ভবঘুরেকথা

জলে-ডোবা বালকের প্রাণদান

হুড়কা গ্রামেতে বাস নাম অভিরাম।
সহজ সরল লোক সেই গুণধাম।।
এক পুত্র তার ঘরে বড়ই দুরন্ত।
কোন ভাবে সে বালক নাহি হয় শান্ত।।
একদা মধ্যাহ্ন কালে সকলে নিদ্রিত।
হেন কালে কাল আসি হল উপস্থিত।।
হাঁটিতে হাঁটিতে শিশু জলে গিয়া পড়ে।
সাঁতার জানেনা তাই সেথা ডুবে মরে।।
রূপচাঁদ গোস্বামীজী আপনার ঘরে।
এক মনে গুরুরূপ আরোপেতে হেরে।।
গুরুরূপ আরোপেতে যারা মত্ত রয়।
দুরদৃষ্টি শক্তি তারা অনায়াসে পায়।।
সেই শক্তি বলে সাধু দেখিল ঘটনা।
তরণী পাগলে তাহা করিল রটনা।।
ত্রস্তে ব্যস্তে দুইজনে সেইখানে যায়।
তরণী পাগল তবে বালকে উঠায়।।
গোস্বামীজী অভিরামে ডাকে ঘনে ঘন।
ডেকে বলে ‘‘বাপু! তুমি মানুষ কেমন?
অচেতন থাক ঘুমে কোন দিক নাই।
জলে পড়ে পুত্র মল ফল দেখ তাই।।’’
অভিরাম কান্দে ধরে গোস্বামী-চরণ।
‘দয়া করে পুত্রে মোর দেহ গো জীবন।।’’
গোস্বামী বলিল ‘‘আমি কিসে দেব প্রাণ?
প্রাণদাতা একমাত্র প্রভু হরিচান।।
মনে প্রাণে ডাক তাঁরে যদি মুক্তি চাও।
জাগিলে জাগিতে পারে এই ডোবা নাও।।’’
সবে মিলে কাঁদাকাঁদি করিছে বসিয়া।
হেনকালে রূপচাঁদ কহিল ডাকিয়া।।
‘‘বালকের দেহ কেহ স্পর্শ না করিও।
দুরে বসে হরি বলে সকলে কান্দিও।।
গোস্বামীজী নিজে গেল শবের নিকটে।
ধরিল বারক চাপি নিজ করপুটে।।
হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ, বলে তার স্বরে।
বালকের গলা হতে জল পড়ে সরে।।
সবটুকু জল যবে বাহির হইল।
অমনি বালক তবে নিঃশ্বাস ছাড়িল।।
অদ্ভুত ঘটনা দেখি যত নরনারী।
উচ্চকন্ঠে সবে শুধু বলে হরি হরি।।
গোস্বামীর শক্তি দেখি আশ্চর্য্য মানিল।
দন্ডবৎ করে সবে চরণে পড়িল।।
অভিরাম. অবিরাম. পড়ে চরণেতে।
বলে ‘‘তুমি গুরুমোর হলে আজ হতে।।’’
রূপচাঁদ গোস্বামীর মহিমা বাড়িল।
দিনে দিনে যশ গেল দেশ দেশান্তরে।।
মুক্তি পেত বহু রোগী আসে তাঁর ধারে।।
মতুয়া চরিত্র কথা সুধাধিক সুধা।
মহানন্দ বলে খেলে যায় ভবক্ষুধা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!