ভবঘুরেকথা
গৌতম বুদ্ধ

গৌতম বুদ্ধ সাধন বলে যে জ্ঞান প্রাপ্ত হন। সেই জ্ঞানকে তিনি চার আর্য সত্যরূপে প্রকাশ করেছেন। এই চার আর্য সত্য হচ্ছে বুদ্ধের সমগ্র দর্শনের সারকথা। সেই চার আর্যসত্য হলো-
১. দুঃখ
২. দুঃখ সমুদয় বা দুঃখের কারণ
৩. দুঃখ নিরোধ
৪. দুঃখ নিরোধের উপায়

দুঃখ আর্য সত্য :
এই জগতসংসার দুঃখময়। আর এই দুঃখ আসে মানুষের আকাঙ্খা ও আসক্তি থেকে। এই দুঃখকেই প্রথম ও প্রধান সত্য বলে অভিহিত করা হয়েছে। কারণ এই জগতে দুঃখ অপেক্ষা সত্য আর কিছুই নেই। সুখ ক্ষণস্থায়ী। ক্ষণিকের জন্য আসে। কিন্তু দুঃখ অনেক বেশি স্থায়ী। কিন্তু মানুষ তা স্বীকার করতে চায় না। মানুষ দুঃখ ভুলে থাকার অভিনয় করে মাত্র। অস্বীকার করলে কোনো সমস্যা থেকেই মুক্তি সম্ভব নয়। তাই জীবন দু:খময় সেটা স্বীকার করে নিয়ে তার স্বরূপ জানতে পারলেই তার থেকে মুক্তি সম্ভব। কিন্তু সমস্যাকে উপেক্ষা করলে তা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়।

ধর্মচক্রপ্রবর্তনসূত্রে যতপ্রকার দু:খ আছে সেগুলোকে সংক্ষেপ করে বুদ্ধ ৮টি পর্যায়ে ভাগ করেছেন। এই দু:খসমূহ-

  • জন্ম দুঃখ
  • জরা দুঃখ
  • ব্যাধি দুঃখ
  • মৃত্যু দুঃখ
  • অপ্রিয়-সংযোগ দুঃখ
  • প্রিয়বিচ্ছেদ দুঃখ
  • ইপ্সিতের অপ্রাপ্তির দুঃখ
  • পঞ্চোপাদান স্কন্ধময় এই দেহ ও মন দুঃখপূর্ণে

এই আট প্রকার দুঃখকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়-

  • শারীরিক দুঃখ
  • মানুসিক দুঃখ

গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- “তুমি সমস্যায় পড়িয়া পলায়ন করিও না। সমস্যার মুখোমুখি হও। যাহা ঘটিতেছে তাহার স্বরূপ জানিয়া এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধান কর। তোমার সব সমস্যার সমাধান হইয়া যাইবে। ইহার জন্য প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল, সৎ সাহস, সৎ প্রচেষ্টা।”


জগৎ ও জীবন দুঃখের আগার চারদিকে যখন আগুন জ্বলছে, চারদিক যখন অন্ধকারে আচ্ছন্ন, তখন কি তোমরা সুখী হতে পারবে ভোগাসক্ত থাকতে পার তোমরা কি আলো সন্ধান করবে না। এই নিরবচ্ছিন্ন দুঃখ হল বুদ্ধের প্রথম আর্যসত্য।

গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- “চার মহাসমুদ্রের জলরাশি সাথে তোমাদের অশ্রুরাশির যদি তুলনা কর, তা হলে দেখবে তোমরা যা ভয় করেছ, তাই তোমাদের কর্মে ঘটেছে, আর যা তোমরা কামনা করেছ তা পাও নি বলে যে, অশ্রুরাশির বিসর্জন করেছ তার পরিমানেই বেশী হবে।”

গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- “হে ভিক্ষুগণ দুঃখ আছে। সকলেরই জন্ম, ব্যাধি, বার্ধক্য ও মৃত্যু আছে এটি কেউ অস্বীকার করতে পারে? জগৎ ও জীবন দুঃখের আগার চারদিকে যখন আগুন জ্বলছে, চারদিক যখন অন্ধকারে আচ্ছন্ন, তখন কি তোমরা সুখী হতে পারবে ভোগাসক্ত থাকতে পার তোমরা কি আলো সন্ধান করবে না। এই নিরবচ্ছিন্ন দুঃখ হল বুদ্ধের প্রথম আর্যসত্য।”

দুঃখ সমুদয় বা দুঃখের কারণ আর্য সত্য:
দুঃখ প্রথম সত্য আর সকল সত্যের পেছনেই একটা কারণ থাকে। কারণ ব্যাতিত কিছুই সংগঠিত হয় না। আর এই কারণ অর্থাৎ দুঃখের কারণকেই বলা হচ্ছে দ্বিতীয় সত্য। মানুষের তৃষ্ণার অর্থাৎ আকাঙ্খার শেষ নেই। এই আকাঙ্খা কখনো শেষ হয় না। একটা আকাঙ্খা পূরণ হলেই আরো আকাঙ্কা শুরু হতে শুরু হয়ে যায়। এভাবে আর তা থেমে থাকে না চলতেই থাকে। আর এই আকাঙ্খা পূরণ করার জন্যই মানুষ নানাবিধ ব্যক্তি-বস্তু-পরিস্থিতিতে জড়িয়ে পরে। আর এতেই তৈরি হয় আসক্তি। দুঃখ কারণ এই আকাঙ্খা এবং আকাঙ্খা থেকে উৎপন্ন আসক্তি। সমস্ত কিছুর মূলে আকাঙ্খার অপ্রাপ্তি এবং আকাঙ্খার বিপরীত কিছু ঘটনা। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- “তৃষ্ণার অনলে ব্যক্তি স্বয়ং যে দগ্ধ হয় তাহা নহে, অন্যদেরও দগ্ধ করে।” “সমূল তৃষ্ণাকে উৎপাটিত কর। নতুবা প্রতি পদে পদে বিপদের সম্ভবনা। তৃষ্ণাই সর্বদু:খের মূল।” “মানুষের সমস্ত প্রকার দুঃখের কারণ হইতেছে তাহার নিজের কর্ম ও সমস্ত কর্মের মূলে তাহার তৃষ্ণা।”

যতপ্রকার তৃষ্ণা বা আকাঙ্খা আছে তাকে মূলত তিন প্রকারে ভাগ করা হয়েছে-

  • কামতৃষ্ণা
  • ভবতৃষ্ণা
  • বিভবতৃষ্ণা

আর এই আকাঙ্খা ও তৃষ্ণার উদ্ভব হয় অবিদ্যার কারণে। এই অবিদ্যা হচ্ছে যথাভূত, যথাসত্য সম্বন্ধে অজ্ঞানতা। অবিদ্যার কারণে কেউই কোন ব্যক্তি-বস্তু-পরিস্থিরি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়।

গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- “তৃষ্ণাই দুঃখের কারণ, যে তৃষ্ণা সত্ত্বাগণকে জন্ম হইতে জন্মান্তরে পরিভ্রমণ করায়, যে তৃষ্ণা ভোগ ও ভোগাসক্তি-সহগত এবং যে তৃষ্ণা মুহূর্তে মুহূর্তে বিষয় হইতে বিষয়ান্তরে সুখের অন্বেষণ করায়।”


জরা মরনাদি দুঃখের করণ জাতি বা জন্ম। সেখানে জাতি বা জন্ম সেখানে জরা মৃত্যু। আমরা জন্মেছি বলে দুঃখ কষ্ট ভোগ করি। জন্ম না থাকলে দুঃখ ভোগের প্রশ্ন থাকতো না।

গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- “জরা মরনাদি দুঃখের করণ জাতি বা জন্ম। সেখানে জাতি বা জন্ম সেখানে জরা মৃত্যু। আমরা জন্মেছি বলে দুঃখ কষ্ট ভোগ করি। জন্ম না থাকলে দুঃখ ভোগের প্রশ্ন থাকতো না। জন্ম যদি দুঃখের কারণ হয়, তবে জন্মের ও নিশ্চয় কারণ থাকবে। জন্মের কারণ হল ভব। ভব মানে হওয়া অর্থাৎ পুনরায় জন্ম গ্রহণের জন্য ব্যাকুলতা। জন্মগ্রহণ করার জন্য আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে যে প্রবল প্রবণতা আছে তাকে ‘ভব’ বলা হয়েছে। ভবের উদ্দীপনাতে আমরা জন্মগ্রহণ করি। কিন্তু এই ভব অর্থাৎ জন্মগ্রহণের ব্যাকুলতা কারণ কি? এর কারণ উপাদান। জাগতিক বস্তু বা বিষয়ের প্রতি আসক্তিকে উপাদান বলে। উপাদানে ও কারণ আছে এবং তা হল তৃঞ্চা।”

গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- “কোন বৃক্ষের মূল যদি মাটির নিচে থেকে যায় তাহলে সেই বৃক্ষকে কেটে ফেললেও তা যেমন আবার বৃদ্ধি পায়, তেমনি তৃঞ্চাকে যদি সম্পূর্ণ নির্মূল না করা যায় তাহলে দুঃখ যন্ত্রণার উপশম তো হবে না বরঞ্চ বেড়েই চলবে।”


“মানুষের সমস্ত প্রকার দুঃখের কারণ হইতেছে তাহার নিজের কর্ম ও সমস্ত কর্মের মূলে তাহার তৃষ্ণা।”

দুঃখ প্রথম সত্য আর সকল সত্যের পেছনেই একটা কারণ থাকে। কারণ ব্যাতিত কিছুই সংগঠিত হয় না। আর এই কারণ অর্থাৎ দুঃখের কারণকেই বলা হচ্ছে দ্বিতীয় সত্য। মানুষের তৃষ্ণার অর্থাৎ আকাঙ্খার শেষ নেই। এই আকাঙ্খা কখনো শেষ হয় না। একটা আকাঙ্খা পূরণ হলেই আরো আকাঙ্কা শুরু হতে শুরু হয়ে যায়। এভাবে আর তা থেমে থাকে না চলতেই থাকে। আর এই আকাঙ্খা পূরণ করার জন্যই মানুষ নানাবিধ ব্যক্তি-বস্তু-পরিস্থিতিতে জড়িয়ে পরে। আর এতেই তৈরি হয় আসক্তি। দুঃখ কারণ এই আকাঙ্খা এবং আকাঙ্খা থেকে উৎপন্ন আসক্তি। সমস্ত কিছুর মূলে আকাঙ্খার অপ্রাপ্তি এবং আকাঙ্খার বিপরীত কিছু ঘটনা। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- “তৃষ্ণার অনলে ব্যক্তি স্বয়ং যে দগ্ধ হয় তাহা নহে, অন্যদেরও দগ্ধ করে।” “সমূল তৃষ্ণাকে উৎপাটিত কর। নতুবা প্রতি পদে পদে বিপদের সম্ভবনা। তৃষ্ণাই সর্বদু:খের মূল।” “মানুষের সমস্ত প্রকার দুঃখের কারণ হইতেছে তাহার নিজের কর্ম ও সমস্ত কর্মের মূলে তাহার তৃষ্ণা।”

যতপ্রকার তৃষ্ণা বা আকাঙ্খা আছে তাকে মূলত তিন প্রকারে ভাগ করা হয়েছে-

  • তৃষ্ণা
  • ভবতৃষ্ণা
  • বিভবতৃষ্ণা


“তৃষ্ণাই দুঃখের কারণ, যে তৃষ্ণা সত্ত্বাগণকে জন্ম হইতে জন্মান্তরে পরিভ্রমণ করায়, যে তৃষ্ণা ভোগ ও ভোগাসক্তি-সহগত এবং যে তৃষ্ণা মুহূর্তে মুহূর্তে বিষয় হইতে বিষয়ান্তরে সুখের অন্বেষণ করায়।”

আর এই আকাঙ্খা ও তৃষ্ণার উদ্ভব হয় অবিদ্যার কারণে। এই অবিদ্যা হচ্ছে যথাভূত, যথাসত্য সম্বন্ধে অজ্ঞানতা। অবিদ্যার কারণে কেউই কোন ব্যক্তি-বস্তু-পরিস্থিরি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়।

গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- “তৃষ্ণাই দুঃখের কারণ, যে তৃষ্ণা সত্ত্বাগণকে জন্ম হইতে জন্মান্তরে পরিভ্রমণ করায়, যে তৃষ্ণা ভোগ ও ভোগাসক্তি-সহগত এবং যে তৃষ্ণা মুহূর্তে মুহূর্তে বিষয় হইতে বিষয়ান্তরে সুখের অন্বেষণ করায়।”

গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- “জরা মরনাদি দুঃখের করণ জাতি বা জন্ম। সেখানে জাতি বা জন্ম সেখানে জরা মৃত্যু। আমরা জন্মেছি বলে দুঃখ কষ্ট ভোগ করি। জন্ম না থাকলে দুঃখ ভোগের প্রশ্ন থাকতো না। জন্ম যদি দুঃখের কারণ হয়, তবে জন্মের ও নিশ্চয় কারণ থাকবে। জন্মের কারণ হল ভব। ভব মানে হওয়া অর্থাৎ পুনরায় জন্ম গ্রহণের জন্য ব্যাকুলতা। জন্মগ্রহণ করার জন্য আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে যে প্রবল প্রবণতা আছে তাকে ‘ভব’ বলা হয়েছে। ভবের উদ্দীপনাতে আমরা জন্মগ্রহণ করি। কিন্তু এই ভব অর্থাৎ জন্মগ্রহণের ব্যাকুলতা কারণ কি? এর কারণ উপাদান। জাগতিক বস্তু বা বিষয়ের প্রতি আসক্তিকে উপাদান বলে। উপাদানে ও কারণ আছে এবং তা হল তৃঞ্চা।”

গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- “কোন বৃক্ষের মূল যদি মাটির নিচে থেকে যায় তাহলে সেই বৃক্ষকে কেটে ফেললেও তা যেমন আবার বৃদ্ধি পায়, তেমনি তৃঞ্চাকে যদি সম্পূর্ণ নির্মূল না করা যায় তাহলে দুঃখ যন্ত্রণার উপশম তো হবে না বরঞ্চ বেড়েই চলবে।”

দুঃখ নিরোধ বা নিবৃত্তি আর্যসত্য:
দুঃখের কারণ থাকলে তার নিরোধ করারও সম্ভব। অর্থাৎ যার সৃষ্টি আছ তার ধ্বংস আছে। তৃষ্ণা বা আকাঙ্খা না থাকলে দুঃখ হয় না। তাই তৃষ্ণাকে নিবৃত্তি করতে পারলেই দুঃখের নিবৃত্তি সম্ভব। কারণকে উৎপন্ন হতে না দিয়ে তার আর কার্যকারিতা থাকবে না। বিন্দু পরিমাণ তৃষ্ণা অবশিষ্ট থাকলে দুঃখের নিবৃত্তি হয় না। নতুন করে আবার তৃষ্ণা বা আকাঙ্খা শুরু হয়ে যায়।

গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, “চিত্ত-সন্ততিতে উৎপদ্যমান সুখদু:খাদি বেদনা বা অনুভূতিসমূহের নিবৃত্তি ঘটাইতে পারিলেই তৃষ্ণা নিবৃত্তি হইবে।” “উৎপাদ্যমান বেদনা বা অনুভূতিকে ভোগ না করিয়া উপেক্ষা করিতে পারিলেই নতুন তৃষ্ণাও উৎপন্ন হইবে না, পুরাতন তৃষ্ণাও এইভাবে একে একে ক্ষয় হইবে।”

দুঃখ নিরোধের উপায় আর্যসত্য:
দুঃখনিবৃত্তি বা নির্বাণ উপলব্ধির উপায় হচ্ছে অষ্টাঙ্গিক মার্গ। অষ্টাঙ্গিক মার্গ-

  • সম্যক দৃষ্টি
  • সম্যক সংকল্প
  • সম্যক বাক্য
  • সম্যক কর্ম
  • সম্যক আজীব
  • সম্যক ব্যায়াম
  • সম্যক স্মৃতি
  • সম্যক সমাধি

Related Articles

4 Comments

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • jyoti Anoruddha Bhikkhu , বৃহস্পতিবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ @ ৪:০৯ অপরাহ্ণ

    সাধু সাধু সাধু
    অনেক সুন্দররুপে ব্যাখ্যা করা হয়েছ।

  • jyoti Anoruddha Bhikkhu , বৃহস্পতিবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ @ ৪:০৯ অপরাহ্ণ

    সাধু সাধু সাধু
    অনেক সুন্দর রুপে ব্যাখ্যা করা হয়েছ।

    • ভবঘুরে , সোমবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ @ ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ

      অনেক অনেক ধন্যবাদ
      পাশে থাকবেন
      জয়গুরু

  • মেঘা মিত্র , বৃহস্পতিবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ @ ১:৪৪ অপরাহ্ণ

    অসাধারণ লেখা!
    অষ্টাঙ্গিক মার্গ এর ওপর একটি লেখা প্রকাশ করুন ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!