ভবঘুরেকথা

ডক্টর মীডের ওড়াকান্দী হইতে চির বিদায় গ্রহণ

তেরশ’ আঠাশ সালে মার্গশীর্ষ গত হলে
শীত ঋতু ধীরে ধীরে করে আগমন।
সাধক, সন্ন্যাসী, ধীর মহামতি মীড বীর,
বঙ্গ হতে করিলেন বিদায় গ্রহণ।।
হেথা কার্য্য শেষ হয় ফিরে নিজ দেশে যায়,
ওড়াকান্দী পরে স্মৃতি রহিল বাঁচিয়া।
তাঁহার জীবন কথা সংক্ষেপে বলিব হেথা
শুনিবেন ভক্তগণে আগ্রহ করিয়া।।
আঠার শ’ ছিষট্টি সালে মধুর শরৎ কালে
এডিলেড শহরেতে জন্ম হ’ল তাঁর।
পিতা তার পুরোহিত মহামতি শুদ্ধ চিত
মধুর মূরতি তার শুদ্ধ ব্যবহার।।
একাদশ বর্ষকালে পিতা তারে দীক্ষা দিলে
সেই হতে প্রাণে তাঁর এল নবনল।
শিক্ষাতে অগ্রহণী ছিল রাজবৃত্তি লাভ হল
অস্ত্র ও ভৈষজ্য বিদ্যায় ফলে সেই ফল।।
দীনের লাগিয়া প্রাণে ব্যথা তাঁর সর্ব্বক্ষণে
জাগাতে পতিত জনে করিল মনন।
মাতৃ-আজ্ঞা অনুসারে আসিল ভারত পরে
পতিত-তারণ বৃত্তি করিল গ্রহণ।।
কিভাবে আসিয়া বঙ্গে মিশে গুরুচাঁদ সঙ্গে
পূর্ব্ব ভাগে সেই সব করেছি বর্ণন।
এবে বলি কোন ভাবে মীড চলিলেন তবে
করিল জীবন তরে বিদায় গ্রহণ।।
কিছুকাল পূর্ব্ব হতে পত্নী তরে নানামতে
বলে ‘‘পতি নিজ দেশে চলহে এখন।
তাঁর তাড়নাতে তাই মীড ভাবে ‘‘দেশে যাই’’
সেই ভাবে পরে করে বিদায় গ্রহণ।।
পত্নী সহ গেল চলি সবে মিষ্ট কথা বলি
সকলের প্রাণে বাজে বিদায়ের সুর।
বিদায় সভায় কর ‘‘কহিলাম সুনিশ্চয়
ওড়াকান্দী স্মৃতি প্রাণে রবে ভরপুর।।’’
মীড নিজদেশে গিয়ে মনে বহুসুখী হয়ে,
ওড়াকান্দী ভালবাসে তার স্মৃতি প্রাণে ভাবে
ওড়াকান্দী দেখে যেন শয়নে স্বপনে।।
প্রভুজীর কাছে এসে বিদায় মাগিতে শেষে
বাক্য রুদ্ধ হল তাঁর নয়নেতে বারি।
অঞ্চল সিন্ধু নড়ে প্রভুর নয়ন ঝরে
দুই প্রভু করে করে রহিলেন ধরি।।
যাত্রার কিঞ্চিৎ আগে মীড গাঢ় অনুরাগে
মরমের কৃতজ্ঞতা জানা’ল প্রভুরে।
পত্র লিখি নিজ হাতে সব কথা লিখি তাতে
প্রভু হস্তে দিয়া গেল আপনার করে।।
অনুবাদ করি তাই এইখানে দিতে চাই
ইংরাজী ভাষায় মীড লিখিলেন যাহা।
মীডের ধারণা কিবা কোন ভাবে ঋণী কেবা
বর্ণনা করিব সুখে এবে আমি তাহা।।
‘‘বিদায়ের পূর্ব্ব ভাগে লিখি গাড় অনুরাগে
চিরতরে এই দেশে যেতেছি ছাড়িয়া।
প্রীতি আর কৃতজ্ঞতা এক সাথে দুই কথা
গুরুচাঁদ প্রতি আমি রাখিনু লিখিয়া।।
নমঃশূদ্র শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র ওড়াকান্দী গ্রাম ধন্য
হেথা এতদিন আমি করিলাম বাস।
ধনে ধর্ম্মে মহাবলী অসীম প্রতাপশালী
একমাত্র গুরুচাঁদ আমার বিশ্বাস।।
মিশনারী পুরোহিতে বহু স্থানে বহুপথে
সাহায্য করেছে নিজে শ্রীগুরুচরণ।
বহু বিঘ্ন বিপদেতে গুরুচাঁদ নিজ হাতে
মিশনারী গণে সদা করেছে রক্ষণ।।
তাঁহার সাহায্য ভিন্ন কিছু নাহি হত পূর্ণ
হেন উপকারী বন্ধু সেই মহাশয়।
অমিত তেজস্বী নর দুর-দৃষ্টি খরতর
প্রাচীনপন্থীর মধ্যে দেখা নাহি যায়।।
নমঃশূদ্র উদ্ধারিতে চেষ্টা তাঁর সর্ব্ব পথে
ইদার মহৎ প্রাণ পবিত্র মানব।
আমি ঋণী অবিরত ক্ষুদ্র কি মহৎ যত
তাঁর কাছে মহাঋণী নমঃশূদ্র সব।।’’
বিদেশী চিনিল তাঁরে তাই তাঁরে মান্য করে
তাঁর কাছে ঋণী বলি করিল স্বীকার।
অল্প-বুদ্ধি ভবে যারা কিছুই চেনে না তারা
দুষ্টু বুদ্ধি মহানন্দ একজন তার।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!