ভবঘুরেকথা
শাহ সুলতান কমরুদ্দীন রুমী

বাংলাদেশের প্রথম ইসলাম প্রচারক শাহ্ সুলতান

সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভকারী আধ্যাত্মিক জগতের মহাশক্তির অধিকারী ছিলেন হজরত শাহ সুলতান কমরুদ্দীন রুমী (রহঃ)। জানা যায়, তিনি ৪৪৫ হিজরী ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ১২০জন সুফি-সাধক সহচর নিয়ে বাংলাদেশে আসেন।

কমরউদ্দিন রুমীর ভারতবর্ষে আগমনের ১১৬ বছর পর ভারতের আজমিরে সুলতানুল হিন্দ হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি (রহঃ) এবং ২৫০ বছর পর বাংলাদেশে হজরত শাহজালাল মুজাররদ ইয়ামেনি (রহঃ) আগমন করেছিলেন। যে কারণে কমরউদ্দিন রুমী এই বাংলাদেশ তথা গোটা উপমহাদেশে সর্বপ্রথম ইসলাম প্রচারকারী ব্যক্তি হিসেবে খ্যাত।

যতদূর জানা যায়, কমরউদ্দিন রুমী ভারতবর্ষে আগমনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাগ ভাগ করে ইসলাম প্রচার করতে সুফি-দরবেশদের দাওয়াতি কাফেলা পাঠাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি ৪১জন অলি-দরবেশ নিয়ে চলে এলেন কোচরাজ বোকাই কোচের রাজধানী ‘বোকাইনগর’ হয়ে বর্তমান বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার মদনপুরে। এই মদনপুরে তখন হিন্দু সামন্তরাজ মদন কোচের শাসন কায়েম ছিল।

রাজা মদন কোচ কমরউদ্দিন রুমীকে অবাধে ইসলাম প্রচারের সুযোগ দেন। আর এ সুযোগ গ্রহণ করে কমরউদ্দিন রুমী এবং তাঁর ভক্ত-মুরিদান অত্র অঞ্চলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন।

কথিত আছে, কমরউদ্দিন রুমী ছিলেন তুরস্ক সাম্রাজ্যের রাজপরিবারের সদস্য। সম্রাটের ছোট ভাই এবং প্রাদেশিক গভর্নর হয়েও রাজ্য শাসন ও রাজকীয় ভোগবিলাস প্রত্যাখ্যান করে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের আশায় ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে জন্মভূমি তুরস্ক থেকে এসেছিলেন সুদূর বাংলা নামের এই ভূখণ্ডে_বর্তমান বাংলাদেশের এক প্রান্তসীমা নেত্রকোনা জেলার মদনপুর গ্রামে।

আজ এ গ্রামসহ সারাদেশেই বাঙালি জাতির শতকরা পাঁচজন ছাড়া অন্য সবাই সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমান। মুসলমানদের এ সংখ্যাধিক্যের মূল কারণ কিন্তু তিনিই কমরউদ্দিন রুমী। তাঁর মুর্শিদ ছিলেন শাহ সৈয়দ মখলুল অতিনশাহ (রহঃ)। রুমি ও তার মুর্শিদ উভয়েই ইসলাম প্রচারে একসাথে বাংলায় আসেন।

প্রতি বছর তার ওরশে লাখ লাখ ভক্ত আশেকের সমাগম ঘটে থাকে। তারা সবাই শাহ্ সুলতান আওলিয়ার উসিলায় আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করেন এবং শিন্নি মানত করে থাকেন। প্রতি বছর ফাল্গুনের প্রথম পূর্ণিমাতে ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়।

কথিত আছে, যে সামন্তরাজা ধর্মের প্রতি উদারমনা হলেও তার মন্ত্রীরা কমরউদ্দিন রুমীর বিরুদ্ধে রাজাকে কু মন্ত্রণা দিলে রাজা তাকে রাজদরবারে তলব করে ইসলাম ধর্মের মহিমা কি তা জানতে চান। কমরউদ্দিন রুমী এই কথা শুনে পবিত্র কুরআন থেকে সুমধুর সুরে কিছু আয়াত পাঠ করে শুনালে কুরআনের আয়াতের জালালি ভাব দেখে রাজা সামন্তের অন্তর ভয়ে কেঁপে উঠে।

এরপর তিনি শাহ সুলতানকে আরও পরীক্ষা করে দেখার জন্য তাকে তীব্র হলাহল বিষ খেতে দেন। শাহ্ সুলতান নির্দ্বিধায় বিসমিল্লাহ্হির রাহমানির রাহিম বলে তা পান করে ফেলেন। কিন্তু আশ্চর্য এতে শাহ্ সুলতানের কিছুই হল না।

রাজা সামন্তরাজ অবাক হয়ে চিন্তা করে দেখলেন যে সামান্য বিসমিল্লাহ্ শরিফ পাঠ করে যদি বিষ অমৃত হয়ে যায় তাহলে কুরআনের আয়াত পাঠ করলে না জানি কি হবে। তাই শাহ্ সুলতানের এই কারামত দেখে এবং তাকে একজন সত্য আল্লাহর অলি বলে মনে প্রাণে ভেবে নিয়ে সামন্ত রাজ সপরিবারে শাহ্ সুলতান আওলিয়ার কাছে ইসলাম গ্রহণ করেন।

রাজার দেখাদেখি রাজ্যের সকলেই ধীরে ধীরে ইসলাম গ্রহণ করে। পরবর্তীতে কমরউদ্দিন রুমী আওলিয়া দুনিয়া ত্যাগ করে আল্লাহর নিকট পুনরায় প্রস্থান করলে তাকে রাজকীয় সম্মানে দাফন করা হয়। বর্তমানে নেত্রকোনার মোমেন শাহি নামক এলাকায় তাঁর পবিত্র মাজার শরিফ বিদ্যমান।

প্রতি বছর তার ওরশে লাখ লাখ ভক্ত আশেকের সমাগম ঘটে থাকে। তারা সবাই শাহ্ সুলতান আওলিয়ার উসিলায় আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করেন এবং শিন্নি মানত করে থাকেন। প্রতি বছর ফাল্গুনের প্রথম পূর্ণিমাতে ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়।

………………….
পুন:প্রচারে বিনীত : নূর মোহাম্মদ

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………………………….
আরও পড়ুন-
হযরত শাহ্জালাল
নাসির উদ্দিন সিপাহসালার
বাবা খানজাহান আলী
শাহ মখদুম রূপোশ: এক
শাহ মখদুম রূপোশ: দুই

হযরত ছৈয়দ শাহ্ আলী বোগদাদী
হযরত কেল্লা শাহ্‌ বাবা

মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: এক
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: দুই
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: তিন
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: চার
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: পাঁচ

বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী
সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজ
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-১
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-২
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-৩
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-৪
খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়ার কাশফের নিদর্শন

মুজাদ্দিদে আলফে সানী: এক
মুজাদ্দিদে আলফে সানী: দুই
মুজাদ্দিদে আলফে সানী: তিন

শেখ বাহাউদ্দীন নকশবন্দী: এক
শেখ বাহাউদ্দীন নকশবন্দী: দুই

ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: এক
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: দুই
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: তিন
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: চার
সালমান আল-ফারেসী: এক
সালমান আল-ফারেসী: দুই
সালমান আল-ফারেসী: তিন
সালমান আল-ফারেসী: চার

উয়াইস করনি পাগল: এক
উয়াইস করনি পাগল: দুই
উয়াইস করনি পাগল: তিন
রহস্যাবৃত শামস তাবরিজি: পর্ব-১
রহস্যাবৃত শামস তাবরিজি: পর্ব-২
মাওলানা শ্রেষ্ঠ জালালউদ্দিন রুমি
আত্তারের সাধনার সপ্ত স্তর : এক
আত্তারের সাধনার সপ্ত স্তর : দুই
সুফিবাদের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ইবনে আল আরাবী
হযরত বাবা হাজী আলী
খাজা ফুজাইল : ডাকাত থেকে ওলী
সাধক বায়জিদ বোস্তামী
মরমী বুল্লেশাহ্
সারমাদ কাশানি

বাংলাদেশের প্রথম ইসলাম প্রচারক শাহ্ সুলতান
শাহানশাহ রাহাত আলী শাহ
বাবা সিরাজ শাহ্
বাবা হায়দার শাহ্
মদন পাগলার মোরতবা
মোখলেছ শাহর কারামতি
বাবা জাহাঙ্গীর

সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী : পর্ব এক
সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী : পর্ব দুই
সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী : পর্ব তিন

Related Articles

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • SYED ABU ZAFOR , শুক্রবার ২৭ মার্চ ২০২০ @ ১১:১৪ অপরাহ্ণ

    খুব ভালো উদ্যোগ। ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অনেক কিছু পেলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!