ভবঘুরেকথা
ফকির লালন শাহ্

ফকির লালনের বাণী : কৃষ্ণলীলা

১০১.
আগোর ও চন্দনাদি
মাখিয়ে নিরবধি
সেই দেহ ধূলায় অদ্ভুতই
দেখতে পাই।

১০২.
বৃন্দাবন যথার্থ বন
তুই বিনে হল রে এখন।

১০৩.
রাই সাগরে ডুবলো শ্যামরাই
তোরা ধর গো হরি ভেসে যায়।

১০৪.
রাই সাগরে তরঙ্গ ভারী
তাতে ঠাই নিতে কি পারবেন শ্রী হরি।

১০৫.
ছেড়ে রাজস্ব প্রেমের উদ্দেশ্য
ছিন্ন কাথা ঊরে গায়।

১০৬.
চার যুগে কেলে সোনা
শ্রী রাধার দাস হতে পারলো না।

১০৭.
তিনটি বাঞ্ছা অভিলাষ করে
জন্ম নিলেন প্রভু শচীর উদরে।

১০৮.
ব্রজলীলে এ কী লীলে।
কৃষ্ণ গোপী কারে জানাইলে।

১০৯.
যারে নিজশক্তিতে গঠলো নারায়ণ
আবার গুরু বলে ভজরে তার চরণ।

১১০.
একী ব্যবহার, শুনতে চমৎকার
জীবের বোঝা ভার ভূমণ্ডলে।

১১১.
নীলে দেখে কম্পিত ব্রজধাম
নারীর মান ঘুচাইতে যোগী হলো শ্যাম।

১১২.
দুর্জয় মানের দায়, বাঁকা শ্যামরায়
নারীর পাদপদ্ম মাথায় নিলে।

১১৩.
এ জগতের চিন্তা শ্রীহরি
আজ কি নারীর চিন্তায় প’লেন হরি।

১১৪.
অসম্ভব বচন, ভেবে কয় লালন
রাধার দাসখতে সাঁই বিকাইলে।

১১৫.
যে অভাবে কাঙ্গাল হলাম ওরে ছিদাম দাদা
আমার বেণু ধড়া মোহনচূড়া সব নিয়েছে রাধা।

১১৬.
খত্ব লিখলাম নিজ হস্তে
ললিতা বিশাখার সাথে
খত্বের সহি তাতে,
কিঞ্চিৎ ঋণ শোধ করলাম রে
খত্বে উসুল না দেয় রাধা।

১১৭.
শ্রী রাধার ঋণ শোধবার তরে
এলাম ডোর কপনি পরে
রাধার ঋণের তরে,
কাঁদি সে দিন দিন বলে
সে দিন না দেয় রাধা।

১১৮.
প্রেমের দায়ে মত্ত হয়ে
নিজ শিরে বাঁধা লয়ে
এলাম নিজ আলয়ে,
সিরাজ সাঁইজি কয়, ওরে লালন
বলো জয় জয় রাধা।

১১৯.
আর আমায় বলিস নারে শ্রীদাম ব্রজের কথা।
যার কারণ পেয়েছিরে ভাই প্রাণ ব্যথা।

১২০.
ছিলো মনের তিনটি বাঞ্ছা
নদীয়ায় সাধবো আছে ইচ্ছা প্রেমঋণে গাঁথা
সেই কারণে নদে ভুবনে জাগে হৃদয়লতা।

১২১.
ছিদামরে ভাই বলি তোরা
ফিরে যা ভাই আপন ঘরে কে বোঝে এই প্রাণে ব্যথা,
মনের কথা প্রাণের ব্যথা বলবো না তা।

১২২.
যার কারণে বইরে বাদা,
শোন বলিরে ছিদাম দাদা ও সে নন্দপিতা,
তাই ভাবে বলছে লালন ধন্যরে যশোদা।

১২৩.
যে দুঃখ আছে মনে ওরে ও ভাই ছিদাম।
সেই দুঃখের দুখ না হলো সুখ তাইতে নদেয় এলাম।

১২৪.
যদি দেখা পাইতাম হা রে
সকল কথা কইতাম তারে
ওরে কইতাম;
বড় আশা ও ভাই সখা
আমি তাই তো আসিলাম।

১২৫.
শোন রে ভাই ছিদাম নফর
দুঃখ শুনে কাজ নাই তোর
নাই আমার স্থান;
নূতন সাধন করব এখন
তাই তো ডোর-কোপিন পরলাম।

১২৬.
দেবের দেব বাঞ্ছে সে-ধন
কোথা গেলে পাব এখন
বল ভাই সুদাম;
লালন সেই আশায় আছে
আজ যদি তারে পেতাম।

১২৭.
বড় অকৈতব কথারে ওরে ছিদাম সখা।
ষড় ওইশ্বয’ ত্যাজ্য করে ধূলায় অংগ মাখা।

১২৮.
ব্রজপুরে নন্দের ঘরে
ছিলামরে ভাই কারাগারে,
তাইতে আমি এলাম ছেড়ে
নদীয়ায় এসে দেখা।

১২৯.
আগর চন্দন এখন
সব দিয়েছি রাধার কারণ,
এই অংগে সেই অংগের জীবন
আছে চন্দ্র মূখা।

১৩০.
রাধার প্রেমের ঋনের কাংগাল
বৃন্দাবন ত্যাগ করে নন্দলাল,
মনের দু:খে বলছে লালন
আমার কেবল রফা।

১৩১.
যার ভাবে আজ মুড়েছি মাথা।
সে জানে আর আমি জানি
আর কে জানে মনের কথা।

১৩২.
মনের কথা রাখবো মনে
বলবো না তা কারো সনে,
ঋণ শুধিব কতদিনে
সদাই আমার সেই চিন্তা।

১৩৩.
সুখের কথা বোঝে সুখি
দুঃখের কথা বোঝে দুখি।

১৩৪.
পাগল বোঝে পাগলের বোল
অন্যে কি বুঝিবে তা।

১৩৫.
যারে ছিদাম তোরা দুই ভাই
আমার বদহাল শুনে কাজ নাই।

১৩৬.
বিনয় করে বলছে কানাই
লালন পদে রচে তা।

১৩৭.
পারে কে যাবি তোরা আয় না ছুটে।
দয়াল চাঁদ মোর দিচ্ছে খেওয়া ভবের ঘাটে।

১৩৮.
দয়াল বড়ো দয়াময়
পারের কড়ি নাহি সে লয়।

১৩৯.
হরি নামের তরণী তাঁর
রাধা নামের বাদাম আর।

১৪০.
ভাগ্যবান যারা ছিলো
সেই তরীতে যে পার হলো।

১৪১.
মনরে সামান্যে কে তাঁরে পায়।
শুদ্ধপ্রেম ভক্তিরস
সেই তো দয়াময়।

১৪২.
বাঞ্ছা থাকলে সিদ্ধি মুক্তি
তারে বলে হেতুভক্তি।

১৪৩.
নিহেতু ভক্তিরতি
সবে মাত্র দীননাথের পায়।

১৪৪.
কৃষ্ণের আনন্দপুরে
কামী লোভী যেতে নারে।

১৪৫.
শুদ্ধভক্তি ভক্তের দ্বারে
সে চরণকমল নিকটে রয়।

১৪৬.
ব্রজের নিগুঢ়তত্ব গোঁসাই
শ্রীরূপের সব জানালে তাই।

১৪৭.
লালন বলে মোর বোধ নাই
সাধলে সে রসিক মহাশয়।

১৪৮.
যে প্রেমে সেই লীলা খেলা
ব্রজ গোপীর আশ্রয়।
সে প্রেম জানে কি সবাই।

১৪৯.
সেই প্রেমের করণ করা
কামের ঘরে নিষ্কাম যারা,
নিহেতু প্রেম অধর ধরা
গোপীর ঠাই।

১৫০.
প্রকৃত সেবার বিধান
গোপী ভিন্ন জানতে কে পান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!