ভবঘুরেকথা
গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু চৈতন্য নিমাই বৈষ্ণব

স্থাবর ত্রিংশল্পক্ষশ্চ জলর্যো্নবলক্ষক:।
কৃমিয়োদশলক্ষশ্চ রুদ্রলক্ষশ্চ পক্ষিণৌ।।
পাশোবো বিংশলক্ষশ্চ চতুর্লক্ষন্ত মানবা।
এতেষুভ্রমণং ক্বত্বা ভ্রাদ্ধিজত্বমুপজায়তে।
মানুষ্যদুর্ল্লভং জন্ম যদিস্যাৎ কৃষ্ণসাধক:।।

(তথাহি শ্রীমদ্ভাগবতে দশমস্কন্ধে প্রথম অধ্যায়ে শুকদেব প্রতি পরীক্ষিদুক্ত নিবর্ত্ত্যতস্বৈরূপ গীয়মানাদিতি শ্লোকস্য ব্যাখ্যায়াং গোস্বামীনোক্তং)

পুরাণাদি শাস্ত্রে যাহা আছয়ে বর্ণন।
শুন সে চুরাশী লক্ষ যোনি বিবরণ।।
ত্রিশ লক্ষবার বৃক্ষ যোনিতে জনম।
তাতে যত কষ্ট হয় অশেষ রকম।।
রৌদ্রের উত্তাপ লাগে বৃষ্টি ধারা বয়।
বায়ুর প্রাবল্যে শাখা পল্লব ভাঙ্গয়।।
কুঠারে কাটিয়ে তারে ফেলয়ে ভূমিতে।
সুখ দু:খ জ্ঞান নাই কঠিন দেহেতে।।
পর্ব্বত শৃঙ্গেতে দৈব বড় গাছ হয়।
সহস্র বৎসরাবধি বাঁচিয়া থাকয়।
ত্রিশ লক্ষবার বৃক্ষ যোনিতে ভ্রমিতে।
কত যুগ যুগান্তর যাইবে ক্রমেতে।।
তারপর জনচর রূপেতে জনম।
মৎস্য কূর্ম্ম জলৌকাদি অশেষ রকম।।
এইরূপ নব লক্ষবার জন্ম হয়।
কহি শুন তাতে যত কষ্ট জনময়।।
হস্ত নাই, পদ নাই, দেহ মাথা আছে।
খায় পচা মাংস আর যাহা পায় কাছে।।
আত্ম পর ভেদাভেদ না করে বিচার।
এক গর্ভে জন্মে বহু সন্ততি তাহার।।
এক মাংস অন্যে খেয়ে রক্ষা করে প্রাণ।
শীত, গ্রীষ্ম ভেদ নাহি হিংসা পরায়ণ।।
ঘর বাড়ি ঠিক নাই যথা তথা ফিরে।
নব লক্ষবার জন্ম হয় ধীরে ধীরে।।
অত:পর কৃমি যোনি জনম লভয়।
শত লক্ষবার তাতে ভ্রমিবারে হয়।।
কত শত কৃমি আছে নানা রূপ ধরে।।
এত ক্ষুদ্র হয় সে দৃষ্টির বাহিরে।।
ইন্দ্রিয় বিহীন দেহ স্থূলাকার হয়।
সুখ দু:খ আত্ম পর ভেদ নাহি রয়।।
জনম মাত্রেতে ভ্রমে ভক্ষ্য অভিলাষে।
পড়ি মাত্র বিষ্ঠাগর্ত্তে ডুবে আর ভাসে।
মলমূত্র দুর্গন্ধাদি রয় সেই স্থানে।
কৃমির জনম হয় জানিও সেখানে।।
কৃমি দশ লক্ষবার ভ্রমিয়া বিশেষে।।
একাদশ লক্ষবার পক্ষী যোনি শেষে।।
পক্ষী জন্মে সেবা ভোগ শুন সমাচার।
রৌদ্র আর বৃষ্টি ধারা সহে অনিবার।।
ঘর বাড়ি নাই নিত্য বৃক্ষডালে থাকে।
যাহা পায তাহা খায় জোকে আর পোকে।
গর্ভে ডিম্ব হলে বাসা বাঁধে বৃক্ষডালে।।
কত কষ।ট করি তারা সন্তানের পালে।।
নিজে না খাইয়া খাদ্য শাবকে ভুঞ্জায়।
উড়িতে পারিলে তারা ফিরিয়া না চায়।।
মাতা-পিতা যেথা সেথা থাকুক যেখানে।
নিজ আহারের লাগি ঘুরে নানা স্থানে।।
দৈবে যদি জন্ম হয় কাক শকুনিতে।
দীর্ঘকাল বাঁচি থাকে এই পৃথিবীতে।
একাদশ লক্ষবার বহু যুগে ভ্রমি।
কত কষ্ট পায পশু কূলেতে জনমি।।
বিশ লক্ষবার জন্ম পশুর যোনিতে।
নানা পশু নানা কষ্ট পায় অবনীতে।
কোন পশু বনবাসী প্রাণী হিংংসা করে।
লোকালয়ে থাকে কেহ লোকহিত তরে।
এক প্রাণী অন্য প্রাণী বধি কেহ খায়।
ঘাস তৃণ ভক্ষি কেহ জীবন কাটায়।।

নিজ প্রয়োজনে নর পশুরে তাড়ায়।
হাল চাষ গাড়ি টানে বোঝাদি টানায়।।
যত কষ্ট রোগ শোক কিছু নাহি গণি।
মলমূত্র মধ্যে বাস দিবস রজনী।।
হস্তীকূলে জন্ম যদি শতেক বৎসর।
বহু কষ্টে পশু যোনি ভ্রমে নিরন্তর।
অবশেষে গো-যোনিতে জনম লভয়।
উত্তম জনম সেই পশু মধ্যে হয়।
গো-যোনির শেষে আর পশু-জন্ম নাই।
মনুষ্য যোনিতে জন্ম গো-যোনি ছাড়াই।।
মানব কূলেতে জন্ম চারি লক্ষবার।
অপরূপ সে বারতা কহি সবিস্তার।।
বনের মানুষ আছে বন মধ্যে আর।
পশুর মত আহারাদি পশুর আচার।।
আত্ম পর জ্ঞান নাই বন্যজন্তু খায়।
বিজাতি বলিয়া সবে কহে যে তাহায়।।
আত্ম পর জ্ঞান নাই বন্যজন্তু খায়।
বিজাতি বলিয়া সবে কহে যে তাহায়।।
তারপর তাহাড়িয়া জাতি জন্ম হয়।
নাগা কুকি সাঁওতালি আদি নাম কয়।
এ সকল বিজাতীয় মধ্যে গণ্য হয়।
মনোসুখে কত মত অভক্ষ্য ভক্ষয়।।
জন্ম হয় তারপর অধম পূলেতে।
শ্বপচ অশৌচ্য আদি নগণ্য ধরাতে।।
দেব ধর্ম্ম নাহি মানে হিংসা পরাায়ণ।
অপকর্ম্ম মদ্যপানে অভক্ষ্য ভক্ষণ।
তারপর শূদ্রকূলে লভয়ে সে জন্ম।
তথায় যে কর্ম্ম ভোগে কহি তার মর্ম্ম।।
কেহ বন্ধ কেহ খঞ্জ কর্ণে নাহি শুনে।
নপুংসক হয় কেহ, কেহ মরে ভ্রুণে।।
কুষ্ঠ রোগে ভোগে কেহ দু:খে কাটে কাল।
কদাকৃতি হয় কেহ ভুঞ্জয়ে জঞ্জাল।।
কারো বা স্বভাব ভাল হয় কর্ম্মমূলে।
তারপর জনমায় বৈশ্য জাতি কূলে।।
কর্ম্ম অনুরূপ ফল ভুঞ্জয়ে সবায়।
তারপরে ক্ষত্র কূলে জনমে ধরায়।।
যার সেই কর্ম্মফলে ফলভোগী হয়।
অবশেষে ব্রহ্মকূলে জনম লভয়।।
একাধিকবার নাহি হয় পুনর্জ্জন্ম।
উত্তর ব্রাহ্মণ জন্ম শ্রেষ্ঠ তার কর্ম্ম।।
ব্রাহ্মণ হইয়া উপনয়ন না হয়।
শূদ্রতুল সেই জন জানিহ নিশ্চয়।।
যজ্ঞ উপবীত ধরে দ্বিজ তার নাম।
বেদ বিদ্যা শিক্ষা করি বিপ্রের সুনাম।।
ব্রহ্মজ্ঞান হইলেই হয় সে ব্রাহ্মণ।
আপনা উদ্ধারে সেই লভি আত্মজ্ঞান।।
জন্মিয়া ব্রাহ্মণ কূলে আত্মা না উদ্ধারে।
পুন: সে চুরাশী লক্ষ যোনিপথে ঘুরে।।
বারবার জন্ম লাভে কত কষ্ট পায়।
শ্রীচরণ দাসে বলে নাহিক উপায়।।

……………………………………..
তত্ত্বরসামৃত জ্ঞানমঞ্জরী
-শ্রীশ্রী চরণ দাস

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!