ভবঘুরেকথা
ফকির লালন সাঁই

ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ

১৫০১.
হলো রে একি দশা
সর্বনাশা মনের ভোলায়,
ডুবলো ডিঙ্গি নিশ্চয় বুঝি
জন্মনালায়।

১৫০২.
বিধাতা দেয় রে বাজি
কি বা মন পাজি ফেরে ফেলায়,
বাও না বুঝে বায় তরণী
ক্রমে তলায়।

১৫০৩.
কলুর বলদ যেমন
ঢাকা নয়ন পাকে চালায়,
লালন প’লো তেমনি পাকে
হেলায় হেলায়।

১৫০৪.
আমি কী করিতে কী করিলাম,
দুগ্ধেতে মিশালেম চোনা
দেখে শুনে জ্ঞান হলো না।

১৫০৫.
মদন রাজার ডঙ্কা ভারি
হলাম তার আজ্ঞাকারি।

১৫০৬.
যাঁর মাটিতে বসত করি
চির দিন তারে চিনলাম না।

১৫০৭.
রাগের আশ্রয় নিলেরে মন
কী করিতে পারে মদন।

১৫০৮.
আমার হলো কামলোভী মন
মদন রাজার গাঁঠরি টানা।

১৫০৯.
উপর হাকিম একদিনে
কৃপা করলে নিজগুণে।

১৫১০.
দ্বীনের অধীন লালন বলে
গেল না মনের দোটানা।

১৫১১.
খাকে গঠিল পিঞ্জরে
এ সুখপাখি আমার কিসে গঠেছে রে।

১৫১২.
পাখি পুষলাম চিরকাল, নীল কিংবা লাল
একদিনও দেখলাম না সে রূপ সামনে ধরে।

১৫১৩.
আবে খাকে পিঞ্জিরার বর্ত, আতশে হইল পোক্ত
পবন আড়া সেহি ঘরে।

১৫১৪.
আছে সুখ পাখি সেথায়, প্রেমের শিকল পায়
আজব খেলা খেলছে গুরু গোঁসাই মেরে।

১৫১৫.
কেমনরে পিঞ্জিরার ধ্বজা, নিচে উপর নয় দরজা
কুঠরি কোঠা থরে থরে।

১৫১৬.
পঞ্চ কুঠুরি তাঁর, আছে মূলাধার
মূলাধারের মূল সেই শূন্য ভরে।

১৫১৭.
করে আজব কারিগরি, বসে আছে ভাবমিস্ত্রি
সেই পিঞ্জিরার বাহিরে।

১৫১৮.
পাখি আসা যাওয়ার দ্বার, আছে সন্ধির পর
ফকির লালন বল কেউ কেউ জানতে পারে।

১৫১৯.
হরি কোনটা তোমার আসল নাম
শুধাই তোমারে।

১৫২০.
কোন নামে ধরে ডাকলে পরে
পাওয়া যাবে তোমারে।

১৫২১.
তুমি চৈতন্য রূপে কি থাক চুপে চেপে
কিবা তুমি কিরূপে রও অন্ধকূপে।

১৫২২.
আমি জানতে পারলে সেবাদাসী
হব হরি এবারে।

১৫২৩.
তুমি ব্রজদ্বারের রাম আর বৃন্দাবনের শ্যাম
শত মুখে শুনি তুমি এসে ভগবান।

১৫২৪.
নামটি তোমার অধর ধরা
কোন নামটি ভক্তের দ্বারে।

১৫২৫.
তুমি কোন ভাবেতে রও কিসে ধেনু চড়াও
কখন কোন ভাবে থাক কোনরূপের আশ্রয়।

১৫২৬.
কোনটি তোমার নামের গুণ হে
প্রকাশিত ঘরে ঘরে।

১৫২৭.
তোমার অনন্ত নাম হয় তুমি কোন জায়গার গোঁসাই
নিরাকারে কি হও তুমি কোন জায়গার কানাই।

১৫২৮.
ফকির লালন বলে কাতর দেলে
কোন নাম রয় আমার তরে।

১৫২৯.
যে আমায় পাঠালে এহি ভাবনগরে
মনের আঁধার হরা চাঁদ।

১৫৩০.
সেই যে দয়াল চাঁদ
আর কতোদিনে দেখবো তাঁরে।

১৫৩১.
কে দিবেরে উপাসনা
করিরে আজ কী সাধনা।

১৫৩২.
কাশীতে যাই কি কাননে থাকি
আমি কোথায় গেলে পাবো সে চাঁদেরে।

১৫৩৩.
মনফুলে পূজিব কি
নামব্রক্ষ রসনায় জপি।

১৫৩৪.
কিসে দয়া তাঁর হবে পাপীর পর
অধীন লালন বলে তাইতে প’লাম ফেরে।

১৫৩৫.
আমি কোন সাধনে তারে পাই।
আমার জীবনের জীবন সাঁই।

১৫৩৬.
শাক্তশৈব বৈরাগ্যের ভাব
তাতে যদি হয় চরণ লাভ।

১৫৩৭.
তবে দয়াময় কেন সর্বদায়
বিধি বেদীভক্তি বলে দুষিবে তাই।

১৫৩৮.
সাধিলে সিদ্ধির ঘরে
শুনিলাম সেও পায় না তরে।

১৫৩৯.
সাধুর যে মুক্তি পেল সে ব্যক্তি
ঠকে যাবে অমনি শুনি রে ভাই।

১৫৪০.
গেল না রে মনের ভ্রান্ত
পেলাম না সে ভাবের অন্ত।

১৫৪১.
তাই বলে মূঢ় লালন ভবে এসে মন
কী করতে না জানি কী করে যাই।

১৫৪২.
আমি কোথায় ছিলাম
আবার কোথায় এলাম ভাবি তাই।

১৫৪৩.
একবার এসে এই ফল আমার
জানি আবার ফিরে কোথায় যাই।

১৫৪৪.
বেদ পুরাণে শুনি সদায়
কীর্তিকর্মা আছে একজন জগৎময়।

১৫৪৫.
আমি না জানি তার বাড়ি কোথায়
আমি কি সাধনে তারে পাই।

১৫৪৬.
যাদের সঙ্গে করি কারবার
তারাই সব বিবাগী হলো রে আমার।

১৫৪৭.
লুটলো রে এই সাধুর ভান্ডার
আমায় ঘিরে উনপঞ্চাশ বাও।

১৫৪৮.
কে বা আমার আমি বা কার
মিছে ধন্ধবাজি এ ভব সংসার।

১৫৪৯.
অধীন লালন বলে হইলাম অপার
আমার সাথের সাথী কেহ নাই।

১৫৫০.
কেন খুঁজিস মনের মানুষ বনে সদায়।
এবার নিজ আত্মা যে রূপ আছে
দেখ সেই রূপেতে দ্বীন দয়াময়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!