ভবঘুরেকথা

রাখাল বিশ্বনাথের জীবন দান
পয়ার

একদিন শুন এক আশ্চর্য ঘটনা।
বিশ্বনাথ নামেতে রাখাল একজনা।।
গোধন চরাতে বিশ্বনাথ সাথে যায়।
সর্বক্ষণ ঠাকুরের সঙ্গে সঙ্গে রয়।।
যখন যে খেলা করে রাখাল স্বভাব।
তার মধ্যে মধুমাখা ঈশ্বরীয় ভাব।।
ঠাকুর থাকেন এক স্থানেতে বসিয়ে।
সবে মিলে খেলে আজ্ঞা অনুবর্তী হয়ে।।
রাখালেরা মিলিয়া বারিক করি লয়।
এক জন রাখে গরু বারিক সময়।।
প্রভু দেন আজ্ঞা করে শুন রে রাখাল।
ফিরাইয়া আন গিয়া গোধনের পাল।।
প্রভু দেন আজ্ঞা করে রাখালেরা শুনে।
ঠিক যেন পূর্ব ভার গিরি গোবর্ধনে।।
বিশ্বনাথ নামে এক রাখাল চতুর।
আত্মা সম ভাল তারে বাসিত ঠাকুর।।
সকল রাখাল এল গোষ্ঠ গোচারণে।
বিশ্বনাথ এল না দৈবের নির্বন্ধনে।।
ঠাকুর বলেন তবে সব সখাগণে।
সকলে আসিলি তোরা বিশে কোনখানে।।
নাটু কহে ওহে হরি কি কহিব আর।
আসিলাম বলিতে বিশের সমাচার।।
বিশের হ’য়েছে রাত্রে বিসূচিকা ব্যাধি।
মৃতপ্রায় সকলে করিতেছে কাঁদাকাঁদি।।
ঠাকুর বলেন নিদানের কর্তা আমি।
বিশাইর কি করিবে তুচ্ছ ভেদবমি।।
নাটুকে করিয়া সঙ্গে ঠাকুর চলিল।
হেনকালে বিশ্বনাথ অজ্ঞান হইল।।
বিশাইর হইয়াছে মৃত্যুর লক্ষণ।
ঘনশ্বাস বহে তার উত্তার নয়ন।।
বিশাইর জ্ঞাতি বন্ধু বলেছে সকলি।
বিশারে বাহিরে নিয়া কর অন্তর্জলী।।
হেনকালে প্রভু নাটু সঙ্গে তাড়াতাড়ি।
উঠিতেছে হরিচাঁদ বিশেদের বাড়ী।।
বিশার জননী কাঁদে আগুলিয়া পথ।
বলে আজ ছেড়ে যায় তোর বিশ্বনাথ।।
আর কি করিবি খেলা ল’য়ে বিশ্বনাথে।
প্রভু বলে আইলাম বিশারে কিনিতে।।
ঠাকুর বলেন বিশে শীঘ্র উঠে আয়।
বয়ে যায় রাখালিয়া খেলার সময়।।
খেলা ছাড়ি কেন বা রইলি অন্তর্জলে।
অন্তর্জলে তুই দেখে মোর অন্তর জ্বলে।।
এত বলি হস্ত ধরি বিশারে তুলিল।
নিদ্রা ভঙ্গে যেন বিশে গোষ্ঠেতে চলিল।।
বিশ্বনাথ গোঠে গেল ঠাকুরের সঙ্গে।
রাখাল মণ্ডলে গিয়া খেলা করে রঙ্গে।।
উঠিল মঙ্গল রোল জুড়িয়া মেদিনী।
বাল বৃদ্ধ যুবা করে জয় জয় ধ্বনি।।
কেহ বলে রামকান্ত দিয়াছিল বর।
এ ছেলে মনুষ্য নয় ব্রহ্ম পরাৎপর।।
কেহ বলে যশোমন্ত অতি নিষ্ঠা নর।
তার পুণ্যে হ’ল কোন দেব অবতার।।
বিশ্বনাথ উপাখ্যান শুনে যেই জন।
শমনের ভয় তার হয় নিবারণ।।
মহানন্দ চিদানন্দ রচিতে পুস্তক।
প্রভুর পৌগণ্ড লীলা রচিল তারক।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!