ভবঘুরেকথা

অসার সংসার

ধরিয়া মানব রূপ, নরাকারে বিশ্বভূপ,
নরাকারে করে নরখেলা।
নর-চক্রে ইহা করে, ঐশ চক্রে রাখে ধরে,
ধরা পরে করে যত লীলা।।
আপনি গৃহস্থ সাজি, গৃহ ধর্মে হ’য়ে রাজী,
আদর্শ দেখা’ল জনে জনে।
ক্রমে ক্রমে দিন যায়, জীবনের বেলা হায়!
যেতে চায় আঁধারের পানে।।
মনে মনে সমাচার, পেল প্রভু মহেশ্বর,
ত্রিদিবে কাঁদিছে দেবগণ।
ছাড়িয়া ধরার খেলা, মিলা’তে দেবের মেলা,
মনে মনে করে আয়োজন।।
পুত্র রূপে যারা এল, সকলেরে পাঠাইল,
নিজে প্রভু রহিলেন পাছে।
পতি পদে নিষ্ঠা মতি, সত্যভামা স্বয়ং সতী,
পতি মুখ চেয়ে বটে আছে।।
মহাপ্রভু এ সময়, দূরে কোথা নাহি যায়,
ভক্তসহ রহে মনোরঙ্গে।
ব্রহ্মচারী চারিজন, গুরুপদে দিয়ে মন,
সর্বদায় রহে প্রভু সঙ্গে।।
কে কে চারিজন হয়, শুন তার পরিচয়,
ইহা ভিন্ন আর বহু ছিল।
শ্রীনব কুমার রায়, “ঠাকুর” উপাধি কয়,
ইহা মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হ’ল।।
দীনবন্ধু যার নাম, কাশীয়ানী গ্রামে ধাম,
সরল সহজ সাধু জানি।
সে নীলরতন রায়, পূর্বে যার পরিচয়,
শিয়ালীতে হ’ল জানাজানি।।
নেপাল নামেতে যিনি, সরল সহজ জানি,
ওড়াকান্দি রহে সর্বক্ষণ।
শ্রীনব কুমার রায়, কাছে থাকে সর্বদায়,
বহু কীর্তি করিল দর্শন।।
এ চারিজনের সাথে, আলাপন দিবা রাতে,
করে প্রভু আপনার ভাবে।
কভু সবে ভালোবাসে, কভু মহারোষে রোষে,
মনে হয় এখনি নাশিবে।।
সংসার অসার কহে, বলে “আর নহে, নহে,
আর নাহি ধন কিছু চাই।
পাইয়াছি বহু ধন, আর নাহি চাহি ধন,
এখানে সব ধন ছাই।।”
নিদ্রা মোটে নাহি যায়, “অতন্দ্র” বসিয়া রয়,
ডাক দিয়া বলে সকলেরে।
“খড়গ হস্তে উগ্রচণ্ডা, বাম করে ধরে খাণ্ডা,
রাত্রি ভরে জীব হত্যা করে।।
যে জন ঘুমায়ে রয়, তার রক্ষা নাহি রয়,
খড়গে তারে কাটে উগ্রচণ্ডা।
যে জন জাগিয়া রয়, তার আর কিসে ভয়,
তারে নাহি কাটে কোন খাণ্ডা।।
সামাল সামাল তাই, নিদ্রাহীন থাকা চাই,
কাল নিদ্রা “কাল” ডেকে আনে।
যে জন রহিবে জেগে, কোন তাপে কোন রোগে,
তারে কভু ছোঁবে না মরণে।।”
মাঝে মাঝে প্রভু কয়, “প্রমথ আসিলে হয়,
তার লাগি’ আছি মাত্র বসে।
আগে যদি চলে যাই, আসিয়া প্রমথ ভাই,
মোরে বলে কাঁদিবে যে শেষে।।”
সংসারের আলাপন, নাহি করে দিয়ে মন,
প্রেমালাপ করে দিবারাতি।
যারে দেখে তারে কয়, “শোন শোন মহাশয়,
কোন ভাবে করে নমঃ জাতি।।
কুরুচি, কুনীতি যত, বলে প্রভু অবিরত,
পরে বলে বহু দুঃখ ভরে।
সমস্ত জীবন ভরে, বলিলাম ঘরে ঘরে,
তবু এই জাতি নাহি সারে।।”
দিবারাতি শোনে গান, যখনে যেখানে যা’ন,
শুধু তত্ত্ব হয় আলাপন।
শুধু বলে বারে বারে, “প্রমথ আসিলে ফিরে,
সুস্থ বটে হয় মোর মন।।
কিছু কাজ আছে বাকী, তার লাগি চেয়ে থাকি,
আর কিছু নাহি লাগে ভালো।
সঙ্গে মোর এল যারা, সকলে গিয়াছে তারা,
মন ডেকে বলে তুমি চল।।”
প্রভুর হয়েছে মন, তাই প্রমথরঞ্জন,
দেশ প্রতি করিলেন যাত্রা।
এল প্রমথরঞ্জন, প্রভুর জুড়া’ল মন,
আনন্দের নাহি আর মাত্রা।।
ইতিমধ্যে পরস্পর, শুন কিছু সমাচার,
প্রমথ রঞ্জন কিবা করে।
শ্রীগুরু চরিত কথা, নাশে দুঃখ নাশে ব্যাথা,
মহানন্দ বুঝিতে না পারে।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!