ভবঘুরেকথা
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি

ফকির লালনের বাণী : প্রবর্তদেশ

৩০১.
মন আর তুমি এক জন হলে
অনায়াসে অমূল্য ধন মেলে।

৩০২.
একজনাতে আর একজন
হয় মুর্শিদরূপ প্রকাশনা।

৩০৩.
পাবার আশে অমূল্য ধন
জীবন যৌবন সব সমর্পণ।

৩০৪.
আশাসিন্ধুর কুলে লালন
আপন কিছু রাখলো না।

৩০৫.
আদি মক্কা এই মানবদেহে দেখ না রে মন ভেয়ে।
দেশ-দেশান্তর দৌড়ে কেন মরছোরে হাঁপিয়ে।

৩০৬.
মানুষ-মক্কা কুদরতিময়
উঠছে গায়েবী আওয়াজ সাততলা ভেদিয়ে,
সিংহ দরজায় একজন নূরী
নিদ্রাত্যাগী হয়ে।

৩০৭.
কুদরতিময় মানুষ মক্কা
গুরুপদে ডুবে থাকগা ধাক্কা সামলিয়ে,
চারদ্বারে চার নূরী ইমাম
মধ্যে সাঁই বসিয়ে।

৩০৮.
তিল পরিমাণ জায়গার উপর
গঠেছেন সাঁই আজবশহর,
মানুষের কদ দিয়ে
লাখ লাখ হাজী করতেছে হজ সেই জায়গাজমিনে।

৩০৯.
করেছেন সাঁই আজব বাক্কা
গঠেছেন এই মানুষ-মক্কা কুদরতী নূর দিয়ে
সিরাজ সাঁই কয় অবোধ লালন,
ঘরে আদি ইমাম মেয়ে।

৩১০.
খেয়েছি বেজাতে কচু না বুঝে।
এখন তেতুল কোথা পাই খুঁজে।

৩১১.
কচু এমন মান গোঁসাই
তারে কেউ চিনলে নারে ভাই,
খেয়ে হলাম পাগলপারা
চুপনি ঘরা চুলকাচ্ছে।

৩১২.
ভবে নিমবৃক্ষ তার
তাতে দিলে চিনির সার,
কখনো সে হয় না মিঠা
এমনি কচুর বংশ যে।

৩১৩.
যত সব ভেড়ুয়া বাঙ্গালে
কচুকে মান গোঁসাই বলে,
লালন ভেড়ো দেখল খেয়ে
ঐ কথায় কি মন মজে।

৩১৪.
ঘরে বাস করে সে ঘরের খবর নাই।
চার যুগে ঘর চাবি আঁটা
ছোড়ান পরের ঠাঁই।

৩১৫.
কলকাঠি যার পরের হাতে
তার ক্ষমতা কি এ জগতে,
লেনাদেনা দিবারাতে
পরে পরের ভাই।

৩১৬.
একি বেহাত আপন ঘরে
থাকতে রতন হয় দারিদ্ররে,
দেয় সে রতন হাতে ধরে
তারে কোথা পাই।

৩১৭.
ঘর ছেড়ে ঘর বাইরে খোঁজা
বয় সে যেমন চিনির বোঝা।

৩১৮.
পায় না রে সে চিনির মজা
বলদ য্যাছাই।

৩১৯.
পর দিয়ে পর ধরাধরি
সে পর কই চিনতে পারি,
লালন বলে হায় কী করি
না দেখি উপায়।

৩২০.
এই বেলা তোর ঘরের খবর
জেনে নে রে মন,
কেবা জাগে কেবা ঘুমায়
কে কারে দেখায় স্বপন।

৩২১.
শব্দের ঘরে কে বারাম দেয়
নিঃশব্দে কে আছে সদাই,
যেদিন হবে মহাপ্রলয়
কে কার করে দমন।

৩২২.
দেহের গুরু আছে কেবা
শিষ্য হয়ে কে দেয় সেবা,
যেদিনে তাই জানতে পাবা
কোলের ঘোর যাবে তখন।

৩২৩.
যে ঘরামি ঘর বেঁধেছে
কোনখানে সে বসে আছে,
সিরাজ সাঁই কয় তাই না খুঁজে
দিন তো বয়ে যায় লালন।

৩২৪.
ক্ষ্যাপা না জেনে তোর
আপন খবর যাবি কোথায়।

৩২৫.
আপন ঘর না বুজিয়ে
বাইরে খুঁজলে পড়বি ধাঁধায়।

৩২৬.
আমি সত্য নাহি হইলে
গুরু সত্য হয় কোনকালে।

৩২৭.
আমি যেরূপ দেখা না সেরূপ
দ্বীন দয়াময়।

৩২৮.
আত্মারূপে সেই অধর
সঙ্গী অঙ্গ অংশ কলা তার।

৩২৯.
ভেদ না জেনে বনে বনে
ফিরলে কী হয়।

৩৩০.
আপনার আপনি না চিনিয়ে
ঘুরবি কত এ ভুবনে।

৩৩৪.
ফকির লালন বলে অন্তিমকালে
নাহি রে উপায়।

৩৩৫.
আছে ভাবের তারা যে ঘরে।
সেই ঘরে সাঁই বাস করে।

৩৩৬.
ভাব দিয়ে খোলো ভাবের তালা
দেখবি সেই মানুষের খেলা।

৩৩৭.
ঘুঁচে যাবে মনের ঘোলা
থাকলে সে রূপ নিহারে।

৩৩৮.
ভাবের ঘর কী কুদরতি
ভাবের লন্ঠন ভাবের বাতি।

৩৩৯.
ভাবের কীভাব হয় একরতি
অমনি সে রূপ যায় সরে।

৩৪০.
ভাব নইলে ভক্তিতে কী হয়
ভেবে বুঝে দেখো মনরায়।

৩৪১.
যার যে ভাব সে জানতে পায়
লালন কয় বিনয় করে।

৩৪২.
মন তুই ভেডুয়া বাঙ্গাল জ্ঞানছাড়া।
সদরের সাজ করছো ভালো
পাছবাড়ি তোর নাই বেড়া।

৩৪৩.
কোথা বস্তু কোথারে সে ধন
চৌকি পাহারা দাও হামেশক্ষণ।

৩৪৪.
তোমার কাজ দেখি পাগলের মতন
কথায় দেখি কাঠফাঁড়া।

৩৪৫.
কোন কোণায় কি হচ্ছে ঘরে
একদিনও তা দেখলি নারে।

৩৪৬.
পিতৃধন তোর নিলো চোরে
হলি রে তুই ফোকতাড়া।

৩৪৭.
পাছবাড়ি আটোড়া কর
মন চোরারে চিনে ধরো।

৩৪৮.
লালন বলে নইলে তোর
থাকবে না মূল এক কড়া।

৩৪৯.
দেখো নারে দিনরজনী কোথা হতে হয়।
কোন পাকে দিন আসে ঘুরে
কোন পাকে রজনী হয়।

৩৫০.
রাত্রদিনের খবর নাইরে যার
কিসের ভজন সাধন তার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!