্য করিবেন,সর্বশক্তিমান অন্যায় করিবেন। কারণ তিনি মনুষ্যের কর্মের ফল তাহাকে দেন, মনুষ্যের গতি অনুসারে তাহার দশা ঘটান। ঈশ্বর ত কখনও দুষ্টাচরণ করেন না, সর্বশক্তিমান কভু বিচার বিপরীত করেন না। (ইয়োব, ৩৪/১০-১২)

কেহ কি ঈশ্বরকে বলিয়াছে, আমি (শাস্তি) পাইয়াছি, আর পাপ করিব না, যাহা দেখিতে পাই না, তাহা আমাকে শিখাও; যদি অন্যায় করিয়া থাকি, আর করিব না? তাঁহার প্রতিফল দান কি আপনার ইচ্ছামতে হইবে যে, আপনি তাহা অগ্রাহ্য করিলেন? মনোনীত করা আপনার কর্ম, আমার নয়; অতএব আপনি যাহা জানেন, বলুন।

বুদ্ধিমান লোকেরা আমাকে বলিবেন, জ্ঞানবানেরা আমার কথা শুনিয়া বলিবেন, ইয়োব জ্ঞানশূন্য হইয়া কথা কহিতেছেন, তাহার কথা বুদ্ধি বিবর্জিত। ইয়োবের পরীক্ষা শেষ পর্যন্ত হইলেই ভাল, কেননা তিনি অধার্মিকদের ন্যায় উত্তর করিয়াছেন। বস্তুতঃ তিনি পাপে অধর্ম যোগ করেন, তিনি আমাদের মধ্যে হাততালি দেন, আর তিনি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেন। (ইয়োব, ৩৪/৩১-৩৭)

ধার্মিক তাহার পশুর প্রাণের বিষয় চিন্তা করে; কিন্তু দুষ্টদের করুণা নিষ্ঠুর। যে আপন জমি চাষ করে, সে যথেষ্ট আহার পায়; কিন্তু যে অসারদের পিছনে পিছনে দৌড়ায়, সে বুদ্ধিবিহীন। দুষ্ট লোক দুর্জনদের শিকার বাঞ্ছা করে; কিন্তু ধার্মিকদের মূল ফলদায়ক।

ওষ্ঠের অধর্মে দুর্জন ফাঁদ থাকে, কিন্তু ধার্মিক সঙ্কট হইতে উত্তীর্ণ হয়। মনুষ্য আপন মুখের ফল দ্বারা মঙ্গলে তৃপ্ত হয়, মনুষ্যের হস্তকৃত কর্মের ফল তাহারই প্রতি বর্তে। অজ্ঞানের পথ তাহার নিজের দৃষ্টিতে সরল; কিন্তু যে জ্ঞানবান, সে পরামর্শ শুনে। অজ্ঞানের বিরক্তি একেবারে ব্যক্ত হয়, কিন্তু সতর্ক লোক অপমান ঢাকে। যে সত্যবাদী, সে ধর্মের কথা কহে; কিন্তু মিথ্যাসাক্ষী ছলনার কথা কহে। (হিতোপ, ১২/১০-১২)

অন্তঃকরণ সর্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য, কে তাহা জানিতে পারে? আমি সদাপ্রভু অন্তঃকরণের অনুসন্ধান করি, আমি মর্মের পরীক্ষা করি; আমি প্রত্যেক মনুষ্যকে আপন আপন আচরণানুসারে আপন আপন কর্মের ফল দিয়া থাকি। প্রসব না করিলেও যেমন তিত্তির পক্ষী শাবকদিগকে সংগ্রহ করে, তেমনি সেই ব্যক্তি যে অন্যায়ে ধন সঞ্চয় করে, সেই ধন অর্ধ বয়সে তাহাকে ছাড়িয়া যাইবে, এবং শেষকালে সে মূঢ় হইয়া পড়িবে। (যিরমিয়, ১৭/৯-১১)

বিশ্বাস দ্বারা তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ; এবং ইহা তোমাদের হইতে হয় নাই, ঈশ্বরেরই দান; 9তাহা কর্মের ফল নয়, যেন কেহ শ্লাঘা না করে। কারণ আমরা তাঁহারই রচনা, খ্রীষ্ট যীশুতে বিবিধ সৎক্রিয়ার নিমিত্ত সৃষ্ট; সেইগুলি ঈশ্বর পূর্বে প্রস্তুত করিয়াছিলেন, যেন আমরা সেই পথে চলি। (ইফিষীয়, ২/৮-১০)

এইরূপে আমার ঐকান্তিক প্রতীক্ষা ও প্রত্যাশা এই যে, আমি কোন প্রকারে লজ্জিত হইব না, বরং সম্পূর্ণ সাহস সহকারে, যেমন সর্বদা তেমনি এখনও, খ্রীষ্ট জীবন দ্বারা হউক, কি মৃত্যু দ্বারা হউক, আমার দেহে মহিমান্বিত হইবেন। 21কেননা আমার পক্ষে জীবন খ্রীষ্ট, এবং মরণ লাভ। কিন্তু মাংসে যে জীবন, তাহাই যদি আমার কর্মের ফল হয়, তবে কোন্‌টি মনোনীত করিব, তাহা বলিতে পারি না। অথচ আমি দুইয়েতে সঙ্কুচিত হইতেছি; আমার বাসনা এই যে, প্রস্থান করিয়া খ্রীষ্টের সঙ্গে থাকি। (ফিলিপীয়, ১/২০-২৩)

শিখ ধর্মে কর্মফল
একেশ্বরবাদী গুরুনানক স্বর্গ, নরক ও কর্মফলে মানতেন। তিনি বলেন, ‘ধর্মাচরণ করলেই সমস্ত পাপ ক্ষয় হয় ও ঈশ্বরের নাম জপ করে স্বর্গের অধিকারী হওয়া যায়। পশুবলীর চেয়ে সত্যভাষণ ভালো। গুরুর প্রতি অনুরাগ তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মানুষ্ঠানের চেয়ে শ্রেয়।’

‘কর্মের প্রভাবে দেহের জন্ম হয়, কিন্তু মুক্তি লাভ হয় করুনায়।’ শিখরা বিশ্বাস করে, ‘গুরু সঙ্গ হল পুর্নজন্মে চক্র থেকে মুক্তি লাভের একটি অন্যতম প্রধান পন্থা।’

‘অদৃষ্ট-পূর্বজন্ম। প্রত্যেকেই অদৃষ্ট অনুসারে, আপনাপন কর্মফল ভোগ করিয়া থাকে; নিজ নিজ কর্মফল অহসারে প্রত্যেকের আসা-যাওয়া, জন্ম, মৃত্যু নিৰ্দ্ধারিত হয়।’ (আদিগ্রন্থ)

শিখ ধর্মমতে, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ ও অহঙ্কার মানুষের পাঁচটি মন্দ দিক আর সততা, সন্তোষ, দয়া, নম্রতা ও প্রেম হলো পাঁচটি সদগুণ।

জৈন ধর্মে কর্মফল
মহাবীরের দর্শনের দুটি প্রধান দিক হচ্ছে একটা অধিবিদ্যা আর অপরটি নীতিবিদ্যা। অধিবিদ্যার ৩টি প্রধান দিকের একটি হচ্ছে কর্মবাদ। কর্মের ফলে জীবকে ভোগ করতেই হবে এর থেকে মুক্তির পথ নেই।

পরিশেষে ফকির লালন সাঁইজি পরিতাপ করে বলছেন-

যেতে সাধ হয়রে কাশী
কর্মফাঁসি বাঁধলো গলায়,
আর কতকাল ঘুরবো এমন
নগরদোলায়।।

হলো রে একি দশা
সর্বনাশা মনের ভোলায়,
ডুবলো ডিঙ্গি নিশ্চয় বুঝি
জন্মনালায়।।

বিধাতা দেয় রে বাজি
কি বা মন পাজি ফেরে ফেলায়,
বাও না বুঝে বায় তরনী
ক্রমে তলায়।।

কলুর বলদ যেমন
ঢাকা নয়ন পাকে চালায়,
লালন প’লো তেমনি পাকে
হেলায় হেলায়।।

…………………………………..
আরো পড়ুন:
চুরাশির ফেরে: এক
চুরাশির ফেরে: দুই
চুরাশির ফেরে: তিন : আত্মা-১
চুরাশির ফেরে: চার: আত্মা-২
চুরাশির ফেরে: পাঁচ : সৎকার
চুরাশির ফেরে: ছয় : কর্মফল-১
চুরাশির ফেরে: সাত : কর্মফল-২
চুরাশির ফেরে: আট : পরকাল-১
চুরাশির ফেরে: নয় : পরকাল-২
চুরাশির ফেরে: দশ : জাতিস্মর
চুরাশির ফেরে: এগারো : প্ল্যানচেট
চুরাশির ফেরে: বারো : ওউজা বোর্ড
চুরাশির ফেরে: তেরো : প্রেতযোগ
চুরাশির ফেরে: চৌদ্দ : কালাজাদু
চুরাশির ফেরে: পনের: গুপ্তসংঘ–১

চুরাশির ফেরে: ষোল: গুপ্তসংঘ–২
চুরাশির ফেরে: সতের: ইলুমিনাতি

…………………………………..
সূত্র:
বাংলাপিডিয়া
উইকিপিডিয়া

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!