ভবঘুরেকথা
ফকির লালন সাঁই

ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ

১.
মনের মানুষ খেলছে দ্বিদলে।
যেমন সোদামিনি মেঘের কোলে।

২.
রূপ নিরূপন হবে যখন
মনের মানুষ দেখবি তখন।

৩.
জনম সফল হবেরে মন
সেরূপ দেখিলে।

৪.
আগে না জেনে উপাসনা
আন্দাজি কি হয় সাধনা।

৫.
মিছে কেবল ঘুরে মরা
মনের গোলমালে।

৬.
সেই মানুষ চিনলো যারা
পরম মহত্ন তারা।

৭.
সামান্যে কি তার মর্ম জানা যায়।

৮.
হৃদকমলে ভাব দাঁড়ালে
অজান খবর আপনি হয়।

৯.
দুগ্ধে জলে মিশাইলে
বেছে খায় রাজহংস হলে,
কারো সাধ যদি হয় সাধন বলে
হয় সে রাজহংসের ন্যায়।

১০.
মানুষে মানুষের বিহার
মানুষ ভজলে দৃষ্ট হয় তার।

১১.
সে কি বেড়ায় দেশ দেশান্তর
পীড়েই পেড়োর খবর পায়।

১২.
পাথরেতে অগ্নি থাকে
বের করতে হয় ঠুকনি ঠুকে।

১৩.
বড় নিগুমেতে আছেন গো সাঁই।
যেখানেতে আছে মানুষ
সেথা চন্দ্র সূর্যের বারাম নাই।

১৪.
চন্দ্র সূর্য যে গড়েছে
ডিম্ব রূপে সেই ভেসেছে।

১৫.
একদিনে হিল্লোল এসে
নিরঞ্জনের জন্ম হয়।

১৬.
হাওয়াদ্বারি দেল কুুঠরি
মানুষ আছে শূণ্যপুরী।

১৭.
শূণ্যকারে শূণ্য বারি
মানুষ রয় মানুষের ঠাঁই।

১৮.
আত্মতত্ত্ব পরমতত্ত্ব
বৃন্দাবনে নিগূঢ় অর্থ,
লালন বলে নিগূঢ় পদার্থ
সেই ধামেতে মানুষ নাই।

১৯.
সোনার মানুষ ঝলক দেয় দ্বিদলে।
যেমন মেঘেতে বিজলী খেলে।

২০.
দল নিরূপন হয় যদি
জানা যায় সে রূপনিধি,
মানুষের করণ হবে সিদ্ধি
সেইরূপ দেখিলে।

২১.
গুরুকৃপার তুল্য যারা
নয়ন তাদের দীপ্তকারা,
রূপআশ্রিত হয়ে তারা
ভবপারে যায় চলে।

২২.
স্বরূপ রূপে রূপের কিরণ
স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল ভুবন,
সিরাজ সাঁই কয় অবোধ লালন
চেয়ে দেখ নয়ন খুলে।

২৩.
তা কি পারবি তোরা জ্যান্তে মরা সেই প্রেমসাধনে।
যে প্রেমে কিশোর -কিশোরী মজেছে দুজনে।

২৪.
কামে থেকে নিষ্কামী যে হয়
কামরতি রয় শক্তি আশ্রয়।

২৫.
তার সন্ধি জানা, সে ভাব সে না
কঠিন জীবের প্রাণে।

২৬.
সেধেছিল অরুণের কিরণ
কমলিনী প্রফুল্ল বদন।

২৭.
তেমনি রতি, সাধলে গতি
নিবে আকর্ষণে টেনে।

২৮.
সামর্থা আর শম্ভুরসের মান
উভয়ের মান সমানে সমান।

২৯
বিষম রাগের করণ করা।
চন্দ্রকান্ত যোগ মাসান্ত
জানে কেবল রসিক যারা।

৩০.
যোগমায়া রূপ যোগের স্থিতি
দ্বিদলে তার বসতি।

৩১.
জান যদি কোন ব্যক্তি
হও গে সে জ্যান্তে মরা।

৩২.
সিরাজ সাঁই দরবেশে বলে
লালন ডুবে থাক গা সিন্ধুজলে,
তাতে অঙ্গ শীতল হবে
হবি চন্দ্রভেদি রসিক তোরা।

৩৩.
স্রোতে গা চালান দিও না
রাগে বেয়ে যাও উজান।

৩৪.
নিবাইয়ে মদনজ্বালা
অহিমুন্ডে করগে খেলা,
উভয় নিহার উর্ধ্বতলা
প্রেমের এই লক্ষণ।

৩৫.
একটি সাপের দুটি ফণী
দুইমুখে কামড়ালেন তিনি,
প্রেমবাণে বিক্রম যিনি
তার সনে দাও রণ।

৩৬.
মহারস মুদিত কমলে
প্রেমশৃঙ্গারে লওরে তুলে,
চাই আত্ম সামাল সেই রণকালে
কয় ফকির লালন।

৩৭.
এনে মহাজনের ধন বিনাশ করলি ক্ষ্যাপা।
শুধু বাঁকির দায় যাবি যমালয়
হবে রে কপালে দায়মাল ছাপা।

৩৮.
আনন্দবাজারে এলে
ব্যাপারে লাভ করব বলে
সারলে সে দফা।

৩৯.
কুসঙ্গের সঙ্গে মজিয়ে কুরঙ্গে
হাতের তীর হারায়ে হলি রে ফ্যাপা।

৪০.
কীর্তিকর্মা সেহি ধনী
অমূল্য মানিক মণি
তোরে করেছিল কৃপা।

৪১.
সে ধন এখন হারালি রে মন
এমনি তোর কপাল ব’দফা।

৪২.
দেখলি নে মূল বস্তু ঢুঁড়ে
কাঠের মালা নেড়ে চেড়ে
মুখে নাম জপা।

৪৩.
প্রেমের সন্ধি আছে তিন।
ষড় রসিক বিনে জানা হয় কঠিন।

৪৪.
প্রেম প্রেম বললে কী হয়
না জেনে সেই প্রেমের পরিচয়।

৪৫.
আগে সন্ধি বোঝ, প্রেমে মজো
সন্ধিস্থলে সে মানুষ অচিন।

৪৬.
পঙ্কজল ফুল সন্ধিবিন্দু
আদ্য মূল তার সুধার সিন্ধু।

৪৭.
ওসে সিন্ধুমাঝে আলেক নেচে
উদয় হচ্ছে সদা রাত্রদিন।

৪৮.
সরল প্রেমের প্রেমিক হলে
চাঁদ ধরা যায় সন্ধি খুলে।

৪৯.
ভেবে লালন ফকির, পায় না ফিকির
হয়ে আছে সদা ভজনহীন।

৫০.
ভাবের উদয় যেদিন হবে।
হৃদকমলে সে রূপ ঝলক দিবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!