ভবঘুরেকথা
গণেশ পাগল

গণেশ পাগলের কুম্ভ মেলা ২০২০ স্থগিত

নমস্কার,
মহামানব গণেশ পাগলের সকল ভক্তবৃন্দদের অত্যন্ত দুঃখের সহিত জানাচ্ছি যে, প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরেও মহামানব গণেশ পাগল সেবাশ্রমের ঐতিহ্যবাহী ১৩ জৈষ্ঠ্য কুম্ভ মেলা আগামী ২৭ মে ২০২০ খ্রিস্টাব্দ ১৩ জৈষ্ঠ্য ১৪২৭ বঙ্গাব্দ বুধবার অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মহামারী মরণঘাতী করোনা ভাইরাস কোভিড ১৯ প্রাদুর্ভাবের জন্য, ১৩ জৈষ্ঠ্য কুম্ভ মেলা স্থগিত করা হয়েছে।

সেই সাথে নিম্নোক্ত মহামানব গণেশ পাগল সেবাশ্রম কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত নির্দেশনাগুলো সকল ভক্তবৃন্দদের মেনে চলার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি-

  • কোন রকম জনসমাগম করা যাবে না।
  • আশ্রম অঙ্গনের কোন জায়গায় কোনরূপ দোকানপাট বসতে দেওয়া হবে না।
  • কোন মতুয়া দল(ডাঙ্কা কাঁসি) নিয়ে আশ্রম অঙ্গনে প্রবেশ করতে পারবে না।
  • আশ্রম অঙ্গনের কোন জায়গায় কোনরূপ আড্ডাবাজি চলবে না।
  • আশ্রম অঙ্গনে কোনরূপ গান বাজনা/সভা সমাবেশ করতে পারবে না।
  • আশ্রম অঙ্গনের প্রবেশের সকল রাস্তা/গেট বন্ধ থাকবে।
  • কুম্ভ মেলা সম্পর্কিত সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
  • সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে অন্যথায় আইনুনাগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আদ্যাশক্তি মহামায়া কালীমাতা ও তাঁর বরপুত্র কেষ্ট খ্যাপা মহামানব গণেশ পাগলের চরণে আকুল আবেদন বিশ্বের সকল সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং বিশ্বের সকল ধর্মাবলম্বীদের মহামারী মরণঘাতী করোনা ভাইরাস কোভিড ১৯ থেকে খুব দ্রুত মুক্তিলাভ হোক এই প্রার্থনা করি।

দুলিতে ফুলিতে বিন্দুতে সই,
জয় বাবা গণেশ পাগলের জয়।।

অনুরোধক্রমে
প্রণব কুমার বিশ্বাস
সাধারণ সম্পাদক
মহামানব গণেশ পাগল সেবাশ্রম কমিটি।

গণেশ পাগলের কুম্ভ মেলা

মহামানব গণেশ পাগল সেবাশ্রম [গোবিন্দ মন্দির]
দিঘীরপাড়, কদমবাড়ি, মাদারিপুর

মাদারীপুর রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ী দীঘিরপাড় মহামানব শ্রীশ্রী গণেশ পাগল সেবাশ্রম সংঘে প্রতিবছর আয়োজিত হয় উপমহাদেশের অন্যতম কুম্ভমেলা। প্রতি বছরের মতো এবারও ১৩ জৈষ্ঠ্য কুম্ভ মেলা আগামী ২৭ মে ২০২০ খ্রিস্টাব্দ ১৩ জৈষ্ঠ্য ১৪২৭ বঙ্গাব্দ বুধবার অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতির জন্য সকলের কল্যাণার্থে এবার তা স্থগিত করা হয়েছে।

১৬৭ একর জমিতে একরাতের জন্য উপমহাদেশের অন্যতম দেড়শ বছরের ঐতিহাসিক কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়। কথিত আছে যে, সত্য যুগে দেবতা ও অসুরদের সমুদ্র মন্থনে যে অমৃতসুধা উঠেছিল তা চারটি কুম্ভ পাত্রে- হরিদ্বার, প্রয়াগ, উজ্জয়িনী ও নাসিকে চারটি পবিত্র স্থানে রাখা হয়েছিল। প্রতি ১২ব ছর পরপর অমৃত যোগে একেক স্থানে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হতো। এ ঘটনার পর থেকে সাধুরা কুম্ভ মেলার আয়োজন করে আসছেন।

১৩৪ বছর পূর্বে জ্যৈষ্ঠ মাসের ১৩ তারিখে ১৩ জন সাধু ১৩ কেজি চাল ও ১৩ টাকা নিয়ে রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ীর দীঘিরপাড়ে ভারতের কুম্ভমেলাকে অনুসরণ করে এ মেলার আয়োজন করা হয়। সেই থেকে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ীর দীঘিরপাড় শ্রীশ্রী গণেশ পাগল সেবাশ্রমে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

এক রাতের মেলা হলেও চলে সকাল থেকে পরদিন ভোর রাত পর্যন্ত। প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে পুরো একটি এলাকার বাড়ি-ঘর, মাঠ-ঘাট ও ক্ষেত-খামারে কোন জায়গা খালি থাকে না মানুষের পদচারণায়। সমাগম ঘটে প্রায় লক্ষ লক্ষ মানুষের।

রেওয়াজ অনুযায়ী সকাল থেকে দলে দলে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নাচ-গান করতে করতে মানুষ আসতে শুরু করে। প্রতিটি দলে একই ধরনের পোশাক পরে আসা ভক্তদের হাতে থাকে জয়ডংকা, ঢোল, কাশি, রঙিন কাপড়ের নিশান। দলগুলোর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে ‘জয় হরিবোল’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো অঞ্চল।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে ও বহু লোকের সমাগম ঘটে। লক্ষ লক্ষ মানুষ আসে পুন্য আর্জনের উদ্দেশ্যে। প্রথমে সকলে গণেশ পাগলের মন্দিরের সামনে বাদ্যের তালে তালে ভক্তিভরে নাচতে শুরু করে। তাদের নাচের তালে তালে মন্দির প্রাঙ্গণে রাখা ধানের আঁটিগুলো মাড়াই হয়ে যায়। প্রতিটি দলই মিষ্টি বাতাসা ছুড়ে মারতে থাকে। এরপর একে একে প্রবেশ করে মূল মেলা প্রাঙ্গণে।

অন্যদিকে বিশাল প্রাঙ্গণজুড়ে বসে মেলা। এই মেলা যেনো একরাতে দেখে শেষ হবার নয়। লোকে বলে এমন কিছু নেই যে এই মেলার মেলে না। আনন্দ, বিনোদন সামগ্রী, খেলনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, আসবারপত্র, পোশাক, খাবারদের দোকানেরর পাশাপাশি বসে পুতুলনাচ, নাগরদোলা, সাকার্স ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সাধু-সন্ন্যাসীদের অসরতো বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলেই।

আগতদের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য মেলার বিভিন্ন স্থানে থাকে স্বেচ্ছাসেবীরা, অন্ত্যত দুটি স্থানে থাকে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা।

এ মেলায় কর্মসূচীর মধ্যে থাকে শ্রীমদ্ভগবদ গীতা পাঠ, ১৩টি মন্দির গেটে দেব-দেবীর পূজা, গণেশ পাগলের পূজা, কালী পূজা, আরতি, প্রার্থনা, প্রতিমা ও মন্দির দর্শন, ভজন সংগীত, পদাবলী কীর্ত, বাউল সংগীত, যঞ্জানুষ্ঠান, প্রসাদ বিতরণ, পবিত্রস্নান ও নর নারায়ণ সেবা।

মহামানব গণেশ পাগল সেবাশ্রমে রয়েছে গোবিন্দ মন্দির, তুলসীধাম, নন্দনকানন, মনসা মন্দির, শীতলা মন্দির, নিকুঞ্জ-নিধুবন, রাধাকুন্ডু-শ্যাম কুন্ডু, দূর্গামন্দিও, শ্মশানকালী-শিব মন্দির, বীরহনুমান মন্দির, গুরু আগার মঠ মন্দির, রাধাকৃষ মন্দির, প্রভু গৌর নিতাই মন্দির, লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির, রাম সীতা মন্দির, স্বর্গধাম (শ্মশান) ইত্যাদি।

স্থান:

মহামানব গণেশ পাগল সেবাশ্রম
গ্রাম:
দিঘীরপাড়
ইউনিয়ন: কদমবাড়ী
উপজেলা: রাজৈর
জেলা: মাদারীপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।

: যাতায়াত :

ঢাকার গুলিস্তান, গাবতলি, যাত্রাবাড়ি যে কোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে মাওয়া ঘাট। সেখানে থেকে লঞ্চ, স্প্রিডবোর্ড বা ফেরীতে করে পদ্মা পারি দিতে হবে। সেখানে থেকে বাসে বা মাইক্রবাসে করে বরিশাল মহাসড়কে ভাংগা হয়ে টেকেরহাট নামতে হবে। টেকেরহাট থেকে মাহিন্দ্র/ইজি বাইকে কদমবাড়ি বাজার। কদমবাড়ি বাজার থেকে মহামানব গণেশ পাগল সেবাশ্রম।

…বর্তমান পরিস্থিতির কারণে পাগলের সকল ভক্তকে বিনীত নিবেদন সেবাশ্রম কমিটির নির্দেশ মোতাবেক সরকারি বিধিনিষেধ মেনে এবারের গণেশ পাগলের কুম্ভ মেলায় না আসার অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আইনুনাগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে…

……………………………..
আরো পড়ুন:
গণেশ পাগল

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!