ভবঘুরেকথা
মুক্তির প্রত্যাশা আত্মদর্শন স্বরূপদর্শন ত্যাগ

ধৃতরাষ্ট্র মানে মন। মন জন্মান্ধ, বিবেকের সাহায্য ব্যতিরেকে কোন বস্তুকেই যথোপযুক্ত পরিপ্রেক্ষিতে দেখবার সামর্থ্য মনের নেই। কোন কিছুকে দেখতে গেলে, জানতে গেলে, তলিয়ে বুঝতে গেলে বিবেকের সাহায্য নিতে হয়।

‘সঞ্জয়’ শব্দের অর্থ হ’ল বিবেক। তাই অন্ধ মন বিবেককে জিজ্ঞেস করছে। পৃথিবীর সর্বত্রই সৎ আর অসৎ, আলোক আর অন্ধকার, ভাল আর মন্দের সংঘর্ষ চলছে। এই সংঘর্ষের বিনিময়ে মানব সমাজ এগিয়ে চলে।

অবিমিশ্র ভাল, অবিমিশ্র মন্দ আমরা পৃথিবীতে পাই না, আর যেখানে মন্দের আধিক্য রয়েছে, ভালর স্বল্পতা রয়েছে সেখানে আমরা বলি, সেইটাকেই আমরা বলি অসম্পূর্ণ। মানুষের জীবনের গতি হচ্ছে অসম্পূর্ণতা থেকে সম্পূর্ণতার দিকে। The movement of the human society, the movement of both individual and collective life from imperfection towards perfection is human progress.

এই অগ্রগতিটাই হ’ল প্রগতি। এই যে পাপশক্তি, অন্ধশক্তি যা মানুষকে অজ্ঞতার অন্ধতমিস্রায় ঘুম পাড়িয়ে রাখতে চায়, ভুলিয়ে রাখতে চায়, ঘুম পাড়াতে চায়, তার বিরুদ্ধে মানুষকে বুঝে চলতে হবে। এই সংগ্রাম অতীতেও হয়েছে, বর্তমানেও হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হতে থাকবে।

আমি একবার বলেছিলুম, কোন সদ্‌বিপ্র যদি মনে করেন যে এখন বিশ্বে সদ্‌বিপ্র-সমাজের প্রতিষ্ঠা হয়েছে, এইবার আমরা ভাল করে ঘুমোব, তবে তাঁরা ভুল করবেন। কোন কালেই ভালভাবে ঘুমোবার অবকাশ তাঁরা পাবেন না।

সব সময় তাঁদের সতর্ক প্রহরীর মত জেগে থাকতে হবে। কোথায় কোন অন্ধকারে, কোন অন্ধকার পথে পাপশক্তি প্রবেশ করছে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ধৃতরাষ্ট্র বিবেককে অর্থাৎ সঞ্জয়কে জিজ্ঞেস করছেন-

‘‘ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুযুৎসবঃ।
মামকাঃ পাণ্ডবাশ্চৈব কিমকুর্বত সঞ্জয়।।’’

(অস্মিন্‌ ধর্মক্ষেত্রে অস্মিন্‌ কুরুক্ষেত্রে সমবেতাঃ যুযুৎসবঃ যুদ্ধার্থং সমবেতাঃ যুদ্ধার্থং একত্রীভূতাঃ মামকাঃ সমপক্ষীয়াঃ পাণ্ডবাশ্চৈব পাণ্ডুপক্ষীয়াঃ চ তে যুদ্ধার্থং সমবেতাঃ কিমকুবর্ত, সঞ্জয়)।

এখন ‘ধর্মক্ষেত্র’ মানে কী? ‘ধর্ম’ শব্দ আসছে ‘ধৃ’ ধাতুর উত্তর ‘মন্‌’ প্রত্যয় করে। ‘ধর্ম’ শব্দের মানে যে ধারণ করে অথবা যাকে ধারণ করে রাখা হয়। ধর্ম হ’ল একটা প্রাথমিক গুণ, প্রারম্ভিক গুণ (Noumenal quality. It means the quality that controls all other qualities.) ‘Noumenal’ is the old German term।

Noumenal হল প্রাচীন জার্মান শব্দ যার মানে হ’ল সেই মৌল একক সত্তা যা থেকে অনেকের উদ্ভুতি হয়েছে আর সেই একের থেকে যে অনেকের উৎপত্তি বা সৃষ্টি হয় তাদের বলা হয় phenomenal, যেমন One falsehood is the noumenal cause of the phenomenal crimes.

অর্থাৎ এক মিথ্যাচার হ’ল প্রাসঙ্গিক অন্যান্য সব পাপের মূল উৎস। যদি মিথ্যাচার না থাকে তাহলে অন্যান্য পাপ থাকবে না। চোর যদি সত্যবাদী হয় তাহলে সে আর চুরি করবে না। মৌল কতকগুলো সত্তা থাকে যার দ্বারা বস্তু চিহ্নিত হয়, যা বস্তুর পরিচিতি বহন করে। তাকেই বলি ধর্ম। অক্সিজেনের বিশেষ ধর্ম আছে, কার্বনের বিশেষ ধর্ম আছে।

…………………………..
শ্রী শ্রী আনন্দমূর্তির ‘আনন্দ বচনামৃতম’
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে: ভারতের সাধক-সাধিকা
পুণঃপ্রচারে বিনীত-প্রণয় সেন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!