ভবঘুরেকথা
ফকির লালন

ফকির লালনের বাণী : কৃষ্ণলীলা

১৫১.
গোপী প্রেমে হয় মহাজন
যাতে বাধা মদন মোহন
লালন বলে সেই প্রেম এখন
আমার ভাগ্যে নাই।

১৫২.
কৃষ্ণ বলে শোন লো গোপীগণ।
বসন চুরি করি কি কারণ
আমার শর্ত কর না পালন।

১৫৩.
এখন কেন কর ছলনা
রাধে তোমার বসন দেব না।

১৫৪.
তোমার মধ্যে আছে শ্রীমতি
কি গতিতে হবে মিলন।

১৫৫.
প্রেমে মত্ত হয়েছি তাতে
তুমি যারে পার মিলাতে।

১৫৬.
শোন লো বিন্দেদুতি
যার বসন তাকে দিব খুশি হয়ে মন।

১৫৭.
গোপীরা যখন উরঙ্গিনী হয়
তাই কি আর প্রাণে সয়।

১৫৮.
কোথা রাধে কোথা কৃষ্ণধন
কোথা রে তার সব সখীগণ
আর কতদিনে চলিলে সে চরণ পাই।

১৫৯.
যাঁর লেগে মুড়ি এহি মাথা
তাঁরে পেলে যায় মনের ব্যথা
কি সাধনে সে চরণে পাইব ঠাঁই।

১৬০.
তোরা যতো স্বরূপ গণেতে
বর দে গো কৃষ্ণচরণ পাই যাতে
অধীন লালন বলে কৃষ্ণলীলের অন্ত নাই।

১৬১.
ওগো বৃন্দে ললিতে।
আমি কৃষ্ণ হারা হলাম জগতে।

১৬২.
বনেরও পশু যারা
আমার থেকে ভালো তারা।

১৬৩.
এখন কেনে কাঁদছো রাধে নির্জনে।
ও রাধে, সেইকালে মান করেছিলে
সেই কথা তোর নাই মনে।

১৬৪.
ও রাধে কেনে করো মান
ও কুঞ্জে আসে না যে শ্যাম।

১৬৫.
জলে আগুন দিতে পারি বিন্দে আমার নাম
ও রাধে হাত ধরে প্রাণ সপেঁছিলে কেমনে।

১৬৬.
বিনে সূতায় মালা গেঁথে দেব শ্যামের গলে
লালন কয়, শ্যাম হয়ে বসবো রাধার ডানে।

১৬৭.
ঠেকে শিখলাম গো
কালো রূপ আর হেরবো না।

১৬৮.
পুরলাম কলঙ্কের হার
তবু তো ও কালার
মন তো পেলাম না।

১৬৯.
যখন চন্দ্রাবলি
অমনি রাখলো অলি
থাক সে দুইজনা;
শুনে রাধার বোল
লালনের বোল সরে না।

১৭০.
ব্রজলীলে এ কী লীলে।
কৃষ্ণ গোপী কারে জানাইলে।

১৭১.
যারে নিজশক্তিতে গঠলো নারায়ণ
আবার গুরু বলে ভজরে তার চরণ।

১৭২.
একী ব্যবহার, শুনতে চমৎকার
জীবের বোঝা ভার ভূমণ্ডলে।

১৭৩.
নীলে দেখে কম্পিত ব্রজধাম
নারীর মান ঘুচাইতে যোগী হলো শ্যাম।

১৭৪.
দুর্জয় মানের দায়, বাঁকা শ্যামরায়
নারীর পাদপদ্ম মাথায় নিলে।

১৭৫.
এ জগতের চিন্তা শ্রীহরি
আজ কি নারীর চিন্তায় প’লেন হরি।

১৭৬.
এ কী লীলে মানুষ লীলে দেখি গোকুলে।
হরিনন্দ ঘোষের বাদা মাথায় নিলে।

১৭৭.
রাখালের উচ্ছিষ্ট খায়
এ কী লীলে ব্রক্ষা দেখতে পায়।

১৭৮.
তাতে রুষ্ঠ হয় ভারি, না চিনিয়ে হরি
ধেনুবৎস হরে লয় পাতালে।

১৭৯.
কোন প্রেমে সে দীন দয়াময়
নারীর চরণ নিলে মাথায়।

১৮০.
মনের মানুষ নাইরে দেশে
সেইদেশে কেমনে থাকি।

১৮১.
সখি এইদেশে থেকে
ঝরে যে আমার আঁখি।

১৮২.
দেশের লোকের মন ভালো না
কৃষ্ণের কথা কইতে দেয় না।

১৮৩.
সদাই আমার মন উতালা
ঘরে মন বা কেমনে রাখি।

১৮৪.
জানো নারে প্রাণ-গোবিন্দ
আমার হয়েছে কপাল মন্দ।

১৮৫.
রাধার কতো গুণ
নন্দলাল তা জানে না।

১৮৬.
কিঞ্চিৎ জানলে তো
লম্পটে ভাব থাকতো না।

১৮৭.
করে সে পিরিতি নাই
তার সুরীতি কুরীতি ছলনা।

১৮৮.
যদি মন দিলে রাধারে
ওরে শ্যাম কুব্জারে স্পর্শ করতো না।

১৮৯.
ছার মানে মজে কৃষ্ণধনকে চেনো না।
থাক থাক ওগো প্যারী দুদিন বৈ যাবে জানা।

১৯০.
কৃষ্টেরে কাদালে তুমি যত
সে তোমায় কাঁদাবে তত।

১৯১.
যখন বলবে কোথা হরি
এনে দে গো সহচরি।

১৯২.
এখন যে সাধিলাম হরি
তা কি মনে জান না।

১৯৩.
বাড়াবাড়ি হলে ক্রমে
কুঘটিত আট নাই কর্মে।

১৯৪.
ছি ছি লজ্জায় প্রাণ বাঁচে না।
ভরা কলসের জল ঢেলে যেন পড়ে না।

১৯৫.
রাধে লো তোর করি রে মানা
কদমতলায় আর যেও না।

১৯৬.
কদমতলায় গেলে তোমার বসন
আর থুবে না।

১৯৭.
রাধে লো তোর করি রে মানা
কৃষ্ণের সঙ্গে প্রেম কর না।

১৯৮.
কৃষ্ণের সঙ্গে করলে প্রেম
সর্বসখি গোছবে না।

১৯৯.
রাধে লো তোর করি রে মানা
কালার সঙ্গে কথা বল না।

২০০.
নামটি আমার সহজ মানুষ সহজ দেশে বাস করি।
বলি সদা রাধা রাধা রাধার প্রেমে ঘুরিফিরি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!