ভবঘুরেকথা

গো-মড়ক ব্যাধি দূর করণ

তারক গোস্বামী আসে নড়াইল হতে।
সঙ্গেতে যাদবচন্দ্র আসিলেন পথে।।
বেলা শেষে দুেইজনে চলিছে ত্বরিত।
প্রকান্ড মাঠের মধ্যে হল উপস্থিত।।
হেনকালে সুবৃহৎ কুক্কুর আকারে।
গো-মড়ক ব্যাধি এল মাঠের ভিতরে।।
লক লক করে জিহবা যেন রক্ত ঝরে।
আভাষে যাদব দেখে ক্ষণমাত্র তারে।।
উচ্চকন্ঠে গোস্বামীজী বলে “হরি বল”।।
সঙ্গে সঙ্গে আঁখি তার করে ছল ছল।।
যাদবেরে বলে ডাকি “শুন মহাশয়।
কোন কিছু অদ্য তুমি দেখেছ হেথায়?”
যাদব কহিছে দীরে “শোন দয়াময়।
আভাষে দেখেছি যাহা বলি তব পায়।।
দীর্ঘ দেহ এক জীব কুকুরের প্রায়।
দেখিলাম অকস্মাৎ পালাইয়া য়ায়।।”
গোস্বামী কহিল “ঠিক বলিয়াছ তুমি।
স্পষ্টতর দৃশ্য বটে দেখিয়াছি আমি।।
গো-মড়ক ব্যাধি এই শুন মোর কাছে।
পাশ্ববর্তী গ্রামে রোগ প্রবেশ করেছে।।
হইবে বিষম দশা আর রক্ষা নাই।।
বহু গরু মারা যাবে শুন মোর ঠাঁই।।”
এইভাবে দুইজনে আলাপন করে।
গ্রামবাসী একজনে এল তথাকারে।।
যাদব তাহারে খুলে বলিলেন সব।
সেজন শোনে না কাণে ইতই গৌরব।।
কিছু পরে অনিচ্ছায় করে পরিচয়।
শুনিলেন শ্রীতারক সরকার যায়।।
সেইদিন সন্ধ্যাকালে বড় ঝ হ’ল।
বড় বড় বৃক্ষ কত তাহাতে ভাঙ্গিল।।
অন্ধকারে যাদবের পথ চলা ভার।
গোস্বামীর কিন্তু কষ্ট নহে একবার।।
গাঢ় অন্ধকারে তাঁর দৃষ্টি নাহি বাধে।
সারা পথ আসিলেন যথা নিরাপদে।।
পরদিন সেই গ্রামে গো-মড়ক হল।
সপ্তাহ মধ্যেতে প্রায় সব পশু মল।
গ্রামবাসী সবে বলে উপায় কি এখন?
চোখে দেখা নাহি যায় পশুর মরণ।।
যেই ব্যক্তি গোস্বামীরে উপেক্ষা করিল।
সব কথা এবে তার স্মরণ হইল।।
আদ্যোপান্ত সে বৃত্তান্ত কহিল সকলে।
সবে বলে হায় হায় কি কার্য্য করিলে।।
মহাসাধু সে তারক দৈব শক্তিধারী।
অন্যায় হয়েছে তারে অবহেলা করি।।
সবে মিলে চল যাই গোস্বামীর ঠাঁই।
এ বিপদে তাঁরে ধরে কুল যদি পাই।।
দৈবের ঘটনে দেখ প্রভু সেই দিন।
নড়াইল যেতে ছিল বিশেষ কারণে।।
গ্রামবাসী সবে করে চরণ বন্দনা।
বলে প্রভু দয়া বিনে পরান বাচে না।।
বিনয়ে গোস্বামী তবে কহিল বচন।
যাহা বলি সবে তাহা কর আয়োজন।।
মিষ্ট বিনা দুধ চাল একত্রে বাঁধিবে।
গোহালে রাখিয়া তাহা বালকে খাওয়াবে।।
সেই মত কাজ যবে গ্রামবাসী করে।
পরদিন গো-মড়ক গেল দুরে সরে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!