ভবঘুরেকথা
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি

ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ

২০১.
কি করি ভেবে মরি মনমাঝি ঠাহর দেখিনে।
ব্রহ্মা আদি খাচ্ছে খাবি
ঐ ভবপার যাই কেমনে।

২০২.
মাড়ুয়াবাদীর এমনি ধারা
মাঝদরিয়ায় ডুবিয়ে ভারা।

২০৩.
দেশে যায় পরিয়ে ধড়া
ঐ দশা মোর ভাব না জেনে।

২০৪.
শক্তিপদে ভক্তিহারা
কপট ভাবের ভাবুক তারা।

২০৫.
মন আমার তেমনি ধারা
ফাঁকে ফেরে রাত্রদিনে।

২০৬.
মাকাল ফলটি রাঙ্গাচোঙ্গা
তাই দেখে মন হলি ঘোঙ্গা।

২০৭.
কিসে পাবি ত্রাণ সংকটে ঐ নদীর তটে।
গুরু চরণ তরি তারণ ধরবে অকপটে।

২০৮.
মাঝে মাঝে আসে বান
প্রাণে রাখো ভক্তির জ্ঞান।

২০৯.
যেন হইওনা রে অজ্ঞান
রবি যে বসলো পাটে।

২১০.
রিপু ছয়টা কর বশ
ছাড় বৃথা রঙ্গ রস।

২১১.
কাজেতে হইলে অলস
পড়ে রবি পার ঘাটে।

২১২.
দেহ ব্যাধির সিদ্ধির
পদ্মপত্রে যথা নির,
জীবন তথা হয় অস্থির
কোন সময় কিবা ঘটে।

২১৩.
সিরাজ সাঁই বলেরে লালন
বৈদিকে ভুলনা মন।

২১৪.
এক নিষ্ঠা মন কর সাধন
বিকার তোমার যাবে ছুটে।

২১৫.
কারণ নদীর জলে
একটা যুগল মীন খেলছে নীরে।

২১৬.
ঢেউয়ের উপর ফুল ফুটেছে তাঁর উপরে
চাঁদ ঝলক মারে।

২১৭.
চাঁদ চকোর খেলে যখন
একটা যুগল মীন মিলন হয় তখন।

২১৮.
তাঁর উপরে সাঁইয়ের দরশন
সুধা ভাসে মৃণাল তীরে।

২১৯.
শুকনা জমিন জলে ভাসে
আজব ধন্য লীলা গঙ্গা আসে।

২২০.
সে নিরন্তর মীন রূপে ভাসে
কুম্ভ ভাসে তীর্থ তীরে।

২২১.
সুধা গরল এক সহিত ঝাপা
যেমন গুড়ের সঙ্গে মিঠামাখা।

২২২.
কে ভাসায় ফুল প্রেমের ঘাটে।
অপার মহিমা তার ফুলের বটে।

২২৩.
যাতে জগতের গঠন
সে ফুলের হল না যতন।

২২৪.
বারে বারে তাই তে ভ্রমণ
ভবের হাটে।

২২৫.
মাস অন্তে ফোটে সে ফুল
কোথায় গাছ তার কোথায় রে মূল,
জানিলে তাহার উল
ঘোর যায় ছুটে।

২২৬.
গুরু-কৃপা যার হইল
ফুলের মূল সেই চিনিল।

২২৭.
কেন ভ্রান্ত হওরে আমার মন।
ত্রিবেণী নদীর কর অন্বেষণ।

২২৮.
নদীতে বিনা মেঘে বান বরিষণ হয়
বিনা বায়ে হামাল ওঠে মৌজা ভেসে যায়।

২২৯.
নদীর হিল্লোলে মরি হায়
না জানি গতি কেমন।

২৩০.
নদীর ক্ষণেক ক্ষণেক হয় রে উৎপত্তি
কলিন্দে গঙ্গা নদী প্রবল বেগবতী।

২৩১.
কেউ হেলায় হেলায় পার পেয়ে যায়
শুকনা ডাঙ্গায় কারো মরণ।

২৩২.
নদীতে মাঝে মাঝে উঠছে রে ফেপি
তাতে পড়লে কুটো হয়রে দুটো এতই বেগবতী।

২৩৩.
কে গো জানবে তাঁরে সামান্যেরে।
আজব মীনরপে সাঁই
খেলছে নীরে।

২৩৪.
জগতজোড়া মীন অবতার
কারণ্য বারির মাঝার।

২৩৫.
মনে বুঝে কালাকাল, বাঁধিলে বান্ধাল
অনায়াসে সে মীন ধরতে পারে।

২৩৬.
আজব লীলা মানুষগঙ্গায়
আলোর উপর জলময়।

২৩৭.
যেদিন শুকাবে জল, হবে সব বিফল
সে মীন পালাবে শূন্যভরে।

২৩৮.
মানুষগঙ্গায় গভীর অথৈ
থৈ দিলে তায় রসিক ভাই।

২৩৯.
জানগে পদ্ম নিরূপণ।
কোন পদ্মে জীবের স্থিতি
কোন পদ্ম কেমন বরণ।

২৪০.
আড়া পদ্মের কুড়ো ধরে
ভুঙ্গরতি চলেফেরে।

২৪১.
সে পদ্মে কোন দলের পরে
বিকশিত হয় কখন।

২৪২.
গুরুমুখে পদ্মবাক্য
হৃদয়ে যার হয়েছে ঐক্য।

২৪৩.
আজব আয়নামহল মণি গভীরে।
সেথা সতত বিরাজে সাঁইজি মেরে।

২৪৪.
পূর্বদিকে রত্নবেদি
তার উপরে খেলছে জ্যোতি।

২৪৫.
তারে যে দেখেছে ভাগ্যগতি
সচেতন সব খবরে।

২৪৬.
জলের ভিতর শুকনা জমি
আঠারো মোকাম তাই কায়েমি।

২৪৭.
নিঃশব্দে শব্দের উদগামী
যা যা সেই মোকামের খবর জান গা।

২৪৮.
মুণিপুরের হাট মনোহরি কল
তেহাটা ত্রিবেণী তাহে বাঁকা নল।

২৪৯.
মাকড়শার জালে বন্দী সে জল
লালন বলে সন্ধি বুঝবে কেরে।

২৫০.
দেল দরিয়ায় ডুবে দেখ না।
অতিঅজান খবর যাবে জানা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!