ভবঘুরেকথা
ফকির লালন

ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ

১৪০১.
শমন ভয় এড়াবে শান্তি পাবে
পাপের পথে না করবে গমন।

১৪০২.
জাল ফেলে মাছ ধরবে যখন।
কাতলা পোনা চুনো-চানা
কেউ বাকি থাকবে না তখন।

১৪০৩.
তুই না ডাকলে ডাকবে তোরে
পারে যাবিরে অবোধ ছেলে।

১৪০৪.
যাঁর বলে তুই ডাকিস মোরে
সেই মানুষকে আন গে ধরে,

১৪০৫.
এবার তিনজন মিলে নৌকায় চড়ে
পারে যাবোরে কৌতুহলে।

১৪০৬.
টিকিট বিহিন দলিল হলে
ডিগ্রি হয না কোনো কালে
১৪০৭.
লালন ফকির তাইতে বলে
ঐ টিকিট নে হৃৎকমলে।

১৪০৮.
হাডুম হুডুম দাডুম দডুম
লাফালাফি করছো এখন।

১৪০৯.
আসছে শমন খেপলা ফেলে
করবে তুলে খালুই পূরণ।

১৪১০.
অগাধ জলে হেসে ভেসে
উল্লাসে কাল করছো যাপন।

১৪১১.
রাজার হুকুম হলে আর কি চলে
শুনবে না সে কারো বারণ।

১৪১২.
সংসার জলে নানাবিধ
হইয়াছে মীনের গঠন।

১৪১৩.
ও তাই ভাবছি আমি জগত স্বামী
একটা কেউ নহে বিস্মরণ।

১৪১৪.
অধীন লালনের এই নিবেদন
ধরি সিরাজ সাঁইয়ের চরণ।

১৪১৫.
শমন ভয় এড়াবে শান্তি পাবে
পাপের পথে না করবে গমন।

১৪১৬.
হাবুডুবু করে মলো তবু কাদা
গায়ে মাখল না।

১৪১৭.
পানি-কাউর দয়াল পাখি
রাতদিন তারে জলে দেখি।

১৪১৮.
আমার চিন্তাজ্বর তো
গেল না।

১৪১৯.
এককুল ভেঙ্গে দুকুল হইল
সেই গাঙ্গে লগি ঠাঁই না পাইল।

১৪২০.
সেই জায়গায় নাও ডুবিল
মাস্তুল জাগল না।

১৪২১.
সে গাঙ দুইটা চলতি ছিল
কত সাধু নাও বাহিল।

১৪২২.
মাঝখানে তার চর পড়িল
লালন বলে নদীর বেগ গেল না।

১৪২৩.
মন-চোরারে ধরবি যদি মন।
ফাঁদ পাতো আজ ত্রিপিনে
অমাবস্যা পূর্ণিমাতে বারামখানা সেইখানে।

১৪২৪.
ত্রিপিনের তিরধারা বয়
তার ধারা চিনে ধরতে পারলে হয়।

১৪২৫.
কোন ধারায় তার সদাই বিহার
হচ্ছে ভাবের ভুবনে।

১৪২৬.
সামান্যে কি যায় তারে ধরা
আট পহরি দিতে হয় পাহারা।

১৪২৭.
কখন সে ধারায় মেশে
কখন রয় নির্জনে।

১৪২৮.
শুক্লপক্ষে ব্রহ্মাণ্ডে গমন
কৃষ্ণপক্ষে যায় নিজ ভুবন।

১৪২৯.
লালন বলে সেরূপ নীলে
দিব্যজ্ঞানী সেই জানে।

১৪৩০.
আপ্ততত্ত্ব সাধন করে জ্ঞানীজন বসে রয়।
সেই রাগে রে মন সে সাধন সেরে বয়।

১৪৩১.
ভবের আসন করে শ্রীপটে
শুভযোগ লাগে রে জাহাজ রূপচাঁদের ঘাটে।

১৪৩২.
তারের খবর ইষকপটে
সহজ হলে হয় উদয়।

১৪৩৩.
করে একি রসের কল
শুভযোগে ডেকে বলে উজান বাঁকে চল।

১৪৩৪.
চল চল কল হলো বিকল
সহে যেতে ধাক্কা খায়।

১৪৩৫.
নিহার যদি তীর ছুটে
যেতে রে মন পিছল ঘাটে তরঙ্গ উঠে।

১৪৩৬.
লালন বলে মোহর এঁটে
ঠিক রাখ রাগের তলায়।

১৪৩৭.
প্রেমের দাগরাগ বাঁধা যার মনে।
সে প্রেম অহিকে জানে না
জানে রসিক জনে।

১৪৩৮.
ও যার শতদল কমলে
ত্রিবেনীতে তুফান খেলে।

১৪৩৯.
ও ভাটায় যায় না সে
চলে উজান কোণে।

১৪৪০.
সে প্রেম করিতে আশা কর মনে
আবার সাধ্য কর গোপীগণে।

১৪৪১.
লালন কয় লীলা নেই যেখানে
সে চলে নিত্য ভুবনে।

১৪৪২.
যাঁরে প্রেমে বাধ্য করেছি,
তারে কি আর আগলে রেখেছি।

১৪৪৩.
যাবার সময় বলে যাবে
থাকতে বললে থাকতে হবে।

১৪৪৪.
নতুবা সে ফাঁকি দেবে
আমি দম দিয়ে দম মেনেছি।

১৪৪৫.
দমের সঙ্গে হাওয়ার প্রণয়
দম ধরিলে সে ধরা দেয়।

১৪৪৬.
আমি ঘরের দ্বার বন্ধ করে
খেদ মিটায়ে বসেছি।

১৪৪৭.
হেসে হেসে কমল তুলেছি
মনপ্রাণ যাঁরে সঁপেছি।

১৪৪৮.
লালন বলে কথায় কী মানুষ
মেলে করণকারণেই সেরেছি।

১৪৪৯.
তা কি সবাই জানতে পায়।
রূপেতে রূপ আছে ঘেরা কে করে নির্নয়।

১৪৫০.
তীর্থ গোদাবরীর তীরে
রামানন্দ দেখেলেন তারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!