১৮৮৫, ২৫শে অক্টোবর
ভক্তসঙ্গে – শ্রীরামকৃষ্ণ ও ক্রোধজয়
এই কাণ্ডের পর সকলে আবার আসন গ্রহণ করিলেন। রাত আটটা হইয়া গিয়াছে। আবার কথাবার্তা হইতে লাগিল।
শ্রীরামকৃষ্ণ (ডাক্তারের প্রতি) – এই যা ভাব-টাব দেখলে তোমার সায়েন্স কি বলে? তোমার কি এ-সব ঢঙ বোধ হয়?
ডাক্তার (শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি) – যেখানে এত লোকের হচ্ছে সেখানে natural (আন্তরিক) বোধ হয়, ঢঙ বোধ হয় না। (নরেন্দ্রের প্রতি) যখন তুমি গাচ্ছিলে ‘দে মা পাগল করে, আর কাজ নাই মা জ্ঞান বিচারে’ তখন আর থাকতে পারি নাই। দাঁড়াই আর কি! তারপর অনেক কষ্টে ভাব চাপলুম; ভাবলুম যে display করা হবে না।
শ্রীরামকৃষ্ণ (ডাক্তারের প্রতি, সহাস্যে) – তুমি যে অটল অচল সুমেরুবৎ। (সকলের হাস্য) তুমি গম্ভীরাত্মা, রূপসনাতনের ভাব কেউ টের পেতো না – যদি ডোবাতে হাতি নামে, তাহলেই তোলপাড় হয়ে যায়। কিন্তু সায়ের দীঘিতে নামলে তোলপাড় হয় না। কেউ হয়তো টেরও পায় না। শ্রীমতী সখীকে বললেন, ‘সখি, তোরা তো কৃষ্ণের বিরহে কত কাঁদছিস। কিন্তু দেখ, আমি যে কঠিন, আমার চক্ষে একবিন্দুও জল নাই।’ তখন বৃন্দা বললেন, সখি, তোর চক্ষে জল নাই, তার অনেক মানে আছে। তোর হৃদয়ে বিরহ অগ্নি সদা জ্বলছে; চক্ষে জল উঠছে আর সেই অগ্নির তাপে শুকিয়ে যাচ্ছে!
ডাক্তার – তোমার সঙ্গে তো কথায় পারবার জো নাই। (হাস্য)
ক্রমে অন্য কথা পড়িল। শ্রীরামকৃষ্ণ নিজের প্রথম ভাবাবস্থা বর্ণনা করিতেছিলেন। আর কাম-ক্রোধাদি কিরূপে বশ করিতে হয়।
ডাক্তার – তুমি ভাবে পড়েছিলে, আর-একজন দুষ্ট লোক তোমায় বুট জুতার গোঁজা মেরেছিল – সে-সব কথা শুনেছি।
শ্রীরামকৃষ্ণ – সে কালীঘাটের চন্দ্র হালদার। সেজোবাবুর কাছে প্রায় আসত। আমি ঈশ্বরের আবেশে মাটিতে অন্ধকারে পড়ে আছি। চন্দ্র হালদার ভাবত, আমি ঢঙ করে ওইরকম হয় থাকি, বাবুর প্রিয়পাত্র হব বলে। সে অন্ধকারে এসে বুট জুতার গোঁজা দিতে লাগল। গায়ে দাগ হয়েছিল। সবাই বলে, সেজোবাবুকে বলে দেওয়া যাক। আমি বারণ করলুম।
ডাক্তার – এও ঈশ্বরের খেলা; ওতেও লোক শিখবে, ক্রোধ কিরকম করে বশীভূত করতে হয়। ক্ষমা কাকে বলে, লোক শিখবে।
[বিজয় ও নরেন্দ্রের ঈশ্বরীয় রূপ দর্শন ]
ইতিমধ্যে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের সম্মুখে বিজয়ের সঙ্গে ভক্তদের অনেক কথাবার্তা হইতেছে।
বিজয় – কে একজন আমার সঙ্গে সদা-সর্বদা থাকেন, আমি দূরে থাকলেও তিনি জানিয়ে দেন, কোথায় কি হচ্ছে।
নরেন্দ্র – Guardian angel-এর মতো।
বিজয় – ঢাকায় এঁকে (পরমহংসদেবকে) দেখেছি! গা ছুঁয়ে।
শ্রীরামকৃষ্ণ (হাসিতে হাসিতে) – সে তবে আর-একজন!
নরেন্দ্র – আমিও এঁকে নিজে অনেকবার দেখেছি! (বিজয়ের প্রতি) তাই কি করে বলব – আপনার কথা বিশ্বাস করি না।