ভবঘুরেকথা

জমিদার কর্তৃক প্রজা উচ্ছন্ন বিবরণ।
পয়ার।

নিজন ভবনেতে এসে মন্ত্রীগণ লয়ে।
মন্ত্রণা করিল সবে একত্র হইয়ে।।
বড় জমিদার কহে মন্ত্রণা প্রবীণ।
বন্দোবস্ত সময়েতে তাহারা জামিন।।
যে সময়ে জমিদারী বন্দোবস্ত হ’ল।
শ্রেষ্ঠ প্রজা কৃষ্ণদাস জামিনাত ছিল।।
প্রজা দমনের তরে এই পরামিশ।
শরীক সাব্যস্ত করি করহ নালিশ।।
শরীকের অংশ নেয় কর নাহি দেয়।
কান্ট্রিবিউশনের নালিশ হ’ল সায়।।
তালুকের শরীক যে করিল সাব্যস্ত।
কর নাহি দেয় বলে করিল দরখাস্ত।।
কোনরূপ জবাব না দিলেন গোঁসাই।
তের হাজারের ডিক্রী হইলেন দায়ী।।
আদালতের পিয়ন আসিয়া বাটী’পরে।
অস্থাবর মাল বিক্রি করিলেন পরে।।
মজুমদার নিজ নামে খরিদ করিল।
অস্থাবর সম্পত্তি সকল লুটে নিল।।
ঠাকুরেরা পাঁচ ভাই হ’ল ফেরয়ার।
বিষয় সম্পত্তি কিছু না রহিল আর।।
সম্পত্তি লুঠিয়া নিল না হইল বাদী।
সব ছাড়ি পাঁচ ভাই এল ওঢ়াকাঁদি।।
প্রথম ভাদ্রেতে গোমস্তাকে মারিলেন।
শেষ ভাদ্রে পাঁচ ভাই বাটী ত্যাজিলেন।।
বিষয় সম্পত্তি যত সব দিল ছাড়ি।
রামদিয়া থাকিলেন সেনদের বাড়ী।।
সব লুঠে নিয়া নিল উত্তরের ঘর।
করিল কাছারী ঘর কাছারীর পর।।
সাত দিন পর সে কাছারী পুড়ে গেল।
দুইগোলা ধান্য পুড়ে ভস্মীভূত হ’ল।।
সূর্যমণি মজুমদার পার্বতীচরণ।
দুই ভাই করিলেন কথোপকথন।।
কি অধর্ম করিলাম ঠাকুরের বাটী।
মিথ্যা করি বিষয়াদি আনিলাম লুঠি।।
প্রজার বাসের ঘর করিনু কাছারী।
দাহ হ’য়ে গেল সব পাপ ছিল ভারি।।
সূর্যমণি বলে ভাই পার্বতীচরণ।
জমিদারী র’বে নারে পাপ আচরণ।।
পার্বতী বলিল দাদা এত’ যদি জান।
ভিটায় প্রজারে তবে ক’য়ে বলে আন।।
আশ্বিন কার্ত্তিক মার্গশীর্ষ পৌষমাস।
রামদিয়া সেনদের বাটী কৈল বাস।।
কখন কখন যাইতেন ওঢ়াকাঁদি।
কখনও সফলাডাঙ্গা যাইতেন যদি।।
দুই দিন কিম্বা একদিন মাত্র থাকি।
আনিতেন কোন দ্রব্য মূল্যবান দেখি।।
কতদিন পরে সেই রামদিয়া ছাড়ি।
থাকিলেন ভজরাম চৌধুরীর বাড়ী।।
চৌধুরীর বাসবাড়ী ওঢ়াকাঁদি গ্রাম।
পরম বৈষ্ণব জপে রাধাকৃষ্ণ নাম।।
প্রভুর মাতুল বংশ পঞ্চসহোদর।
রামচাঁদ স্বরূপ যে অতি গুণাকর।।
ঠাকুরেরা তার পিতৃস্বসার কুমার।
কয় ভাই সেই বাটী বাঁধিলেন ঘর।।
এক-আত্মা এক-প্রাণ তুল্য দশ ভাই।
পিস্তাত মামতাত ভ্রাতা ভিন্ন ভেদ নাই।।
বৈষ্ণবের শিরোমণি ছিল ভজরাম।
প্রভুদের সঙ্গে সদা করে হরিনাম।।
হরিকথা কৃষ্ণকথা হ’য়ে একতর।
কোন কোন নিশি হ’ত অই ভাবে ভোর।।
চৌধুরীর বাটী ছিল পঞ্চ সহোদর।
একা প্রভু আমভিটা বাঁধিলেন ঘর।।
তথা আসি পারিষদগণের মিলন।
রাত্রি দিবা করিতেন হরি-সংকীর্তন।।
তার পূর্ব অংশে ছিল পোদ্দারের বাটী।
চারি ভাই সেইখানে বাঁধিলেন ভিটি।।
অই বাটী পূর্বকালে বিশ্বনাথ ছিল।
সে জন বৈরাগী হ’য়ে বৃন্দাবনে গেল।।
এভাবে করিল সবে ওঢ়াকাঁদি বাস।
কবি বলে শুনিলে পাপের হয় নাশ।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!