ভবঘুরেকথা

শ্রীশ্রীসত্যভামা দেবীর মহাপ্রস্থান

“তোরা দুঃখ জানিস কিরে, জানকীরে
কত না কান্দায়ে ছিলে।
দুঃখ না সইতে পেরে, মাটি ফুঁড়ে,
মাটির সাথে মাটি হলে।।”
-কবি রসরাজ তারকচন্দ্র

ঘোর কুজ্ঝাটিকা জাল ধরারে ঘিরিল।
অকারণ সব মন উচাটন হ’ল।।
তেরশ’ ঊনচল্লিশ সাল দেখা দিল।
কুজ্ঝাটিকা ঘেরা মাস মাঘ যবে এল।।
ক্ষণে ক্ষণে মতুয়ার কেন্দে ওঠে মন।
কি যে হবে কেহ কিছু বুঝে না কারণ।।
এ দিকে জননী দেবী সত্যভামা সতী।
অগ্রভাগে গেলা চলি পিছে রেখে পতি।।
নিরালে নীরবে দুঃখ বহি চিরকাল।
নিজলোকে গেল মাতা ফেলিয়া সকল।।
আপনি দেখিলা কন্যা হরি রসময়।
জগত জননী শক্তি দেখিবারে পায়।।
পিতৃগৃহ ছাড়ি দেবী পতিগৃহে এল।
পিতৃগৃহে এ জনমে আর নাহি গেল।।
চিরকাল মৃদুভাষা কহিলা সবারে।
রুষ্ট দেবী নাহি হ’ল কভু কা’র পরে।।
একে একে চারিপুত্র গেল পরপারে।
প্রভুর বচনে মাতা সব সহ্য করে।।
নীরবে বাসিত ভালো সব ভক্তগণে।
মুখে মৃদু হাসি চাহে করুণ নয়নে।।
কোন কোন ভক্তে ডেকে বলিতেন মাতা।
“ওগো বাছা শোন তুমি মোর এক কথা।।
একখানি যাঁতি মোরে তুমি কর দান।
করিবেন হরিচাঁদ তোমার কল্যাণ।।”
মতুয়া সংঘের যত শ্রেষ্ঠ ভক্তগণ।
মনে হয় যাঁতি তারা করেছে অর্পণ।।
কি জানি কি লাগি মাতা যাঁতি চেয়ে লয়।
মনোমত হ’লে ভক্ত তারে মাত্র কয়।।
লোকাচারে ছিল মাতা রাজার সংসারে।
শত শত নরনারী পদ পূজা করে।।
তবু বাক্যে কিংবা কার্যে কিংবা আচরণে।
জননীরে কেহ রুষ্ট দেখেনি কখনে।।
স্বামী যা’তে তুষ্ট মাতা তা’তে রাজী হয়।
বিনা বাক্যে একমনে বাক্য রেখে যায়।।
এমন পবিত্র ছবি দেখেনি ধরণী।
ধন্য সত্যভামা দেবী জগত জননী।।
স্বামী পদধূলি বহি’ আপনার শিরে।
ভক্তগণে কাঁদাইয়া গেল পরপারে।।
কত যে কঠিন প্রাণে প্রভু শোক সয়।
উপরে গম্ভীর প্রভু বুক ফেটে যায়।।
ঘরে ঘরে কাঁদিলেন ভক্তে জনে জন।
বুক-ফাটা কান্না কাঁদে প্রমথরঞ্জন।।
মহোৎসব করিবারে হৈল আয়োজন।
সর্বদেশ হ’তে এল সব ভক্তগণ।।
বহু ভক্ত কেশ পাশ ফেলিল মুড়িয়া।
সশ্রদ্ধ করিল শ্রাদ্ধ আসরে বসিয়া।।
মহোৎসবে ভক্তগণ দধি দিতে চায়।
সেই মর্মে তিনশত টাকা ব্যয় হয়।।
পরে দেখ সেই টাকা নাহি কেহ দিল।
একাকী গোপাল সাধু সকলি বহিল।।
সমস্ত জীবন ভরি নানাবিধ শোকে।
কত যে বেদনা দেবী সহিলেন বুকে।।
নিরালায় ব্যাথা সয় কথা নাহি কয়।
ঠিক যেন সর্বংসহা বসুমতী প্রায়।।
হায় মাতঃ! আর কি গো রাতুল চরণ?
বিশ্ববাসী জীবকুলে করিবে দর্শন?
অবিচারে, অনাচারে নিত্য বিশ্ববাসী।
কত ব্যাথা বুকে তব দিল রাশি রাশি।।
করুণা রূপিণী মাতা করিয়াছে ক্ষমা।
জগত জননী মাতা দেবী সত্যভামা।।
শ্রীগুরু-রঞ্জিনী দেবী জগত পালিনী।
উদ্দেশ্যে চরণপদ্মে প্রণমি এখনি।।
দয়া করে দয়াময়ী! এসো পুনরায়।
তোমার স্নেহের কণা মহানন্দ চায়।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!