ভবঘুরেকথা
মতুয়া সংগীত

বাসুদেব ও রামকান্ত বৈরাগীর চরিত্র কথন, নৌকা গঠন ও রথ যাত্রা
পয়ার

বাসুদেবে নিতে আ’সে বহু শিষ্যগণ।
কান্ত বলে না শুনিয়া বলি কি বচন।।
ইচ্ছাময় বাসু যদি যান ইচ্ছা করি।
বাসুর হইয়া বাসো* যাইবারে পারি।।
এত বলি বাসুর নিকতে কান্ত গিয়া।
শিষ্যগণ নিকটেতে বলিত আসিয়া।।
কাহারে বলিত বাপু যাওয়া হ’বে না।
আমার পরাণ বাসু কিছু কহিল না।।
কেহ কেহ আসামাত্র অমনি যাইত।
কেহ কেহ এলে তারে যাইব কহিত।।
বাসুদেবে কোলে করি শিষ্য বাড়ী যেত।
গুণ-গুণ বাসু গুণ সদায় গাইত।।
বাসুদেব ইচ্ছা করে তরণীতে যেতে।
কান্তের হইল মন তরণী গঠিতে।।
চারিজন শিষ্য দিল নিযুক্ত করিয়া।
বাওয়ালীরা যেতে ছিল বাওয়াল লইয়া।।
চকে গিয়া দিত বাসুদেবের দোহাই।
নির্ব্বিঘ্নে বাওয়াল করি এসেছে সবাই।।
বাসুদেব নৌকা গঠিবেন জানাইল।
বাওয়ালীরা বড় এক গাছ দিয়া গেল।।
সেই গ্রামে ভক্ত এক কর্মকার ছিল।
লাগিল পাতাম প্রেক যত তাহা দিল।।
তরণী গঠিত হইল জয় জয় ধ্বনি।
নাম হ’ল বাসুদেবের পান্সী তরণী।।
নৌকায় চড়িয়া মাত্র যায় দু’ গোঁসাই।
বাসুদেব রামকান্ত আর কেহ নাই।।
ছাপ্পর বাঁধিয়া মধ্যে থাকেন বসিয়া।
রামকান্ত বাসুদেব একত্র হইয়া।।
পাল তুলে দিত মাত্র দাড়ি মাঝি নাই।
তরণী চলিত বেগে দেখিত সবাই।।
বাতাস উজান হ’লে বাঁক ঘুরে গেলে।
রামকান্ত দাড় বাহে বাসুদেব হা’লে।।
কতক্ষণ দাড় বেয়ে বলে ওরে বাসো।
এ সময় আগা নায় একবার এস।।
এত বলি রামকান্ত পাছা নায় গিয়া।
হাল ধরে মনো সুখে থাকিত বসিয়া।।
আগা নায় বাসুদেব দাড়াইয়া আছে।
দাড় পড়িতেছে নৌকা বেগে চলিতেছে।।
মাধুর্য্য প্রাচুর্য্য লীলা দেখিত সবায়।
কেহ কেহ দেখে বাসুদেব দাড় বায়।।
রামকান্ত ধেয়ে গিয়ে বলে ওরে বাসো।
পরিশ্রম হ’য়েছে ছায়ায় এসে বস।।
বাসুকে করিয়া কোলে বলে মনোদুঃখে।
ঘামিয়াছে চাঁদমুখ হাসি নাই মুখে।।
ওরে বাসো! তুমি দাড় বাহিওনা আর।
আমার বক্ষের নিধি বক্ষে রও আমার।।
এত বলি বাসুদেবে বসাইয়া বুকে।
ঘুম পড় বলিয়া চুম্বিত চাঁদ মুখে।।
শিষ্যদের ঘাটে গিয়া ঘোনাইত নাও।
বলিত উঠরে বাসো শিষ্যবাড়ী যাও।।
কান্তলীলা মধুর শুনিতে চমৎকার।
ভনে শ্রীতারক খেলে জন্ম নাহি আর।।
*বাসো অর্থাৎ নৌকা বাহক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!