ভবঘুরেকথা
বায়েজিদ বোস্তামী

বায়জিদ বোস্তামীর বাণী

১.
সকল লোকে আল্লাহর কালাম বলে, আর আমি আল্লাহর পক্ষ হতে বলে থাকি।

২.
আল্লাহতালা সর্বদিক প্রেমশূন্য দেখলেন, কিন্তু বায়েজিদের মস্তিষ্ক তাঁর প্রেমে পূর্ণ পেলেন।

৩.
বায়েজিদ বোস্তামীকে ‘আরশ কি’ প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাবে বলেন, ‘আরশ আমি নিজেই’।

৪.
আল্লাহতালা সর্বদিক প্রেমশূন্য দেখলেন, কিন্তু বায়েজিদের মস্তিষ্ক তাঁর প্রেমে পূর্ণ পেলেন।

৫.
যার দ্বারা দিদারে ইলাহী হতে পারে, সেটাই প্রকৃত নামাজ। তবে তা খুব কঠিন কাজ, কিন্তু মানুষের সাধ্যাতীত নয়।

৬.
লোকে মৃত ব্যক্তি হতে জ্ঞান লাভ করে আর আমি এমন চিরজীবীত হতে জ্ঞান লাভ করেছি, যাঁর কখনও মৃত্যু নাই।

৭.
আমি রিপুকে আল্লাহর প্রতি রুজু করি। সে রিপু যখন তা অস্বীকার করে, তখন আমি একাই ইলাহীর কাছে হাজির হলাম।

৮.
আমি একবার স্বপ্নে দেখলাম, আল্লাহকে আমি জিজ্ঞেস করছি, তাঁকে পাবার পথ কী? তিনি বললেন, নিজেকে ত্যাগ কর, দেখবে পৌঁছে গেছ।

৯.
আমি রবকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার দিকের পথ কোনটি? উত্তরে বলেন, আমিত্ব ভাব ছেড়ে দাও, তাহলেই আমার দিদার লাভ করতে পারবে।

১০.
মানুষ কখন বুঝতে পারে যে, মা, রিফাতের গোপন তত্ত্বে পৌঁছতে পেরেছে? এর উত্তরে তিনি বলেন, যখন আল্লাহর প্রেমে নিজেকে বিলীন করে দেয়।

১১.
আমি দুনিয়াকে তিন তালাক দিয়ে সম্পূর্ণ এক হলাম এবং আল্লাহ পাকের দরবারে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলাম, হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া আমার আর কেহ নেই। তুমি যখন আমার রয়েছ তখন সবই আমার আছে।

১২.
আমি ভেবে দেখলাম যে, আমার শাস্তি পাওয়ার মূল হেতু কোন বস্তু? দেখা গেল গাফলতি (আলস্য) ছাড়া আর কিছু নয়। পরে তিনি বললেন, মানুষের সামান্য গাফলতি দোজখের আগুনের কারণ হবে। অতএব সাবধান হও।

১৩.
আত্মশুদ্ধির চূড়ান্ত অবস্থায় কখন পৌঁছানো সম্ভব এর জবাব তিনি বলেন, যখন মানুষ সৃষ্টিজগত থেকে পৃথক হয়ে নির্জনে নিজের দোষত্রুটির কথা চিন্তা-ভাবনা করে তা থেকে নিজেকে শুধরে নেয়। এর দ্বারা আল্লাহর নৈকট্যও হাসিল হয়।

১৪.
তিনি বলেন, আল্লাহর যিকির করতে করতে এক রাতে আমি নিজের মনকে তালাশ করতে লাগলাম কিন্তু পেলাম না। ভোররাতে শুনতে পেলাম, হে বায়েজিদ! আমাকে ছাড়া অন্য বস্তুর তালাশ করছ কেন? আমাকে তালাশ করলে আবার অন্তরকে কেন তালাশ করছ?

১৫.
৭৪ বছর বয়সে মারা যাবার সময় তাঁকে বয়স জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমার বয়স চার বছর। সত্তর বছর ধরে আমার চোখের ওপর পর্দা ছিল। চার বছর আগেই কেবল আমার চোখের ওপর থেকে পর্দা সরেছে।’ অর্থাৎ ৭০ বছর ধরে তিনি ঘোরের মধ্যে ছিলেন, চার বছর আগে তিনি সঠিক পথ খুঁজে পেয়েছেন।

১৬.
বায়েজিদ বোস্তামী বেশি বেশি স্রষ্টার জিকিরে মগ্ন থাকতেন। তারপরও বলতেন, ওহে মাবুদ! সারাজীবন আমি আপনার নাম স্মরণ করেছি একান্ত উদাসীনভাবে। আমি এক চরম অকৃতজ্ঞ। জানিনা, আপনার সাথে আমি সাক্ষাতের যোগ্য বলে বিবেচিত হবো কি না।

১৭.
আমি দুনিয়া পরিত্যাগ করে সম্পূর্ণ একাকী অবস্থায় বলতে লাগলাম, হে মাবুদ! তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। তবে তুমি যখন আমার আছ, আমার সব কিছুই আছে। আল্লাহতায়ালার মেহেরবানীর ফলে আমার মানসিক অবস্থা ও অনুভূতির পরিবর্তন ঘটল। অনুভব করলাম, যারা আল্লাহর আদেশ পালন করেছে, তারা পুরস্কার লাভ করেছে ও পুরস্কারের প্রতি আসক্ত হয়েছে, কিন্তু আমি প্রভু আল্লাহতায়ালা ছাড়া অন্য কিছুতেই আসক্ত হইনি।

১৮.
তোমরা যদি এমন কোনো ব্যক্তি দেখ, যার কাছে অনেক কারামত, সে বাতাসে উড়ছে, তা সত্ত্বেও তোমরা আশ্চর্য হবে না। (তাকে অলি মনে করবে না) বরং তাকে দেখ, সে শরীয়তের আদেশ-নিষেধ মেনে চলে কিনা? এবং শরীয়তের সীমারেখা হেফাজত করে কিনা? তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি শরীয়ত এবং সুন্নতের অনুসরণ ব্যতীত নিজকে তরীক্বত পন্থি বলে দাবি করে সে মিথ্যুক।

কেননা শরীয়তের অনুসরণ ব্যতীত তরিক্বত অর্জন অসম্ভব। আমি দীর্ঘ চল্লিশ বছরের কঠোর সাধনায় আল্লাহর নৈকট্যভাজন হওয়ার জন্য শরীয়তের জ্ঞান এবং সে অনুযায়ী আমলের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অন্য কিছু পাই নি।

১৯.
একবার আমি মক্কা গেলাম, সেখানে গিয়ে কেবল আমি কাবা ঘরটাই দেখলাম। নিজেকে তখন বললাম, আমার হজ্ব হয়নি, কারণ ঘর তো আমি আরো অনেক দেখেছি। আমি আবারো মক্কা গেলাম, সেবার আমি কাবা ঘর আর তার প্রভু দুজনকেই পেলাম। কিন্তু নিজেকে বললাম, ‘এটা আসল মিলন হতে পারে না।’ আমি আবারো গেলাম মক্কা। সেবার আমি কেবল আল্লাহ্‌কে পেলাম। কাবাঘর আর মুখ্য হলো না।

আমার হৃদয়ে কে যেন ফিসফিসিয়ে উঠলো, ‘হে বায়েজিদ! তুমি নিজেকে না দেখলে তুমি সারা বিশ্ব দেখে আসলেও মূর্তিপুজারি হতে না; কিন্তু তুমি নিজেকে যেহেতু দেখ, তাই তুমি একজন মূর্তিপুজারি যে কিনা বাকি বিশ্বকে পাত্তা দেয় না।’ তখন আমি অনুতাপ করলাম, এবং আবার আমার অনুতপ্ততার জন্য অনুতাপ করলাম, এবং এরপর নিজের অস্তিত্বের জন্য অনুতাপ করলাম।

………………………
আরো পড়ুন-
ফকির কাশেম আলী চিশতী কাদ্দসাল্লাহ সের্রুহু’র বাণী : এক
ফকির কাশেম আলী চিশতী কাদ্দসাল্লাহ সের্রুহু’র বাণী : দুই
ফকির কাশেম আলী চিশতী কাদ্দসাল্লাহ সের্রুহু’র বাণী : তিন
ফকির কাশেম আলী চিশতী কাদ্দসাল্লাহ সের্রুহু’র বাণী : চার
ফকির কাশেম আলী চিশতী কাদ্দসাল্লাহ সের্রুহু’র বাণী : অন্যান্য

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!