ভবঘুরেকথা

সত্যের সন্ধান

মানুষের মনে জিজ্ঞাসার অন্ত নাই। কোনও না কোন বিষয়ে কোনও না কোন রকমের জিজ্ঞাসা প্রত্যেকের মনেই আছে, যেমন আপনার, তেমন আমার। অসংখ্য জিজ্ঞাসার মধ্যে মাত্র কতিপয় জিজ্ঞাসা এই পুস্তকখানিতে আমরা প্রশ্নাকারে ব্যক্ত করিলাম। কিন্তু ইহা শুধু আমাদেরই প্রশ্ন নহে।

যে সকল চিন্তাশীল মনীষী জীব ও জগত বিষয়ক ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক সম্বন্ধে চিন্তা-ভাবনা করেন, হয়ত তাদের মধ্যেও অনুরূপ প্রশ্নের উদয় হইয়া থাকে। কিন্তু অনেকেই তাহা প্রকাশ করেন না। হয়ত কেহ তাঁহার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মহলে দুই-চারিটি প্রশ্ন উত্থাপন করেন, কেহ বা অন্তরে চাপিয়া রাখেন।

বর্তমান যুগটি বিজ্ঞানের যুগ এবং যুক্তিবাদেরও। বিজ্ঞান পৃথিবীর বুকে আত্মশক্তি বা স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছে, কাহারও অনুকম্পায় নয়। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা মিটাইতেছে বিজ্ঞান। আপনি যদি বিজ্ঞানের দান গ্রহণে অমত করেন, তাহা হইলে আকাশের দিকে তাকান, ঘড়ির দিকে নয়।

আপনি যদি বিজ্ঞানের দান গ্রহণ করিতে না চাহেন, তাহা হইলে যানবাহনে বিদেশ সফর ও জামা-কাপড় ত্যাগ করুন এবং কাগজ-কলমের ব্যবহার ও পুস্তক পড়া ত্যাগ করিয়া মুখস্থ শিক্ষা শুরু করুন। ইহার কোনটি করা আপনার পক্ষে সম্ভব? বোধহয় একটিও না। কেননা মানব জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে বিজ্ঞানের দান অনস্বীকার্য। টেলিগ্রাফ, টেলিফোন হইতে শুরু করিয়া দেশলাই ও সুচ সুতা পর্যন্ত সবই বিজ্ঞানের দান।

বিজ্ঞানের কোন দান গ্রহণ না করিয়া মানুষের এক মুহূর্তও চলে না। মানুষ বিজ্ঞানের কাছে ঋণী। কিন্তু সমাজে এমন একশ্রেণীর লোক দেখিতে পাওয়া যায়, যাঁহারা হাতে ঘড়ি ও চক্ষে চশমা আঁটিয়া মাইকে বক্তৃতা করেন আর ‘বস্তুবাদ’ বলিয়া বিজ্ঞানকে ঘৃণা ও ‘বস্তুবাদী’ বলিয়া বিজ্ঞানীদের অবজ্ঞা করেন।

অথচ তাঁহারা ভাবিয়া দেখেন না যে, ভাববাদীরা বস্তুবাদীদের পোষ্য। বিজ্ঞান মানুষকে পালন করে। কিন্তু ধর্ম মানুষকে পালন করে না, বরং মানুষ ধর্মকে পালন করে এবং প্রতিপালনও। বর্তমান যুগে বিজ্ঞান-বিরোধী কোন শিক্ষাই গ্রহণীয় নয়।

আমাদের মনে হয় যে, এমন অনেক সৌভাগ্যশালীও আছেন, যাঁহাদের নিকট এই পুস্তকে লিখিত প্রশ্নগুলি অতিশয় তুচ্ছ। হয়ত তাঁহাদের নিকট প্রশ্নগুলির সমাধান সমাধান অজ্ঞাত নহে। তাঁহাদের নিকট আমাদের একান্ত অনুরোধ এই যে, তাঁহারা যেন এই প্রশ্নগুলির যথাযোগ্য সমাধান ও ব্যাখ্যা সাধারণ্যে প্রকাশ করেন। করিলে আমরা তাঁহাদের নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকিব।

আধুনিককালের অধিকাংশ মানুষ চায় কুংসস্কার হইতে মুক্তি, চায় সত্যের সন্ধান। ধর্মরাজ্যের যত্রতত্র অল্পাধিক কুসংস্কার স্বাচ্ছন্দে বিহার করিতেছে। আবার সভ্য মানবসমাজে এমন কোনো মানুষ নাই, যিনি কোনও না কোন ধর্মের আওতাভুক্ত নহেন। কাজেই এরূপ মানুষ অল্পই আছেন, যাঁহাদের কোনরূপ কুসংস্কার স্পর্শ করে নাই।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যাইতে পারে যে, বৈদিক, পারসিক ও ইহুদী ইত্যাদি আদিম জাতি (ধর্ম)-গুলির কল্পিত দেব-দেবী, দৈত্য-দানব, ভূত-পিশাচ, ডাকিনী-যোগিনী, শীতলা, ওলা, পেত্নী ইত্যাদি জীবসমূহের কোন অস্তিত্ব জগতে পাওয়া যায় না। অথচ ঐগুলির সত্যতা ও চরিত্র সম্বন্ধে সম্প্রদায় বা ব্যক্তিবিশেষের আস্থা কম নয়। হয়ত কোন এক সময়ে ঐগুলিকে ‘সত্য’ মনে করা হইত। কিন্তু বর্তমানে উহারা ‘মিথ্যা’ বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে।

এখন ঐগুলিকে ত্যাগ ও প্রমাণিত ‘সত্য’কে গ্রহণ করাই বাঞ্ছনীয়। কোন রকম গোঁড়ামীকে প্রশ্রয় না দিয়া প্রত্যেক ধর্মকে যথাসম্ভব কুসংস্কার মুক্ত করা উচিত। কুসংস্কার ত্যাগ করার অর্থ ‘ধর্মকে ত্যাগ করা’ নহে। যদি কেহ কুসংস্কার ত্যাগ করিতে অনিচ্ছুক হন এবং বলিতে চাহেন যে, কুসংস্কার ত্যাগ করিলে ধর্ম থাকিবে না, তাহা হইলে মনে আসিতে পারে যে, ধর্মরাজ্যে কি কুসংস্কার ভিন্ন আর কিছুই নাই?

এ প্রসঙ্গে কেহ যেন মনে না করেন যে, আমরা ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করিতেছি। আমাদের অভিযান শুধু অসত্য বা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, কোন ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। প্রত্যেকটি ধর্ম থাকিবে মিথ্যার আবর্জনাবর্জিত ও পবিত্র সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত।

‘সত্যের সন্ধান’ পুস্তকখানি পাঠ করিয়া স্বাধীন চিন্তাবিদ বন্ধুগণ সম্পূর্ণ না হইলেও আংশিকভাবে আমাদের মতবাদ অনুধাবন করিতে পারিবেন বলিয়া বিশ্বাস। এ বিষয়ে আমরা স্বাধীন চিন্তাশীল মনীষীদের মূল্যবান মতামতের প্রত্যাশী। আপনারা আপনাদের চিন্তালব্ধ মতামত সমূহ আমাদিগকে জানাইলে এবং অত্র পুস্তকখানির ত্রুটি প্রদর্শনপূর্বক উহা সংশোধনের উপদেশ দান করিলে বাধিত হইব।

আমাদের মনে হয় যে, এমন অনেক সৌভাগ্যশালীও আছেন, যাঁহাদের নিকট এই পুস্তকে লিখিত প্রশ্নগুলি অতিশয় তুচ্ছ। হয়ত তাঁহাদের নিকট প্রশ্নগুলির সমাধান সমাধান অজ্ঞাত নহে। তাঁহাদের নিকট আমাদের একান্ত অনুরোধ এই যে, তাঁহারা যেন এই প্রশ্নগুলির যথাযোগ্য সমাধান ও ব্যাখ্যা সাধারণ্যে প্রকাশ করেন। করিলে আমরা তাঁহাদের নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকিব।

পরিশেষে, এই গ্রন্থ প্রণয়নে যে সমস্ত পুস্তকের সাহায্য গ্রহণ করিয়াছি, উহার গ্রন্থকার মহোদয়গণের নিকট কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ রহিলাম।

বিনীত
গ্রন্হকার
গ্রাম : লামচরি
ডাকঘর : চরবেড়িয়া
জিলা : বরিশাল

………………………….
আরও পড়ুন-
মূলকথা : সত্যের সন্ধান
প্রথম প্রস্তাব  :আত্মা বিষয়ক
তৃতীয় প্রস্তাব :পরকাল বিষয়ক
পঞ্চম প্রস্তাব : প্রকৃত বিষয়ক
ষষ্ঠ প্রস্তাব :বিবিধ
উপসংহার – সত্যের সন্ধান
আদিম মানুষের সৃষ্টিতত্ত্ব
রাবণের প্রতিভা
ফেরাউনের কীর্তি
ভগবানের মৃত্যু
আধুনিক দেবতত্ত্ব
মেরাজ
শয়তানের জবানবন্দি
সমাপ্তি

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!