ভবঘুরেকথা
ফকির লালন

ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ

১৩০১.
লাভ লোকসান বৃদ্ধির দ্বারে
যাবে জানা।

১৩০২.
উজন ভেটেন পথ দুটি
দেখ নয়ন করে খাঁটি।

১৩০৩.
দেও যদি মন গড়াভাটি
কুল পাবানা।

১৩০৪.
অনুরাগ তরণী কর
ধার চিনে উজন ধর।

১৩০৫.
আপনারে আপন চিনেছে যে জন।
দেখতে পাবে সেই রূপেরই কিরণ।

১৩০৬.
সেই আপন আপন রূপ
সে বা কোন স্বরূপ।

১৩০৭.
স্বরূেপরই সেই রূপ
জানিও করণ।

১৩০৮.
সেই আপন মোকাম জানিয়ে প্রধান
যে জানে সেই মোকামের সন্ধান।

১৩০৯.
করে মোকামের সাধন সেই রসিক জন
উজ্জলা তার এই ত্রিভুবন।

১৩১০.
সেই ঘরের অন্বেষণ জানে যে জন
ঘরের মধ্যে আছে লতিফা ছয়জন।

১৩১১.
ঘরে আছে পাঁচ পাঞ্জাতন আত্মা পঞ্চজন
আত্মায় আত্মার করে ভজন।

১৩১২.
সেই রসিকের মন রসেতে মগন
সেইরূপ রসেতে যেজন দিয়েছে নয়ন।

১৩১৩.
ফকির লালন কয় আমি আমাতে হারাই
আমি বিনে আমার সকল অকারণ।

১৩১৪.
সদা সোহাগিনী ফকির সাধে কেউ কি হয়,
তবে কেন কেহ কেহ বেদাতসেদাত কয়।

১৩১৫.
যাঁর নাম সামা সেই তোরে গান কোরানেতে বলে এলহাম,
তা নইলে কি হাদিস কোরান রাগরাগিনী দেয়।

১৩১৬.
সৎ গান যদি বেদাত হতো কি সুরে ফেরেস্তা গাইতো,
চেয়ে দেখো নবীকে মেরাজের পথে নৃত্যগীতে নেয়।

১৩১৭.
আধখুট্টি পোন বাঙ্গালী ভাই ভাব না বুঝে গোল যে বাঁধাই,
গানের ভাব বিশেষ ফল দেবেন সাঁই লালন ফকির কয়।

১৩১৮.
উব্দ মানুষ জগতের মূল গোড়া হয়।
করণ তাঁর ভেদ ছাড়া ধরা সহজ নয়।

১৩১৯.
ডানে বেদ বামে কুরান মাঝখানে ফকিরের বয়ান
যাহার হবে সেই দিব্যজ্ঞান সেহি দেখতে পায়।

১৩২০.
জাহের নাই বেদ কুরানে আছে অযুদ ভজনে
ঐক্য হবে যার মনে প্রাণে নাম যার নবী কয়।

১৩২১.
এরফানি কুরান খুঁজে দেখতে পাবে তনের মাঝে
ছয় লতিফা কিরূপ সাজে জেকেরে উঠছে সদায়।

১৩২২.
নফির জোরে পাবি দেখা বেদে নাই যার চিহ্ন রেখা
সিরাজ সাঁই কয় লালন বোকা এসব ধোঁকাতে হারায়।

১৩২৩.
পান-কাউর দয়াল পাখি।
রাতদিন তারে জলে দেখি।

১৩২৪.
মাছ ধরা তার যেমন-তেমন
বিলের সেঁওলা ঠেলে সারাক্ষণ।

১৩২৫.
বিলের কাদা খঁচা সার হইল
সারা গায়ে কাঁদা মাখি।

১৩২৬.
কানাবগী মাছ ধরার লোভে
বেড়ায় সেই গাঙ্গের কূলে কূলে।

১৩২৭.
ঠোক দিয়ে মাছ তোল ডাঙ্গার পরে
তাকায় আড়াচোখি।

১৩২৮.
মাছরাঙ্গা নিহার করে পানির পরে
তাই তে সে মাছ ধরে।

১৩২৯.
লালন বলে সেই জায়গায় জাল ঠেলা
কার সাধ্য কি।

১৩৩০.
আমি বাঁধি কোন মোহনা।
আমার দেহ নদীর বেগ গেল না।

১৩৩১.
নদীতে নামি নামি আশা করি
মাঝখানে সাপের হাড়ি
কুমিরেই থানা।

১৩৩২.
ছয় কুমিরেই যুক্তি করে
ঐ নদীতে দিচ্ছে হানা।

১৩৩৩.
কালিদার পূর্ব ঘাটে
তিন নালে এক ফুল ফুটে
সে ফুল তুলতে যেও না।

১৩৩৪.
সে ফুল তুলি তুলি আশায়
ছয় পাগলের গোল গেল না।

১৩৩৫.
বে-যোগেতে স্নান করিতে যায়
সে তো মানুষ মরা খায়
সে ঘাটের সন্ধি জানে না।

১৩৩৬.
লালন কয় সে ঘাটে ইন্দ্ররিপু
আমি তাঁরে চিনি না।

১৩৩৭.
এই মানুষে সেই মানুষ আছে।
কত মুনি ঋষি
চার যুগ ধরে বেড়াচ্ছে খুঁজে।

১৩৩৮.
জলে যেমন চাঁদ দেখা যায়
ধরতে গেলে হাতে না পায়।

১৩৩৯.
তেমনি যে থাকে সদায়
আলেকে বসে।

১৩৪০.
অচিন দলে বসতি ঘর
দ্বিদল পদ্মে বারাম তার।

১৩৪১.
দল নিরূপণ হবে যাহার
সে তো দেখবে অনায়াসে।

১৩৪২.
আমার হলো কি ভ্রান্তি এ মন
বাইরে খুঁজি ঘরের ও ধন।

১৩৪৩.
সিরাজ সাঁই কয় ঘুরবি লালন
আত্মতত্ত্ব না বুঝে।

১৩৪৪.
এই বেলা তোর মনের মানুষ
চিনে সাধন কর।

১৩৪৫.
মানুষ পালাইবে দেহ ছেড়ে
পড়ে রবে শুন্য ঘর।

১৩৪৬.
ঘরের মধ্যে তোর তিন তেরো আর
কোন দরজা করেছো সার।

১৩৪৭.
ঘরের মধ্যে বাস্তুখুঁটি
সেইটা কর গে মূলাধার।

১৩৪৮.
ডুবে থাক গে রূপ সাগরে
বসত কর গে যুতের ঘরে।

১৩৪৯.
লালন বলে মনের মানুষ
চেনা হলো ভার।

১৩৫০.
সদা মন থাকো বাহুঁশ
ধরো মানুষ রূপ নিহারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!