ভবঘুরেকথা
সদগুরু জাগ্গি‌ বাসুদেব

সদগুরু জাগ্গি‌ বাসুদেবের বাণী: চার

৯১.
যারা তাদের সম্পর্কগুলোকে যুক্তি দিয়ে পরখ করেন, তারা সেগুলো বজায় রাখতে পারেন না। দুটি দেহ, দুটি মন, দুটি আবেগ কখনই পুরোপুরি মিলতে পারে না।

৯২.
সময় আমাদের সকলের জন্যই একই গতিতে বয়ে চলেছে। আপনি সময়কে পরিচালনা করতে পারবেন না, কিন্তু আপনি নিজের প্রাণশক্তিকে পরিচালনা করতে পারেন।

৯৩.
আপনার কাছে কি আছে, আপনি কি পারেন, কোথায় থাকেন বা আপনার আশেপাশে কে রয়েছে জীবন এ সবের বিষয়ে নয়। আপনার অনুভবের গভীরতাই হল জীবন।

৯৪.
কোনো কিছুই এমন হওয়া উচিত নয় যে ‘ব্যবহার করলাম আর ফেলে দিলাম’। এটা শুধুমাত্র সম্পদ সংরক্ষণের বিষয় নয়। এটা সমগ্র সৃষ্টির প্রতি একটি শ্রদ্ধার বিষয়।

৯৫.
সংশয় থাকা ভালো; এর অর্থ আপনি সত্যকে খুঁজছেন। সন্দেহ করা একটি অসুখ; এর মানে হল আপনি ইতিমধ্যেই একটি নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।

৯৬.
আপনার বলা প্রতিটি শব্দ, আপনার জীবনে আপনার দ্বারা করা প্রতিটি কর্ম, তা কি সকলের মঙ্গলের জন্য, না শুধুমাত্র আপনাকে ঘিরে? শুধু এই বিষয়টি স্থির করুন।

৯৭.
কিভাবে আপনি একটি পরিস্থিতিকে সমলান তা পুরোপুরি আপনার নির্বাচন বা পছন্দ অনুযায়ী নয়, কিন্তু কিভাবে আপনি নিজেকে সামলান সেটা পুরোটাই আপনার উপর।

৯৮.
বেশিরভাগ মানুষ খাঁচায় বন্দী পাখির মতো যারা নিজের সেই খাঁচাকে সোনায় মোড়াতে সমগ্র জীবন ব্যস্ত থাকে এবং তারা চূড়ান্ত লক্ষ্যের পথে যাওয়ার চেষ্টাও করে না।

৯৯.
প্রত্যেক জিনিসকে ফোনের মাধ্যমে দেখা, শুধু তোমার অনুভুতিকে শূন্য করে চলেছে। এটা বাস্তবে কোনো দিক থেকেই তোমার জীবনের অনুভবকে বাড়িয়ে তুলছে না।

১০০.
যে মানুষদের তুমি পছন্দ কর বা ভালোবাসো, শুধু তাদের সাথেই তুমি জড়িত নও। যাদের তুমি অপছন্দ বা ঘৃণা কর, তাদের সাথে তোমার সংযুক্তি আরো অনেক গভীর।

১০১.
যদি তুমি কোনো যোগ প্রণালীকে করে থাকো; আর সেটা যদি তোমার শক্তির গঠনকে পরিবর্তন করতে না পারে, তাহলে তুমি বৃথাই সেটা করে নিজের সময়কে নষ্ট করছ।

১০২.
সাহসী মানুষরাই মূর্খতাপূর্ণ কাজগুলো করে থাকে। ভীতুরা বেশিকিছু করতে পারে না। নির্ভীক মানুষরা জীবনটা যেরকম সেরকমই দেখে আর সেটাই করে যেটা প্রয়োজন।

১০৩.
যে হাসতে পারে না, সে ধ্যানও করতে পারে না। হাসি আপনার প্রাণশক্তিরই উচ্ছ্বাস। আপনার প্রাণশক্তির পরম উচ্ছ্বাসই হলো ধ্যান যার মধ্যে শারীরিক কাজকর্ম লাগে না।

১০৪.
আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া মনোভাবে বা আচরণে পরিবর্তন নয়, কিন্তু আপনি যেভাবে ভাবেন, অনুভব করেন আর জীবনকে উপলব্ধি করেন তার মৌলিক বা ভিত্তিগত পরিবর্তন।

১০৫.
মনের ঊর্দ্ধে কিভাবে যাওয়া যায় যোগের প্রকৃয়া এটা দেখার জন্যই। একমাত্র যখন আপনি মনের বিষয়বস্তুর ঊর্দ্ধে থাকেন তখনই আপনি প্রকৃতই স্বয়ং আপনি হতে পারেন।

১০৬.
না কোনো নারীর পক্ষে আর না কোনো পুরুষের পক্ষে আত্মজ্ঞান লাভ করা সম্ভব। আত্মজ্ঞানের সম্ভাবনা তখনই সৃষ্টি হয় যখন লিঙ্গভেদের বিষয় থেকে অনেক ওপরে উঠে যাবে।

১০৭.
আপনি এই পৃথিবীতে খালি হাতে আসেন এবং খালি হাতেই ফিরে যান। জীবনের অভিজ্ঞতায় কীভাবে আপনি নিজেকে সমৃদ্ধ হতে দেন, এরমধ্যেই রয়েছে জীবনের প্রকৃত সম্পদ।

১০৮.
যদি দেহ, মন, শক্তি ও ভাবনাকে উন্মুক্ত রাখো তাহলে তোমার জীবন অনেক ভালো হয়ে যাবে। আর যদি তুমি তোমার শক্তি প্রণালীকে উন্মুক্ত রাখো তাহলে সেটা জাদুময় হয়ে যাবে।

১০৯.
চারিত্রিক সততা ও সংহতি হল সবকিছুকে নিজের মধ্যে গ্রহণ বা একাত্ম করে নেওয়া। এটা একগোছা নিয়ম বা নীতি নয় বরঞ্চ চারপাশের সমস্ত জীবনের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে থাকা।

১১০.
ধ্যানের মাধ্যমে যখন বুঝবে তোমার ভেতরে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে আর সেগুলো সবই তোমার বানানো। তখনই তোমার ভেতরে সেই সীমাবদ্ধতাগুলোকে ভাঙ্গার ইচ্ছা তৈরি হবে।

১১১.
ব্যথা বেদনার ভয়ে তুমি নিজের জীবনকে অর্ধেক ও অসম্পূর্ণ রূপে যাপন করে থাকো। জীবনকে সম্পূর্ণরূপে যাপন করার জন্য ব্যথা বেদনার ভয় থেকে মুক্তি পাওয়া অবশ্যই প্রয়োজন।

১১২.
তোমার বাসনাগুলো পূর্ণ করার বদলে যদি তুমি নিজের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে নাও। তবে তুমি আরো সুন্দরভাবে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে পারবে। সবকিছু বেশ ভালোভাবে করতে পারবে।

১১৩.
আমাদের আর হিন্দু, খ্রীস্টান আর মুসলমান চাই না বরঞ্চ আমাদের আরো বুদ্ধ, যীশু আর কৃষ্ণের প্রয়োজন। তখনই আসল পরিবর্তন আসবে এবং প্রতিটা মানুষের ভেতরে সেই ক্ষমতা আছে।

১১৪.
জীবনের বাঁধা ছকে জড়িয়ে পরবেন না। ছোট ছোট জিনিস যা আপনি প্রতিদিন করেন, যেভাবে আপনি ভাবেন, অনুভব করেন, বোঝেন এবং আচরণ করুন। দেখুন আপনার কী রকম অনুভূতি হয়।

১১৫.
ব্রহ্মাণ্ডের বিস্তারের ক্ষেত্রে সবকিছুই ঠিক মতো ঘটে চলেছে কিন্তু তবুও আপনার মনে উদয় হওয়া একটামাত্র খারাপ চিন্তা আপনার সারাটা দিন নষ্ট করে দেয়, যা একটা দৃষ্টিকোণের অভাবমাত্র।

১১৬.
আত্মা, স্বর্গ আর ভগবানের বিষয়ে কথা বলো না। কারণ এমন কোনো বিষয় সম্পর্কে কথা বলা, যেটার বাস্তবিকতা সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা নেই, তা একটা মিথ্যের সমান হয়ে থাকে।

১১৭.
যখন আপনি আহার করেন, আপনি তখন এই পৃথিবীরই একটি অংশ নিজের মধ্যে গ্রহণ করেন। আমরা এই গ্রহটির সাথে যেমন আচরণ করি, তেমনই আচরণ আমরা নিজেদের শরীরের সাথেও করি।

১১৮.
যদি জীবন এবং বেঁচে থাকা আপনার কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়, তাহলে সকালে ঘুম থেকে উঠে, নিজেকে জীবিত পাওয়ার সুবাদে, চমৎকার একটি হাসি কি আপনার নিজের কাছে প্রাপ্য নয়?

১১৯.
তোমার জীবন আর সেটাকে তুমি কেমন অনুভব করো- সেই সবকিছুই সম্পূর্ণ তোমারই সৃষ্টি। যখন এই কথাটাকে তুমি ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারবে, তখনই একমাত্র তুমি নিজেকে বদলানোর জন্য প্রস্তুত হতে পারবে।

১২০.
জীবনের বাঁধা ছকে জড়িয়ে পরবেন না। ছোট ছোট জিনিস যা আপনি প্রতিদিন করেন, যেভাবে আপনি ভাবেন, অনুভব করেন, বোঝেন এবং আচরণ করেন-তাকে আজ একটু অন্যভাবে করুন। দেখুন আপনার কী রকম অনুভুতি হয়।

১২১.
জঙ্গল, নদী ও পর্বত এরা এমন এক প্রাণ যা আমাদের থেকে অনেক বৃহৎ, আর বহুরূপে আমাদের জীবনের উৎস এবং তার ভরণ-পোষণ করে। আমরা যা সমস্ত কিছু করি তার মধ্যে কিছুটা সতর্কতা দরকার এদের বজায় রাখার জন্য।

১২২.
আপনি প্রেমে উঠতে পারবেন না, আপনি প্রেমে উড়তে পারবেন না, আপনি প্রেমে দাঁড়াতে পারবেন না-প্রেমে আপনাকে পড়তে হবে। যদি আপনি আবেগের জাদু জানতে চান, তাহলে আপনার কিছু না কিছু অংশে বিসর্জন দিতেই হবে।

১২৩.
কোনো বিষয় সম্বন্ধে যত বেশি জানবেন, তত ভালো ভাবে সেটিকে পরিচালনা করতে পারবেন। যত বেশি আপনি নিজের সম্বন্ধে জানবেন, তত ভালো ভাবে আপনি নিজেকে পরিচালনা করতে পারবেন। একেই আত্ম উপলব্ধি বলে।

১২৪.
হাসি একটি অভিব্যক্তি নয়, অন্যলোকেরা হয়তো একে কোনো একটি ভাবের অভিব্যক্তি হিসেবে দেখতে পারে, কিন্তু যদি তুমি এক নিরুদ্বিগ্ন এবং মনোরম অবস্থায় থাক, তা হলে তোমার আশেপাশে কেউ না থাকলেও তোমার মুখে একটা হাসি লেগেই থাকবে।

১২৫.
যদি আপনার অতীতের অভিজ্ঞতাকে আপনার ভবিষ্যতের উপর প্রভার বিস্তার করতে দেন, তাহলে আপনার ভবিষ্যতের উপর প্রভাব বিস্তার করতে দেন, তাহলে আপনি সুনিশ্চিত করেছেন যে আপনার জীবনে ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই, আছে শুধু অতীতের পুণরাবৃত্তি।

<<সদগুরু জাগ্গি‌ বাসুদেবের বাণী: এক

………………………….
আরো পড়ুন:
সদগুরু জাগ্গি‌ বাসুদেবের বাণী: এক
সদগুরু জাগ্গি‌ বাসুদেবের বাণী: দুই
সদগুরু জাগ্গি‌ বাসুদেবের বাণী: তিন
সদগুরু জাগ্গি‌ বাসুদেবের বাণী: চার

……………….
আরও পড়ুন-
মহানবীর বাণী: এক
মহানবীর বাণী: দুই
মহানবীর বাণী: তিন
মহানবীর বাণী: চার
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: এক
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: এক
গৌতম বুদ্ধের বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: তিন
গৌতম বুদ্ধের বাণী: চার

গুরু নানকের বাণী: এক
গুরু নানকের বাণী: দুই
চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী
কনফুসিয়াসের বাণী: এক
কনফুসিয়াসের বাণী: দুই
জগদ্বন্ধু সুন্দরের বাণী: এক
জগদ্বন্ধু সুন্দরের বাণী: দুই
স্বামী পরমানন্দের বাণী: এক
স্বামী পরমানন্দের বাণী: দুই
স্বামী পরমানন্দের বাণী: তিন
স্বামী পরমানন্দের বাণী: চার
স্বামী পরমানন্দের বাণী: পাঁচ
স্বামী পরমানন্দের বাণী: ছয়
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: এক
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: দুই
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: তিন
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: চার
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: পাঁচ
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: ছয়
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: সাত
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: আট
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: নয়
শ্রী শ্রী কৈবল্যধাম সম্পর্কে
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বাণী
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ১ম খন্ড
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ২য় খন্ড
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ৩য় খন্ড

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!