ভবঘুরেকথা
ফকির লালন শাহ্

১.
চেতন মানুষ ধরে নফী এজবাত
লেহাজ করে জানতে হয় ।।

২.
দস্তখত নবুয়ত যাহার হবে।
কী করিবে ফানাফিল্লা সকল ভেদ জানা যাবে।।

৩.
পুসিদার ভেদ জানতে পারলে
নবুয়ত তার অমনি মেলে।।

৪.
কেতাব-কোরানে না পাইলে
দেল-কোরানে সব পাবে।।

৫.
কাজের বেলায় পরশমণি
অসময়ে তারে চেন না।।

৬.
যেদিনে সাঁই নৈরাকারে
ভেসেছিলেন একেশ্বরে
সেই অচিন মানুষ এসে তারে
দোসর হল তৎক্ষণা।।

৭.
নবীর আইন বোঝার সাধ্য নাই।।
যার যমন বুদ্ধিতে আসে বলে তাই।।

৮.
আয় গো যাই নবীর দীনে,
দীনের ডংকা বাজে শহর মক্কা মদীনে।।

৯.
তরিক দিচ্ছেন নবী যাহের বাতেনে,
যথা যোগ্য নায়েক চিনে।

১০.
রোযা আর নামাজ দেখতো এহি কাজ,
গুপ্ত পথ মেলে ভক্তির সন্ধানে।।

১১.
অমুল্য দোকান খুলেছে নবী,
যেই ধন চাইবি সেই ধন পাবি।

১২.
নবী বিনে পথে গোল হবে চারি মতে,
ফকির লালন বলে যেন গোলে পরিসনে।।

১৩.
নবী যে তনে করিল সৃষ্টি
সে তন কোথায় রাখিলে ।।

১৪.
পুরুষ কি সে প্রকৃতি কায়
সৃষ্টির সৃজন কালে ।।

১৫.
শরিয়ত আর মারেফত আদায়
নবীর হুকুম এই দুই সদাই
শরা শরিয়ত মারেফত নবুয়ত
বেলায়েত জানতে হয় গভীরই।।

১৬.
অপারের কান্ডার নবীজী আমার
ভজন সাধন বৃথা গেল আমার নবী না চিনে।

১৭.
নবী আউয়াল আখের বাতেন জাহের
কখন কোন রূপ ধারণ করেন কোনখানে।।

১৮.
আল্লাহ নবি দুটি অবতার
গাছ বীজ যে-রূপ দেখি সে প্রকার
সুবুদ্ধিতে কর তার বিচার
ও সে গাছ বড় কি ফলটি বড় নেও জেনে।।

১৯.
বলো কোথায় ছিল সে নবীর আসন
নবী পুরুষ কি প্রকৃতি আকার তখনে।।

২০.
আত্মতত্ত্বে ফাজেল যে জনা
সেই জানে সাঁইয়ের নিগূঢ় কারখানা

২১.
নবী দিনের রাসুল খোদার মকবুল।
ভুল করিলে মরবি প্রাণে হারাবি দুই কুল।।

২২.
নবী পাঞ্জা ওয়াক্ত নামাজ পড়ে
সেজদা দেয় সে গাছের পরে
সেই না গাছের ঝরে পড়ে ফুল।।

২৩.
সেই ফুলেতে মৈথুন করে
দুনিয়া করলেন স্থুল।।

২৪.
আহাদে আহাম্মদ বর্ত
জেনে কর তাহার অর্থ
হয় না যেন ভুল।।

২৫.
নবী না চিনলে সে কি খোদার ভেদ পায়।
চিনিতে বলেছেন খোদে সেই দয়াময়।।

২৬.
যে নবী পারের কান্ডারী
জিন্দা সে চারযুগের উপর,
হায়াতুল মুরসালিন নাম তার
সেই জন্য কয়।।

২৭.
কোন নবী হইলো ওফাত,
কোন নবী বান্দার হায়াত।
লেহাজ করে জানলে নেহাত
যাবে সংশয়।।

২৮.
মন কি ইহাই ভাবো আল্লাহ্ পাবো নবী না চিনে!
কারে বলিস নবী ও তার দিশে পেলিনে।।

২৯.
আমি বলবো কি সেই বৃক্ষের খুবই
তার এক ডালে দ্বীন আর ডালে দুনে।।

৩০.
নূরের পেয়ালা দিলেন খোদা
তারে খোদ অঙ্গ জেনে।।

৩১.
চার কারের উপরে দেখো
রাগ পাত্রে সে ছিল কে গো।।

৩২.
শুনি নবীর অঙ্গে জগৎ পয়দা হয়
সেই যে আকার কি হল তার
কে করে নির্ণয়।।

…………………………………..
চিত্র:
ফকির লালন সাঁইজির প্রকৃত কোনো ছবি নেই। লেখাতে ব্যবহৃত ছবিটি লালন ফকিরের কাল্পনিক একটি ছবি মাত্র। বহুল ব্যবহৃত হলেও এই ছবির সাথে লালন সাঁইজির আদৌ কোনো যোগসূত্র খুজে পাওয়া যায় না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!