ভবঘুরেকথা
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

১৮৮৫, ২৯শে অক্টোবর
ডাক্তার ও মাস্টার – সার কি?

আজ বৃহস্পতিবার, আশ্বিন কৃষ্ণা ষষ্ঠী, ২৯শে অক্টোবর, ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দ। বেলা দশটা। ঠাকুর পীড়িত। কলিকাতার অন্তর্গত শ্যামপুকুরে রহিয়াছেন। ডাক্তার তাঁহাকে চিকিৎসা করিতেছেন, ডাক্তারের বাড়ি শাঁখারিটোলা। ডাক্তারের সঙ্গে এখানে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের একটি সেবক কথা কহিতেছেন। ঠাকুর রোজ রোজ কেমন থাকেন, সেই সংবাদ লইয়া তাঁহাকে প্রত্যহ আসিতে হয়।

ডাক্তার – দেখ, বিহারীর (ভাদুরীর) এক কথা! বলে Goethe’s spirit (সূক্ষ্মশরীর) বেরিয়ে গেল, আবার Goethe তাই দেখছে! কি আশ্চর্য কথা!

মাস্টার – পরমহংসদেব বলেন, ও-সব কথায় আমাদের কি দরকার? আমরা পৃথিবীতে এসেছি, যাতে ঈশ্বরের পাদপদ্মে ভক্তি হয়। তিনি বলেন, একজন একটা বাগানে আম খেতে গিছল। সে একটা কাগজ আর পেন্সিল নিয়ে কত গাছ, কত ডাল, কত পাতা তাই গুণছি – এখানে আম খেতে এসেছি! বাগানের লোকটি বললে, আম খেতে এসেছ তো আম খেয়ে যাও, তোমার অত শত, কত পাতা, কত ডাল এ-সব কাজ কি?

ডাক্তার – পরমহংস সারটা নিয়েছে দেখছি।

অতঃপর ডাক্তার তাঁহার হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল সম্বন্ধে অনেক গল্প করিতে লাগিলেন – কত রোগী রোজ আসে, তাদের ফর্দ দেখালেন; বললেন, ডাক্তার সাল্জার এবং অন্যন্য অনেকে তাঁহাকে প্রথমে নিরুৎসাহ করিয়াছিলেন। তাঁহারা অনেক মাসিক পত্রিকায় তাঁহার বিরুদ্ধে লিখিতেন ইত্যাদি।

ডাক্তার গাড়িতে উঠিলেন, মাস্টারও সঙ্গে উঠিলেন। ডাক্তার নানা রোগী দেখিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। প্রথমে চোরবাগান, তারপর মাথাঘষার গলি, তারপর পাথুরিয়াঘাটা। সব রোগী দেখা হইলে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখিতে যাইবেন। ডাক্তার পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুরদের একটি বাড়িতে গেলেন। সেখানে কিছু বিলম্ব হইল। গাড়িতে ফিরিয়া আসিয়া আবার গল্প করিতে লাগিলেন।

ডাক্তার – এই বাবুটির সঙ্গে পরমহংসের কথা হল। থিয়সফির কথা – কর্ণেল অল্কটের কথা হল। পরমহংস ওই বাবুটির উপর চটা! কেন জান? এ বলে, আমি সব জানি।

মাস্টার – না, চটা হবেন কেন? তবে শুনেছি, একবার দেখা হয়েছিল। তা পরমহংসদেব ঈশ্বরের কথা বলছিলেন। তখন ইনি বলেছিলেন বটে যে ‘হাঁ ও-সব জানি’।

ডাক্তার – এ বাবুটি সায়েন্স এসোসিয়েশনে ৩২,৫০০ টাকা দিয়াছেন।

গাড়ি চলিতে লাগিল। বড়বাজার হইয়া ফিরিতেছে। ডাক্তার ঠাকুরের সেবা সম্বন্ধে কথা কহিতে লাগিলেন।

ডাক্তার – তোমাদের কি ইচ্ছা এঁকে দক্ষিণেশ্বরে পাঠানো?

মাস্টার – না, তাতে ভক্তদের বড় অসুবিধা। কলকাতায় থাকলে সর্বদা যাওয়া আসা যায় – দেখতে পারা যায়।

ডাক্তার – এতে তো অনেক খরচ হচ্ছে।

মাস্টার – ভক্তদের সে জন্য কোন কষ্ট নাই। তাঁরা যাতে সেবা করতে পারেন, এই চেষ্টা করছেন। খরচ তো এখানেও আছে। সেখানে গেলে সর্বদা দেখতে পাবেন না, এই ভাবনা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!