ভবঘুরেকথা
গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু চৈতন্য নিমাই বৈষ্ণব

মনসা কল্পিতা মুক্তি: নৃনাঞ্চোম্মোক্ষ সাধনী
স্বল্পলব্ধেন রাজ্যেন রাজানো মানবাস্তথা।।

(তথাহি শ্রীমদ্ভগবদ গীতায়াং)

যত মত অনুমানে করিবে ভজন।
ফল লাভ সে ভজনে অজগর স্তন।
জাতিধর্ম্ম দেবধর্ম্ম পরিত্যাগ করে।
সাধন যে করে সিদ্ধি দেহ পারবারে।
অপ্রত্যক্ষ ঈশ্বরেতে সাধ্য সিদ্ধি নয়।
সে সাধক মনে সদা পায় যমভয়।।
পাপ পূণ্য যমভয় অন্তরেতে থাকে।
ঐকান্তিক ভক্তিশূন্য হয় সে বিপাকে।।
মৃত্যুর সময় পায় সাধকের ফল।
মৃত্যুকালে গতি জীব দেহান্তে কেবল।।

যং যং ব্যাপি স্মরণ ভাবং ত্যজতান্তে কলেবরম্।
তং তমেবৈর্তি কৌন্তেয়: সদা তদ্ভাবভাষিত:।।

মনেন্দ্রিয় শুদ্ধ যার কৃষ্ণ প্রতি রবে।
মৃত্যুকালে তার মনে ভ্রান্তি দূর হবে।।
জ্ঞান ভিন্ন মনেন্দ্রিয়ে বোধ নাহি রয়।
একমনে সাধনের ফল কিসে হয়।।
আত্মজ্ঞান সহ বোধ নাহি মনেন্দ্রিয়ে।
ভেদজ্ঞানী সাধন যায় অন্তিমে ভুলিয়ে।।
আত্মার প্রত্যক্ষ নাহি ইন্দ্রিয় সহিতে।
এ হেন সাধনের কোন ফল নাহি তাতে।।
আত্মা নাহি জানি করে বাক্যেতে সাধন।
জলে ডুবি মরে অজ্ঞান বালক যেমন।।
আত্মা পঞ্চকোষে থাকে আবদ্ধ হইয়া।
বদ্ধ আত্মা সে সাধন করে কি লাগিয়া।।
আত্মা পঞ্চকোষ বদ্ধ কি কারণে রয়।
ক্রমেতে জানিবে সেই বিবরণচয়।।

অন্নং প্রাণো মনোবুদ্ধিরানন্দশ্চেতি পঞ্চতে।
কোষাস্তৈরাবত: স্বাত্মা বিস্মৃত্যা সংসৃতিং ব্রজেৎ।।

(তথাহি বেদান্ত পঞ্চদশ্যা ৫ম পরিচ্ছেদ)

অন্নময় প্রাণময় মনময় সহ।
বিজ্ঞানময় আনন্দময় এই পহ্চ লহ।।
উক্ত আবরণে আত্মাবদ্ধ হয়।
আত্মা আবরণ হেতু কোষ তারে কয়।।
মাকড়সা আত্মসূত্রে জাল নির্ম্মাইয়া।
তাহার ভিতরে থাকে ভোগের লাগিয়া।।
তেমনি মোহেতে আত্মা স্বরূপ ভুলিয়া।
বদ্ধ পঞ্চকোষে কর্ম্মভোগের লাগিয়া।
পঞ্চকোষ করে বলে কিরূপ লক্ষণ।
মনোযোগে সে আভাস করহ গ্রহণ।।
অন্নেতে যে বশ আত্মা থাকে অন্নগত।
অন্নময় কোষ বলে হয় সে কথিত।।
প্রাণে বশীভূত আত্মা প্রাণময় নাম।
ভ্রান্তিযুক্ত মন সঙ্গে বন্ধ অবরাম।।
মনে যাহা লয় আত্মা তাহা আচরয়।
মনময় কোষ বলি নাম তার হয়।।
বুদ্ধিকোষ যারে বলে সেই সে বিজ্ঞান।
জ্ঞানকোষ বলে আত্মা হয় বশমান।।
সংসারাদি সুখভোগ যে আনন্দে রত।
অনিত্য আনন্দকোষ সেই বটে খ্যাত।।

পরমাত্মা সে আনন্দে মগ্ন সদা রয়।
এই পঞ্চকোষ আত্মা আবদ্ধ থাকয়।।
বদ্ধ আত্মা সাধনেতে সিদ্ধ নাহি হবে।
অসিদ্ধ দেহেতে কৃষ্ণপ্রাপ্তি না ঘটিবে।।
অন্তিম কালেতে মায়াভ্রান্তি না জন্মায়।
সময় থাকিতে সেই করহ উপায়।।
আত্মঘাতী মহাপাপ স্মৃতিশাস্ত্রে কয়।
ইচ্ছামৃত্যু আত্মাঘাতী অনেকে বলয়।।
কর্ণ ভিন্ন কেহ মরিতে না পারে।
ইচ্ছামৃত্যু আত্মঘাতী হয় কি প্রকারে।।
পঞ্চকোষে বদ্ধ আত্মা সংসারেতে ঘুরে।
অনিত্য কর্ম্মের দ্বারা পরে পাপ ফেরে।।
উত্তম জন্মেতে আত্মা যে নাহি উদ্ধারে।
আত্মঘাতী হয় সেই জ্ঞানীর গোচরে।
আত্মঘাতী যদিস্যাৎ কৃষ্ণসেবা করে।
দেহান্তে চুরাশী লক্ষ ভ্রমণ সে করে।
বেদান্তে বলয়ে সবে পঞ্চকোষ হতে।
সৎগুরু আশ্রয় লয় আজ্ঞা উদ্ধারিতে।।

অম্বয় ব্যতিরেকাভ্যাং পঞ্চকোষ বিবেকত:।
স্বাত্মানং তত উদ্ধত্য পরং ব্রহ্ম প্রপদ্যতে।।

(তথাহি মাতৃভেদিকাতন্ত্রে শ্রীশিব বচনং)

গর্ভে পরমাত্মা বলে জীবের সদনে।
আত্মার উদ্ধার নাই আত্মজ্ঞান বিনে।।
হেন আত্মজ্ঞান লাভ চাহ করিবারে।
সদগুরু আশ্রয় কর নিষ্ঠা ভক্তিভরে।।

যে জানন্তি গুরুর্ব্বক্তাদাত্মাৎ চৈতন্যমিশ্বরং।
তে পুন: গর্ভশয়নে ন স্বপন্তি কদাপি হি।।

(তথাহি মাতৃভেদিকাতন্ত্রে পার্বতী প্রতি শিব বাক্যং)

সদগুরু মুখেতে আত্মজ্ঞঅন ইতিহাস।
যেবা শুনে তার নাহি হয় গর্ভবাস।।
সংসারেতে এক গুরু বলে সর্ব্বজনে।
শাস্ত্রেতে সদগুরু বলি লিখে কি কারণে।।
ইহা শুনি করি কারো মনে সন্দেহ যে হয়।
পাপভয়ে গুরুভেদ না করি নিশ্চয়।।
গুরুতত্ত্বে সে বিষয় জানিহ নির্ণয়।
কর্ম্মভেদে এক গুরু নানা মত হয়।

অনুগ্রহায় ভক্তানাং মানুষং দেহমািশ্রত:।
ভজনে তাদৃশী: ক্রিয়া মা শ্রুত্বা তৎপরো ভবেৎ।।

বৃন্দাবন ধামে কৃষ্ণ মানুষ রূপেতে।
ব্রজবাসীগণে ভজন করিলে যে মতে।।
সেই প্রেমভাব দেহে করিয়া স্বীকার।
নবদ্বীপে অবতীর্ণ শচীর কুমার।।
আপনি আচরি ভক্তি শিখাইল।
ভক্তগণ সেই প্রেম সবে বিলাইল।।
কৃপা করিলেন প্রভু শ্রীরূপে আপনি।
ব্রজভাব বশিখাইল শক্তি সঞ্চারিণী।।
শুন শুন ভাইসব করি নিবেদন।
শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত করহ পঠন।
বিচার করিয়া শ্রীরূপ গোস্বামীগণ।
গুরু মান্য করি কর শ্রীকৃষ্ণ ভজন।।

সিদ্ধিতে পাইবে কৃষ্ণ ভাবিও না আর।
ক্রমে ব্রজভাব দেহে হইবে সঞ্চার।।
শ্রীরাধিকা পরকীয়া রসাশ্রয় করি।
ভজ সেই শ্রীকৃষ্ণ দিবস শর্ব্বরী।।
প্রেমরসে কৃষ্ণ ভজন হয় সহজেতে।
কৃষ্ণ ভজনের শেষ নাহি এ জগতে।।
ভজ কৃষ্ণ কৃষ্ণ লহ কৃষ্ণনাম।
কৃষ্ণ-কৃপা হলে পাবে বৃন্দাবন ধাম।।
শ্রীকৃষ্ণ শ্রীজীব আদি বৈষ্ণব সহায়।।
প্রভুভক্তবৃন্দ সবে করি যে আকুতি।
এতদূর আত্মতত্ত্ব করিলাম ইতি।
প্রভু পাদপদ্ম হৃদে করি সদা আশ।
পাপ ক্ষমা মাগ সদা শ্রীচরণ দাস।।

……………………………………..
তত্ত্বরসামৃত জ্ঞানমঞ্জরী
-শ্রীশ্রী চরণ দাস

Related Articles

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • fakir aljja md rafiqul islam al kaderi , সোমবার ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ @ ১২:২৮ অপরাহ্ণ

    দেহ তক্তের বই প্রয়োজন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!