ভবঘুরেকথা

ভক্ত মহেশ ও নরহরি শালগ্রাম
পয়ার

নড়া’ল কানাই আর ভক্ত সনাতন।
শ্যামাচরণ বিশ্বাস ভুক্ত বহুজন।।
ভকত ভবনে যান প্রভু জগন্নাথ।
সনাতন শ্যামের বাটীতে যাতায়াত।।
ফলসী নিজামকাঁদি আর তালতলা।
মত্ত মাতালের প্রায় হ’ল হরিবোলা।।
হরিশ্চন্দ্র মহেশ কনিষ্ঠ ভজরাম।
তিন ভাই হরিভক্ত সুন্দর সুঠাম।।
শ্রীউমাচরণ চণ্ডী বৈরাগী ঠাকুর।
হরিনাম করে তারা মধুর মধুর।।
নেহাল বেহাল হ’ল আর গঙ্গাধর।
হরিচাঁদে মানে তারা স্বয়ং ঈশ্বর।।
মহেশ প্রভুকে ল’য়ে নিজ বাড়ী যান।
নেহাল জমিতে গিয়া নিগড়ায় ধান।।
ঠাকুর কহিছে তুই আয়রে নেহাল।
নেহাল দাঁড়ায় যেন সুদাম কাঙ্গাল।।
নিড়ানিয়া ঘাস ছিল আইলের পরে।
তার এক তৃণ সাধু দশনেতে ধরে।।
আর এক গোছা সাধু ধরে স্কন্ধ পরে।
গলে জড়া’য়া ধরি কহে যোগাড় করে।।
অই ভাবে উঠিলেন ঠাকুরের নায়।
দণ্ডবৎ হইয়া পড়িল রাঙ্গা পায়।।
ঠাকুর উঠিল এসে মহেশের বাড়ী।
গড়াগড়ি যায় সবে প্রভু পদে পড়ি।।
উমাচরণের বাড়ী যান হরিশ্চন্দ্র।
যেন সবে হাতে পেল আকাশের চন্দ্র।।
দক্ষিণ দেশের ভক্ত ওঢ়াকাঁদি যায়।
পথে যেতে তিষ্ঠেন নিজামকাঁদি গায়।।
উমাচরণ বাড়ই মহেশ ব্যাপারী।
বারুণীর অগ্রে মহোৎসব এই বাড়ী।।
মতুয়ারা নাহি করে স্বজাতিকে গ্রাহ্য।
লৌকিক সামাজিকতা করেছেন ত্যজ্য।।
সামাজিক পুরোহিত হইয়েছে বন্ধ।
মহেশ বলেন সামাজির ভাগ্য মন্দ।।
মহেশের ভাইঝির মৃত্যু হ’য়েছিল।
পুরোহিত আনিবারে মহেশ চলিল।।
গ্রাম্যলোকে পুরোহিতে দিলে না আসিতে।
পুরোহিত নাহি এল সে শ্রাদ্ধ করিতে।।
পুরোহিত, নিবাসী নিজামকাঁদি গ্রাম।
স্বভক্তি অন্তরে দ্বিজ পূজে শালগ্রাম।।
পিছুভাগে দাঁড়াইল সে মহেশ গিয়া।
দ্বিজ গেল পূজামন্ত্র সকল ভুলিয়া।।
ঠাকুর বলেন একি হইল বালাই।
বিগ্রহ পূজিতে মন্ত্র হারাইয়া যাই।।
নরসিংহ শালগ্রাম পূজেন ব্রাহ্মণ।
মন্ত্রভুলে যাই কেন ভাবে মনে মন।।
ভাবিলেন অমঙ্গল হইবেক ভারি।
পিছুদিক চেয়ে দেখে মহেশ ব্যাপারী।।
একদৃষ্টে চেয়ে দেখে মহেশ পানেতে।
নরসিংহ শালগ্রাম মহেশের মাথে।।
মূর্তিমন্ত নরসিংহ শালগ্রাম শিরে।
মহাপ্রভু হরিচাঁদ তাহার ভিতরে।।
ব্রাহ্মণ বলেন আর নাহিক বিলম্ব।
চল যাই আগে গিয়া করি তব কর্ম।।
অমনি উঠিল দ্বিজ মহেশের নায়।
সমাধা করিল শ্রাদ্ধ আসিয়া ত্বরায়।।
মহেশ ঠাকুরে বলে স্বজাতি সমাজে।
মম বামপদ তুল্য কেহ নাহি বুঝে।।
উমাচরণের বড় আর্তি ঠাকুরেতে।
তার পুত্র যাদব পরম নিষ্ঠা তাতে।।
কয় ভাই এক আত্মা একযোগ প্রাণ।
হরিচাঁদে আত্ম স্বার্থ করিয়াছে দান।।
গোলোকচাঁদের পদে ছিল দৃঢ় ভক্তি।
মহানন্দ পাগলকে আত্মা দিয়া আর্তি।।
যতলোক ওঢ়াকাঁদি বারুণীতে যায়।
যাতায়াতে উমাচরণের বাড়ী রয়।।
সকলকে বলে সাধু হইয়া কাতর।
এই নিমন্ত্রণ র’ল বৎসর বৎসর।।
যত লোক ওঢ়াকাঁদি যান এই পথে।
ময়ালয় তিষ্ঠিবেন আসিতে যাইতে।।
এই দেশ জলা ছিল না ফলিত ধান।
মতুয়ারা আসাতে এ দেশের কল্যাণ।।
এদানি ফলেছে ধান তোমরা না খেলে।
এ দেশেতে সুফলেতে ধান্য নাহি ফলে।।
গৃহস্থের গৃহে যদি সাধুতে না খায়।
সে গৃহের আর বৃদ্ধি কখন না হয়।।
এক বর্ষ তোমরা না এলে এই বাড়ী।
ধান্য না হইলে মোরা মন্বন্তরে মরি।।
আসিও থাকিও সবে খাইও যাইও।
গৃহস্থের শ্রীবৃদ্ধি হইবারে দিও।।
পিতা পুত্র পরিজন সবে একমন।
আত্মা দিয়া সবে করে সাধুর সেবন।।
এইভাবে সাধু সেবে সবার পুলক।
হরিচাঁদ ভক্ত এরা ভুবন তারক।।
শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত রচিল তারক।
প্রেমানন্দে হরি হরি বলে সর্বলোক।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!