ভবঘুরেকথা

জয়পুর রাজ কুমারের পুনর্জ্জীবন
পয়ার

এইরূপ জয়পুর মান সিংহরায়।
তাহার হইল সুত সুতিকালয়।।
এরূপে দাসীকে ধাতা দিল দরশন।
বালকের জানিলেন আয়ু বিবরণ।।
পরমায়ু ছিল তার উনিশ বৎসর।
মাঝে মাঝে কাঁদে দাসী হইয়া কাতর।
অষ্ঠাদশবর্ষ আয়ু হইল যখন।
পাঠশালা হতে গৃহে আসিল নন্দন।।
বালকে করিয়া কোলে দাসী যবে কাঁদে।
রাজপুত্র সুধায়েছে ধরি তার পদে।।
দাসী বলে মম মনে অনেক সন্তাপ।
তোমার কল্যাণ হেতু কাঁদি ওরে বাপ।।
বলিতে না পারে দাসী মুখে না জুয়ায়।
রাজপুত্র কাতরে দাসীরে ধরে পায়।।
আমার শপথ লাগে করি প্রণিপাত।
সত্য করি কহ মম শিরে দিয়া হাত।।
ধাত্রী বলে কি বলিব শুন বাছাধন।
উনিশ বৎসরে হবে তোমার মরণ।।
আঠার বৎসর গত একটি বৎসর।
বাকি মাত্র আছে বাছা পরমায়ু তোর।।
শুনিয়া বালক বলে শুন ধাত্রী মাই।
বিশ্বেশ্বর দরশনে তবে আমি যাই।।
মার্কণ্ডের পরমায়ু বার বৎসর ছিল।
শঙ্কর কৃপাতে আয়ু সপ্তকল্প হ’ল।।
তার পিতা তাহারে দিলেন বনবাস।
হরি হরি বলিয়া কাটিল কর্ম ফাঁস।।
প্রস্তাব রয়েছে তার মার্কণ্ডপুরাণে।
হরি বলে মার্কণ্ড কাঁদিল বনে বনে।।
মার্কণ্ড নারদ সঙ্গে গেলেন কৈলাসে।
হেন কালে শমন তাহারে নিতে আসে।।
চর্ম্ম রসি কসে তার গলে বেঁধে দিল।
শিবলিঙ্গ বাম হাঁতে জড়ায়ে ধরিল।।
শিব এসে মহা রোষে ভক্ত নিল কোলে।
যম বক্ষ পরে তীক্ষ্ণ শূল নিক্ষেপিল।।
দুর্গতি নাশিনী দুর্গা শিশু নিল কোলে।
মাতৃ কোলে মার্কণ্ড শ্রী হরি হরি বলে।।
সদয় হইয়া বর দিল দিগম্বর।
বলে এর পরমায়ু সপ্ত মন্বন্তর।।
শিব যদি বর দিল যম গেল ফিরে।
সপ্তকল্প পরমায়ু সপ্ত মন্বন্তর।।
তব সম দয়ানিধি ভবে কেবা আছে।
শঙ্কর দয়ালু আর দয়ালু শ্রীহরি।।
শ্রীহরি বলিয়া মাগো করিব শ্রীহরি।।
স্বচক্ষেতে বিশ্বনাথ দরশন করি।
শমন দমন করি বলে হরি হরি।।
মাতা পিতা ধাত্রীকে বসায়ে এক ঠাঁই।
বলে মা বিদায় দেহ কাশীধামে যাই।।
আধ্যাত্মিক ভাবেতে সকলে বুঝাইল।
রাজপুত্র কাশীধামে গমন করিল।।
একবর্ষ কাশীধামে করে হরিনাম।
কিবা দিবা বিভাবরী না করি বিরাম।।
যে দিনেতে কুমারের আসন্ন সময়।
আনন্দ কাননে বসি হরিগুণ গায়।।
এসে পরে বিশ্বেশ্বর করে দরশন।
বহুস্তবে তোষে ভবে করিয়া রোদন।।
সিদ্ধ ঋষি তথা বসি বিশ্বেশ্বর দ্বারে।
রাজপুত গিয়া তথা তার পদ ধরে।।
পরমহংস, অবতংশ উলঙ্গ সন্ন্যাসী।
দীর্ঘজীবী তুই হবি বর দিল হাসি।।
রাজপুত্র বলে সুত পরমায়ু নাই।
সহস্রায়ু তোর আয়ু বলিল গোঁসাই।।
হেনকালে সেই সাধু গঙ্গা স্নানে যায়।
রাজপুত্র হাঁচি দিল এমন সময়।।
হাঁচি শুনি সাধু শিরোমণি দিল বর।
জীবন সহস্র বলে করে ধরে কর।।
রাজপুত্র সাধুর চরণ গিয়া ধরে।
আজ মম মৃত্যু ব’লে ভাসে অশ্রুনীরে।।
সাধু বলে হরি যে দিয়াছে হাঁচি।
জীবন সহস্র আমি তাহারে বলেছি।।
রণে বনে গমনে ভোজনে স্নানে দানে।
হাঁচিতে সুফল বেদের বিধানে।।
পশ্চিমে পরিলে হাঁচি বহু লভ্য হয়।
পশ্চিমেতে হাঁচি প’ল স্নানের সময়।।
হরিনাম ধ্বনি তোর ভক্তি রসময়।
তাতে তোর হাঁচি শুনে প্রফুল্ল হৃদয়।।
জীবন সহস্র মম মুখেতে আসিল।
কুমার তোমার ভাগ্য প্রসন্ন হইল।।
রাজপুত্র বলে মম অবশ্য মরণ।
বলিতে বলিতে তথা আইল শমন।।
মহিষ বাহন যম কালদণ্ডাকারে।
রাজপুত্র বলে ঐ নিতে এল মোরে।।
সাধু বলে চল শঙ্করের কাছে যাই।
দেখি বাক্য রাখে কি না শঙ্কর গোঁসাই।।
হেনকালে অন্নপূর্ণা বলে মৃদু হাসি।
দৈববানী প্রায় যেন বলিল প্রকাশি।।
বহুদিন করে সাধু সাধন ভজন।
সত্য সত্য সাধু বাক্য না হ’বে লঙ্ঘন।।
বিশ্বেশর বলে তুমি শুন ব্রহ্মময়ী।
তুমি যাহা বলিলে আমার বাক্য অই।।
সাধু বলে ধর্মরাজ শুনিতে কি পাও।
রাজপুত্র পরিবর্তে মম প্রাণ লও।।
শঙ্করী শঙ্কর বাক্য আমি দিনু বলে।
তিনবাক্য নষ্ট হয় রাজপুত্র নিলে।।
যম বলে তব বাক্যে ছাড়িনু কুমারে।
নির্ভয়েতে হরিভক্ত যাক নিজ ঘরে।।
রাজপুত্র চলে গেল আপন ভবনে।
বন্দিলেন পিতা মাতা ধাত্রীর চরণে।।
দুরন্ত কৃতান্ত শান্ত এ বৃতান্ত শুনি।
জয়পুরে প্রেমানন্দ জয় জয় ধ্বনি।।
ধাত্রীবাক্যে পরে করে মহা মহোৎসব।
হরি বলে নৃত্য করে যতেক বৈষ্ণব।।
আর দেখ কর্ণ পুত্র বৃষকেতু ছিল।
করাতে কাটিয়া তারে কৃষ্ণ পূজা কৈল।।
সেই পুত্র বাচালে কৃষ্ণ ভগবান।
কেন না বাচিবে বল এ ছেলের প্রাণ।।
কত মতে সাধু সেবা কৈল যশোমন্ত।
কেন ছেলে বাচিবেনা ভক্তি করে।।
বৈষ্ণবের সুখভঙ্গ এই ভয় করে।
দুঃখ নাই মড়া ছেলে সেরে রাখে ঘরে।।
যশোমন্ত পুত্র দিল অন্নপূর্ণা কোলে।
পতিপদ ধরি সতী হরি হরি বলে।।
ওহে নাথ এ তনয় আমার তো নয়।
ছেলের জীবন পেল বৈষ্ণবের কৃপায়।।
এছেলে থাকুক সাধু সেবায় নিযুক্ত।
বৈষ্ণবের নফর হউক বৈষ্ণবের ভক্ত।।
বৈষ্ণবের দাস হবে মম অভিলাস।
এ ছেলের নাম থাক শ্রীবৈষ্ণব দাস।।
পরে গৌরীদাস পরে শ্রীস্বরূপ দাস।
এক বিষ্ণু পঞ্চঅংশে ভুবনে প্রকাশ।।
পঞ্চভাই জন্ম নিল ভুবনের মাঝ।
রচিল তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!