ভবঘুরেকথা
বর্ষামঙ্গল উৎসব ২০১৯

জয় গুরু, 
সমস্ত বাউল ফকির সাধুগুরু বৈষ্ণব ও অনুরাগী মহাজনদের শ্যামসখা আশ্রমের পক্ষে জানাই ভক্তিপূর্ণ প্রণাম, প্রেম ভক্তি ও ভালোবাসা।

আপনারা অবগত আছেন যে, বর্ষামঙ্গল উৎসব প্রতিবছর ১লা শ্রাবণ থেকে ৭ই শ্রাবণের মধ্যের শনি ও রবিবার অনুষ্ঠিত হয়। আর উক্ত সপ্তাহ সর্বস্তরের মানুষ বনসৃজন /বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ হিসাবে পালন করেন।

বর্তমানে বিশ্বাসী দেহবাদী বাউল ফকির সাধুগুরু বৈষ্ণব তাঁদের যাপনে ও মননে নিজেদের প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য মানেন এবং সৃষ্টির সমস্ত কিছুর মধ্যে পরম প্রেমময়ের অস্তিত্ব অনুভব করেন, তাঁদের হাতে বৃক্ষরোপণ ও বাউল ফকির ও সাধুজনের স্বতস্ফূর্ত আগমনে প্রতিবছর দুইদিন ব্যাপী সাধুসঙ্গের মাধ্যমে বর্ষামঙ্গল উৎসব পালিত হয়।

জয়দেব কেন্দুলিতে অবস্থানগত দিক দিয়ে শ্যামসখা আশ্রমের সন্নিহিত প্রায় পাঁচ হেক্টর জমি বনদপ্তরের নথিভুক্ত(দপ্তরের হিসাবে)। প্রথম থেকেই আশ্রমের জমির বাইরে বনদপ্তরের বনহীন জমিতেও আমরা বৃক্ষরোপণ করেছি। খোলা জায়গায় গাছ রক্ষা করা, প্রচুর ব্যয় সাপেক্ষ। তাই আমরা নিয়মিতভাবে বনদপ্তরের আধিকারিক মহোদয়ের কাছে ব্যক্তিগত ও লিখিত আবেদন করেছি, উক্ত জমি যথোপযুক্ত ঘেরার ব্যবস্থা করে বৃক্ষরোপণ করার জন্য। যাতে গাছের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে ও বন্যপ্রাণী, সরীসৃপ ও পাখিদের বাসযোগ্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

বিশ্ব উষ্ণায়ণের ফলে আগত সংকটের মোকাবিলা ও সচেতনতার ক্ষুদ্রতম প্রয়াস হিসাবে স্বীকৃত হোক এই উদ্যোগ।

আমরা প্রস্তাবিত এই বনভূমির নামকরণ “জয়দেব প্রকৃতি উদ্যান” করার আবেদন করেছি। 

একই সঙ্গে রাঢ়বঙ্গের হস্তশিল্পের সম্ভার নিয়ে গড়ে উঠুক “প্রকৃতি হাট বা রবিবারের হাট”। যাতে শিল্প ও সংস্কৃতির টানে জয়দেবে দর্শনার্থী ভক্তদের সমাগম ঘটে। এলাকার মানুষেরও স্বনির্ভর হবার সুযোগ গড়ে ওঠে।

উপরোক্ত সমস্ত প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বন দপ্তরের উর্ধতন মহামান্য আধিকারিকেরা গত ১৮ ই মে শনিবার শ্যামসখা আশ্রমে আসেন এবং এতদাঞ্চলের উৎসাহী মানুষদের নিয়ে খুবই কার্যকরী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

যার সারাংশ, রামপুর গ্রামে বনদপ্তরের জমিতে একটি কম্যুনিটি হল, একটি হাট ও পানীয় জলের ব্যবস্থা মহামান্য বনপাল মহোদয়ের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হবে। আর বনভূমি সৃষ্টির জন্য তাঁদের এলাকা ঘিরে দেওয়াও বিবেচনার মধ্যে আছে। 

স্বনিযুক্তি প্রকল্পের আওতায় এতদাঞ্চলের উৎসাহী মানুষদের বনদপ্তরের খরচে প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা ও প্রাথমিক পুঁজির সংস্থান করে দেবেন।

আমরা শ্যামসখা আশ্রমের পক্ষে সর্বৈব সহযোগিতা করার অঙ্গীকার করেছি।

এমতাবস্থায় আমরা আগামী ২০ ও ২১শে জুলাই বর্ষামঙ্গল উৎসবের সময় পশ্চিমবঙ্গ বনদপ্তরের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ করে “জয়দেব প্রকৃতি উদ্যান” ও রবিবারের হাটের উদ্বোধন হোক, এই আবেদন রেখেছি। যাতে বর্ষামঙ্গল উৎসবে আগত মানুষের মধ্যে বিষয়টি বিপুল ভাবে প্রচারিত হয় ও খুব অল্প সময়ে পরিচিতি পায়।

গত ৬ই জুন ২০১৯ ও ১৭ই জুন ২০১৯ শ্যামসখা আশ্রমে এলাকার মানুষের সঙ্গে বীরভূম তথা রাজ্যের অনেক গুণী মানুষের সমন্বয়ে আরও দুইটি বর্ধিত সভা হয়, যেখানে উপরোক্ত বিষয় নিয়ে বিষদে আলোচনা হয়।

শ্যামসখা আশ্রমের পক্ষে একটাই বাসনা, গীতগোবিন্দম্ এর স্রষ্টা কবি জয়দেবের জন্মভূমিতে মানবতার এই অপার্থিব টানে নিয়মিতভাবে অনেক অনেক মানুষের আগমন ঘটুক। এক অনন্য সাংস্কৃতিক যাপনের ধারা প্রাণ থেকে প্রাণে সঞ্চারিত হোক। আর গড়ে উঠুক সবুজে সবুজ বনভূমি।।

আপনার মতামত জানতে চাই।।

আগামী ২০ ও ২১ শে জুলাই ২০১৯ বর্ষামঙ্গল উৎসবে আপনাদের সবাইকে স্বতস্ফূর্ত যোগদানের জন্য আন্তরিকভাবে আমন্ত্রণ জানাই।

শ্যামসখা আশ্রমের পক্ষে 
২০শে জুন ২০১৯

তারিখ:
২০ ও ২১শে জুলাই ২০১৯
৩রা ও ৪ঠা শ্রাবণ ১৪২৬
শনি ও রবিবার

স্থান:
শ্যামসখা আশ্রম
জয়দেব, কেন্দুলী, বীরভূম পশ্চিমবঙ্গ


Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!