ভবঘুরেকথা
মতুয়া সংগীত

শ্লোক
কমলা রন্ধনাযুক্তা ভোজনে চ জনার্দ্দনঃ।
কুক্কুরেণ মুখাদ্‌ভ্রষ্টা দেবানাং দুর্ল্লভামপি।।

পয়ার
বুদ্ধদেব বাসনা হইয়া গেল পূর্ণ।
ঘরে ঘরে নীচ শূদ্র সবে হ’ল ধন্য।।
এই মত দেখ নানা কারণ বশতঃ।
গোকক বিহারী হ’ল যশোমন্ত সূত।।
অন্নপূর্ণা ঠাকুরাণী ছিলেন শয়নে।
কৃষ্ণ দাস পুত্র কোলে আনন্দিত মনে।।
রাম-কৃষ্ণ মুখে বলে কোলে কৃষ্ণদাস।
প্রভুর অগ্রজ যিনি ভুবনে প্রকাশ।।
দ্বাপরেতে সংকর্ষণ যিনি বলরাম।
আপনি অনন্ত শক্তি সুন্দর সুঠাম।।
সেই অংশে বিশ্বরূপ গৌরাঙ্গ লীলায়।
শচী গর্ভে জনমিল এসে নদিয়ায়।।
গৃহত্যাগী অনুরাগী সন্নাসী হইল।
পুত্র শোকে শচীমাতা কাঁদিয়া ফিরিল।।
যদ্যপিও বিষ্ণু অংশে স্বয়ং অবতার।
কেহ না শোধিতে পারে মাতৃ ঋণ ধার।।
যখন গৌরাঙ্গ গেল মাকে তেয়াগিয়া।
কড়ার দিলেন জন্ম লইব আসিয়া।।
কিছু না বলিয়া বিশ্বরূপ উদাসীন।
তার জন্য শচীমাতা কাঁদে রাত্রি দিন।।
সে কারণ মাতৃসেবা অপরাধ ছিল।
সেই ঋণ শোধিবারে জনম লভিল।।
স্বয়ং এর অবতার হয় যেই কালে।
আর আর অবতার তাতে এসে মিলে।।
যিনি ছিল বিশ্বরূপ গৌরাঙ্গ লীলায়।
তিনি কৃষ্ণদাস যশোমন্ত পুত্র হয়।।
একমাত্র পুত্র নববর্ষ কৃষ্ণদাস।
এক পুত্রে সুখী মাতা নাহি অন্য আশ।।
এ হেন সময় প্রভুর মনে হ’ল আশ।
অন্নপূর্ণা গর্ভ সিন্ধু ইন্দু পরকাশ।।
নানারূপ বিভীষিকা দেখে অন্নপূর্ণা।
শচীমাতা নিদ্রাযুক্তা নহে অচৈতন্যা।।
জাগরিতা যেন কিছু নিদ্রার আবেশ।
দেখে যেন জয়ধ্বনি হয় সর্ব্ব দেশ।।
যশোমন্ত বলে প্রিয়া শুনহ বচন।
যে রূপ আমার মনে জাগে সর্ব্বক্ষণ।।
নবীন মেঘের বর্ণ বনমালা গলে।
ভৃগুপদ চিহ্ন দেখা যায় বক্ষঃস্থলে।।
পিতাম্বর ধর কোকনদ পদাম্বুজে।
শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম শোভে চতুর্ভুজে।।
এই রূপ আভা মম হৃদয় পশিয়া।
সে যে তব কোলে বৈসে দ্বিভুজ হইয়া।।
ঠাকুরাণী বল নাথ নিশার স্বপন।
নিশাকালে প্রকাশ না করে বুধজন।।
কৃষ্ণময় চিত্ত তব কৃষ্ণ প্রতি আর্ত্তি।
শয়নে স্বপনে দেখ ঈশ্বর শ্রীমূর্ত্তি।।
ঠাকুর বলেন প্রিয়া নহেত যামিনী।
উদয় হইল দীপ্তিকর দিনমণি।।
ঠাকুরাণী বলে এত বাতুল লক্ষণ।।
কিম্বা দানবের কার্য্য না বুঝি কারণ।।
ঠাকুর বলেন যদি বাতুল লক্ষণ।
তবে কেন দেখিলাম মুরলী বদন।।
ঠাকুরাণী বলে তবে জ্যোতির্ম্ময় রূপ।
সে রূপ দেখিয়া ভাব দিবার স্বরূপ।।
শতসূর্য্য সম রশ্মি বায়ুতে মিশিল।
অন্নপূর্ণা গর্ভে আসি প্রবেশ করিল।।
এ হেন প্রকারে মাতা হৈল গর্ভাবতী।
ঈশ্বর ইচ্ছায় হৈল বায়ুগর্ভে স্থিতি।।
শুভগ্রহ নক্ষত্র শুভ লগ্ন হইল।
মাহেন্দ্র সুযোগে পুত্র প্রসব করিল।।
বারশ আঠার সাল শ্রীমহাবারুণী।
কৃষ্ণপক্ষ ত্রয়োদশী তিথি সে ফাল্গুণী।।
হরি সাল বলি সাল ভক্তগণে গণে।
নাহিক বৈদিক ক্রিয়া শ্রীবারুণী বিনে।।
ধন্য অন্নপূর্ণা হেন পুত্র পেল কোলে।
দ্বাপরে যশোদা যিনি ছিলেন গোকুলে।।
দ্বাপরে ছিলেন নন্দ যশোদার কান্ত।
যশোমতি কান্ত এবে হ’ল যশোমন্ত।।
ধরা দ্রোণ দুইজন তস্য পূর্ব্বে ছিল।
নন্দ যশোমতি তেই দ্বাপরে হইল।।
কলিকালে জগন্নাথ মিশ্র শচীরাণী।
এবে যশোমন্ত অন্নপূর্ণা ঠাকুরাণী।।
ধন্য রামকান্ত সাধু ধন্য এ জগতে।
প্রভু আসি জনমিল যাহার বরেতে।।
প্রভুর জনমখন্ড সুধা হ’তে সুধা।
কহিছে রসনা খেলে খন্ডে ভব ক্ষুধা।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!