ভবঘুরেকথা

শ্রীশ্রীবারুণী উৎসবে বিধবা বিবাহের আলোচনা

“কন্মন্যেবাধিকাররোস্তে মা ফলেষু কদাচন-গীতা”
মধু কৃষ্ণা ত্রয়োদশী ফাল্গুনী বাসরে।
মহাপূণ্য তিনি নাম ‘বারুণী’ সংসারে।।
এই পুণ্য তিথি দিনে সফলাডাঙ্গায়।
মহাপ্রভু হরিচাঁদ অবতীর্ণ হয়।।
তাঁর আগমনে ধন্য হইল জগৎ।
দুরাত্মার মহাকষ্ট শান্তি পায় সৎ।।
ভক্তগণে এই দিনে বহু মান্য করে।
এর চেয়ে শুভ দিন জানেনা সংসারে।।
প্রতি বর্ষে মহাহর্ষে তাই ভক্তগণ।
এইদিনে ওড়াকান্দি করে আগমন।।
ধরিয়া নিশান ডঙ্কা কংস করতাল।
শিঙ্গা-ভেরী বাদ্য করে বলে হরিবল।।
দলে দলে শত শত ভক্ত লক্ষ লক্ষ।
ছুটিতে শ্রীধাম পানে সবে এক লক্ষ্য।।
শ্রীধামের কাছে যবে আগুসার হয়।
আনন্দে ভক্তের প্রাণ দেহে নাহি রয়।।
বারি যথা নদী বক্ষে বলি ধীরে ধীরে।
অবশেষে উপনীত আসিয়া সাগরে।।
নদী যবে শেষ হয় সাগরের বুকে।
বারি চলে নেচে নেচে পরম পুলকে।।
ভক্তের চরিত্র দেখি সেই ব্যবহার।
ধাম দরশনে নাই আনন্দের পার।।
তাই বলি আসে যবে ধাম সন্নিকটে।
দেহ ছেড়ে ভক্ত-প্রাণ আগে আগে ছোটে।।
উঠিয়া ধামের পরে জ্ঞান-হারা হয়।
কি করিবে কিবা করে ঠিক নাহি পায়।।
আবর্তে পড়িয়া তৃণ যেই দশা পায়।
কীর্ত্তনের মাঝে ভক্ত ঘুরে চক্র-প্রায়।।
গড়াগড়ি জড়াজড়ি করে প্রেমানন্দে।
আনন্দ সাগরে পড়ি প্রাণ খুলে কান্দে।।
মনে করে এই দিন সর্ব্বদিন-সার।
মানব জীবনে নাহি তুলনা ইহার।।
সারা বছরের ধূলা-ক্লেদ-গ্লানি যত।
প্রেম-জলে ধুয়ে ফেলে হয় শুদ্ধ পুত।।
সেই ভাবে পড়ে গিয়ে ঠাকুরের পায়।
মধুর মূরতি দেখি সর্ব্ব-শান্তি পায়।।

এই ভাবে মহোৎসব হয় বারুণীর।
অসীম নরের কেন্দ্র নাহি যার তীর।।
এই ভাবে বারুণীর তিথি উদযাপন।
বর্ষে বর্ষে করে আসি সব ভক্তগণ।।
দিন দিন বাড়ে ঢেউ বাড়ে জনসঙ্ঘ।
পূণ্যতিথি বারুণীর মধুময়-সঙ্গ।।
প্রথম জীবনকালে প্রভু হরিচাঁদ।
এ-দৃশ্য প্রত্যক্ষ করি পাইল আহলাদ।।
ভবিষ্যৎ দরশন পিতার কৃপায়।
করিলেন গুরুচাঁদ বালক সময়।।
স্বপ্ন আজি সত্য হল সদ্য সে-দর্শন।
আদিকান্ডি ধর্ম্মক্ষেত্রে হইল কর্ষণ।।
বর্ষণ তাহাতে হল প্রেম-ভক্তি-বীজ।
ভক্তপ্রাণে বংশ-বৃদ্ধি নিষ্ঠা-মনোসিজ।।
এই মহাবারুণীর সময় হইল।
দেশে দেশে ভক্তদল নাচিয়া উঠিল।।
কেহ ছোটে প্রদব্রজে কেহ ছোটে নায়।
আসিল বারুণী তোরা কে কে যাবি আয়।।
এই ভাবে দেশেদেশে পড়ে গেল সাড়া।
কোন কথা মুখে নাই শ্রীবারুণী ছাড়া।।
বছরের কার্য শেষ হিসাব-নিকাশ।
ভক্ত ছোটে ওড়াকান্দী করিতে প্রকাশ।।
হিসাব দেখিয়া প্রভু করে দেবে ঠিক।
পরবর্ষ যাবে ধরে সেই সে নিরিখ।।
কোন কোন ভক্ত আসি হইল উদয়।
আমি কিছু বলিতেছি সেই পরিচয়।।
শ্রীগুরু-গোপালচন্দ্র করুণা সাগর।
দয়া করি রেখ পদে আমি যে পামর।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!