ভবঘুরেকথা
ফকির লালন শাহ্

ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ

২৫১.
ত্রিবেণীর পিছল ঘাটে
বিনে হাওয়ার মৌজা ছোটে,
ডওরায় পানি নাই, ভিটে ডুবে যায়
শুনলে কী পস্তাবি এ কারখানা।

২৫২.
আলখানার শহর ভারি
তাহে আজব কারিগিরি।

২৫৩.
বোবায় কথা কয়, কালায় শুনতে পায়
আঁধলায় পরখ করছে সোনা।

২৫৪.
কইবার যোগ্য নয় কথা
সাগরে ভাসে জগতমাতা।

২৫৫.
সবাই কি তার মর্ম জানতে পায়।
যে সাধন ভজন করে
সাধনে অটল হয়।

২৫৬.
অমৃত মেঘের বরিষন
চাকতভাবে জানরে মন।

২৫৭.
তাঁর একবিন্দু পরশিলে
শমনজ্বালা দূরে যায়।

২৫৮.
যোগেশ্বরীর সঙ্গে যোগ করে
মহাযোগ সেই জানতে পারে।

২৫৯.
তিনদিনের তিন মর্ম জেনে
একদিনে সেধে লয়।

২৬০.
বিনা জলে হয় চরণামৃত
যা খাইলে যার জরামৃত।

২৬১.
লালন বলে চেতনগুরুর সঙ্গ নিলে
জ্ঞান চোখে দেখায়ে দেয়।

২৬২.
কেন সময় বুঝে বাঁধাল বাঁধলে না।
জল শুকাবে মীন পালাবে
পস্তাবিরে ভাই মনা।

২৬৩.
ত্রিবেনীর তীর ধারে
মীনরূপে সাঁই বিরাজ করে।

২৬৪.
উপর উপর বেড়াও ঘুরে
গভীরে কেন ডুবলেনা।

২৬৫.
মাসান্তে মহাযোগ হয়
নিরস হতে রস ভেসে যায়।

২৬৬.
করিয়ে সে যোগের নির্ণয়
মীনরূপ খেলা দেখলে না।

২৬৭.
জগত জোড়া মীন অবতার
মর্ম আছে সন্ধির উপর।

২৬৮.
জানতে হয় আদম সফির আদ্যকথা।
না দেখে আজাজিল সেরুপ
কি রুপ আদম গঠলেন সেথা।

২৬৯.
আনিয়ে জেদ্দার মাটি
গঠলেন বোরখা পরিপাটি
কোন চিজে তাঁর গড়ে আত্মা।

২৭০.
সেই যে আদমের ধরে
অনন্ত কুঠরি গড়ে,
মাঝখানে হাতনে কল জুড়ে
কীর্তিকর্মা বসলেন সেথা।

২৭১.
আদমি হলে আদম চেনে
ঠিক নামায় সে দেল কোরানে।

২৭২.
আপন সুরাতে আদম
গঠলেন দয়াময়,
নইলে কী আর ফেরেস্তাকে
সিজদা দিতে কয়।

২৭৩.
আল্লাহ আদম না হলে
পাপ হতো সিজদা দিলে,
শিরিক পাপ যারে বলে
এ দিন দুনিয়ায়।

২৭৪.
দোষে সে আদমসফি
আযাযিল হলো পাপী,
মন তোমার লাফালাফি
তেমনি দেখা যায়।

২৭৫.
আদমি হলে আদম চিনে
পশু কী তার মর্ম জানে,
লালন কয় আধ্যজ্ঞানে
আদম চিনলে হয়।

২৭৬.
খাকি আদমের ভেদ পশু কি বোঝে।
আদমের কালেবে খোদা খোদে বিরাজে।

২৭৭.
আদম শরীর আমার
ভাষায় বলেছে অধর,
সাই নিজে;
নইলে কি তায় আদমকে সেজদা
ফেরেস্তা সাজে।

২৭৮.
শুনি আজাজিল খাসতন
খাকে আদমতন গঠন
গঠেছে সে;
সেই আজাজিল শয়তান হল
আদম না ভজে।

২৭৯.
আব-আতস-খাক-বাত-ঘর
গঠেছেন জান মালেক মুক্তার
সাই নিজে;
লালন বলে এ ভেদ জানলে
সব জানে সে যে।

২৮০.
ডুবে দেখ দেখি মন কীরূপ লীলাময়।
আকাশ-পাতাল খুঁজিস যারে এই দেহে সে রয়।

২৮১.
শুনতে পাই চার কারের আগে
আশ্রয় করেছিল রাগে।

২৮২.
সে বেশে অটলরূপ ঝেঁপে
মানুষ-লীলা জগতে দেখায়।

২৮৩.
লামে আলেফ লুকায় যেমন
মানুষে সাই আছে তেমন।

২৮৪.
তা নইলে কি সব নূরীতন
আদম-তনে সেজদা জানায়।

২৮৫.
আহাতে আহাম্মদ হ’ল
মানুষে সাই জন্ম নিল।

২৮৬.
আকার কি নিরাকার সাঁই রাব্বানা,
আহাদে আহমদের বিচার হইলে যায় জানা।

২৮৭.
খুদিতে বান্দার দেহ
খোদা সে লুকায়ে,
আলেফে মিম বসায়ে
আহাম্মদ নাম হল সে জানা।

২৮৮.
আহাম্মদ নাম দেখি
মিম দিয়ে মিম করে নফি,
মিম গেলে আহাদ বাঁকি
আহাম্মদ নাম থাকে না।

২৮৯.
এই পদের অর্থ ঢুঁড়ে
কারো জান বসবে ধড়ে,
কেউ বলে লালন ভেড়ে
ফাকড়ামো বই বোঝে না।

২৯০.
কে তোর মালিক চিনলি নারে,
মন কি এমন জনম আর হবেরে।

২৯১.
দেবের দুর্লভ এবার মানবজনম তোমার,
এমন জনমের আচার করলি কিরে।

২৯২.
নিঃশ্বাসের নাইরে বিশ্বাস পলকেতে করে নিরাশ,
তখন মনে রবে মনের আশ বলবি কারে।

২৯৩.
আর কি হবে এমন জনম
বসবো সাধুর মেলে।

২৯৪.
হেলায় হেলায় দিন
বয়ে যায় ঘিরে নিল কালে।

২৯৫.
কত কত লক্ষ যোনী
ভ্রমণ করে জানি।

২৯৬.
মানবকুলে মন রে তুমি
এসে কী করিলে।

২৯৭.
মানবকুলেতে আসায়
কত দেব-দেবতা বাঞ্ছিত হয়।

২৯৮.
হেন জনম দীন-দয়াময়
দিয়েছে কোন ফলে।

২৯৯.
ভুলো না রে মনরসনা
সমঝে কর বেচাকেনা।

৩০০.
লালন বলে কূল পাবা না
এবার ঠকে গেলে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!