ভবঘুরেকথা
মতুয়া সংগীত

ভক্তগণ প্রমত্ত
পয়ার

মল্লকাঁদি নিবাস ছাড়িয়া মৃত্যুঞ্জয়।
কালীনগরেতে বাস প্রভুর আজ্ঞায়।।
যে কালেতে মৃত্যুঞ্জয় এল এই দেশে।
সূর্যনারায়ণ মত্ত প্রথমত এসে।।
তারপরে মাতিল তারক সরকার।
কাশীমাকে মা বলিয়া পদ কৈল সার।।
তারকের জন্মদাতা পিতা কাশীনাথ।
মাতা অন্নপূর্ণা দেবী তস্য গর্ভজাত।।
গুরু মৃত্যুঞ্জয় গুরুমাতা কাশীশ্বরী।
নামে নামে মেশামেশি এক জ্ঞান করি।।
আরো হরিচাঁদ নামে গুণ প্রকাশিয়া।
প্রথমতঃ হরিপদ দিল দেখাইয়া।।
উপদেষ্টা গুরু বলি মানিল তারক।
তাহা দেখি এদেশে মাতিল বহুলোক।।
ব্রাহ্মণ কায়স্থ পাল কুণ্ডু নমঃশূদ্র।
জাতি নানাবিধ যত ছিল ভদ্রাভদ্র।।
মাতিল চন্দ্র মল্লিক অতি নিষ্ঠারতি।
হ’ল যেন কাশীমার গর্ভজ সন্ততি।।
মত্ত রাধানাথ চন্দ্র মল্লিকের শিশু।
খাসিয়ালী নিবাসী নবীন চন্দ্র বসু।।
পিরিতিরামের পুত্র দক্ষিণ বাড়ীতে।
কুলিনের বংশে জন্ম কায়স্থ কুলেতে।।
কাশীমাকে মা বলিয়া পূর্ণ মাতৃভাব।
হরিপাল সঙ্গেতে হইল সখ্যভাব।।
তারকেরে গুরু মানি প্রিয় শিষ্য হ’ল।
সাধনা দেবীকে গুরু মা বলে ডাকিল।।
শ্রীঅক্ষয় চক্রবর্তী পবিত্র ছিণ্ডিয়ে।
হরিপ্রেমে মেতে গেল উদাসীন হ’য়ে।।
মহানন্দ আজ্ঞাক্রমে তারকে ধরিল।
আত্ম সমর্পণে গুরু বরণ করিল।।
সাধনাকে গুরুমাতা করিল বরণ।
“কামবীজ” ”কাম গায়ত্রী” ক’ল গ্রহণ।।
গাছবাড়ী গ্রামে মাতে চন্দ্র রামধন।
বহুজন মাতাইল তারা দুইজন।।
মাহিষ্য মাধব দাস গাছবেড়ে গ্রামে।
সিকদারোপাধী মত্ত হরিচাঁদ প্রেমে।।
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বলে সারে রোগী।
গুরুচাঁদ প্রিয় ভক্ত গাঢ় অনুরাগী।।
মনপ্রাণ সপিয়াছে গুরুচাঁদ পায়।
স্নান সন্ধ্যা বিবর্জিত প্রেমোন্মত্ত কায়।।
মাতিল মাহিষ্য দাস দাসের ময়াল।
তার মধ্যে মাধব করেন ঠাকুরাল।।
কপালী ময়াল মধ্যে করে ঠাকুরালি।
যোগানিয়া গ্রামে ভক্ত নিমাই কপালী।।
তার প্রতি মাধবের দয়া উপজিল।
তার বাড়ী ঠাকুরের আসন পাতিল।।
শ্রীগুরুচাঁদের নামে করিল ঔদাস্য।
তাহারা সকলে হ’ল তারকের শিষ্য।।
মাতিল কালিয়া গ্রামে বিপ্র পঞ্চানন।
বড় অধিকারী তিনি ভকত সুজন।।
ভট্টাচার্য উপধিক শ্রেষ্ঠ শ্রেণী রাঢ়ী।
ভক্ত সঙ্গে যান রঙ্গে ওঢ়াকাঁদি বাড়ী।।
দোঁহাই শ্রীগুরুচাঁদ বলে রোগী সারে।
মানসিক টাকা দেন শ্রীগুরুচাঁদেরে।।
গুরুচাঁদ নামে ঘট পাতে ঠাই ঠাই।
আমবাড়ী গ্রামে ঘট পাতিল গোঁসাই।।
তেরখাদা রজবংশী মাতিল সকল।
মুসল্মান তিনকড়ি বলে হরিবোল।।
তেরখাদা ঘট পাতে রাজবংশী বাড়ী।
পাতিল দোসরা ঘট মাঞ্জের বাড়ী।।
সাহাজাতি পুরুষ প্রকৃতি মাতিয়াছে।
তারকেরে গুরু বলে নাম লইয়াছে।।
তেরখাদা ঘাটের পাটনী বনমালী।
ডুমুরিয়া তার বাড়ী মাতে হরিবলি।।
ইতিপূর্বে জয়পুর প্রহলদ পাটনী।
খেয়াঘাটে ধ্বনি (অগ্নি) জ্বেলে পো’হাত অগিনি।।
গ্রীষ্মকালে অগ্নি জ্বেলে প্রখর রৌদ্রেতে।
জপিত শ্রীহরিনাম বসে সেখানেতে।।
গোস্বামী গোলোক এসে তাহা নিষেধিল।
শেষে নামে মত্ত হ’য়ে নিদ্রা তেয়াগিল।।
তেরখাদা মাতাইল বহু সাধু লোক।
মাতিল সাহাজী শশী হৃদয় তারক।।
কি কহিব ইহাদের ভকতির কথা।
অতি সাধ্বী সতী নারী ইহাদের মাতা।।
হৃদয় শশীর পিতা মহা অনুরাগী।
হরিচাঁদ প্রিয় ভক্ত যেন মহাযোগী।।
ওঢ়াকাঁদি ভক্ত পেলে করে শিরোধার্য।
মন প্রাণ দেহ দিয়া করে সেবা কার্য।।
পঞ্চানন ঠাকুরের মহিমা অপার।
হরিভক্তি শিখাইয়া মাতাল সংসার।।
দুর্গাপুর মাতে হরিবর মনোহর।
তারকের শিষ্য তারা ভক্ত প্রিয়তর।।
মহাকবি দুই ভাই ভক্ত চূড়ামণি।
উভয়ে কবি আখ্যা কবি চূড়ামণি।।
তারকের বাঁধা পদ কাজ কি মন্ত্রবীজে।
পদ শুনে হরিবর সন্ধ্যাহ্নিক ত্যজে।।
মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের স্তোত্র গীতি যাহা।
ত্রি-সন্ধ্যা আহ্নিক তার মূলমন্ত্র তাহা।।
তারকের স্তবাষ্টক নিজকৃত স্তব।
গুরুচাঁদ আজ্ঞামতে শ্রীতারক গুরু।
মহানন্দ শ্রীতারক বাঞ্ছা কল্পতরু।।
চণ্ডীচরণের পুত্র যাদব মল্লিক।
মৃত্যুঞ্জয় ভাগ্নেয় তারক প্রাণাধিক।।
বিশ্বাস যাদব চন্দ্র সাধু শুদ্ধমতি।
তাহার লোহার গাতী গ্রামেতে বসতি।।
দুই যাদবের এই রচনার প্রীতি।
সকৌতুকে পরিশ্রম করিয়াছে অতি।।
যাদব বিশ্বাস হয় এ গ্রন্থ লেখক।
মল্লিক লেখায় তাঁরে হইয়া পাঠক।।
লেখক যাদব ইনি পর উপকারী।
বহুদিন লেখে গ্রন্থ কার্য ত্যাগ করি।।
দলিল লিখিতে নাহি মোহরানা লয়।
দরিদ্রের পিতৃতুল্য দয়ার্দ্র হৃদয়।।
দেশের প্রধান ব্যাক্তি শালিসী করয়।
সুবিচার করে কারু ঘুষ নাহি খায়।।
একদিন স্বজাতির সমাজে গেলেন।
কৌলীন্য মর্যাদা পাঁচ টাকা পাইলেন।।
মান্য পেয়ে পরে টাকা ফিরাইয়া দিল।
কোন ক্রমে দাতারা সে টাকা নাহি নিল।।
দায় ঠেকে টাকা লয়ে এল নিজালয়।
গ্রাম্য বারোয়ারী কালী পূজাতে লাগায়।।
নিজের চাঁদার টাকা অগ্রে তাহা দিল।
আরো সেই পাঁচ টাকা সবে সমর্পিল।।
বলে এই টাকা নিলে মহা পাপ হয়।
এই ভয় নিমন্ত্রণ খাইতে না যায়।।
এইরূপ শুদ্ধ শান্ত পুরুষ রতন।।
এই রচনার তার বড়ই যতন।
এই গ্রন্থ লেখার কালে মকর্দমা ছিল।
টাকা জন্য বাড়ী যা’বে তারকে জানাল।।
তারক বলিল ধর এই টাকা লও।
ফিরায়ে নিব না টাকা অদ্য হেথা রও।।
শুনিয়া যাদব অধোবদনে রহিল।
বাক্য নাহি অশ্রুজলে ভাসিতে লাগিল।।
অর্থ দিবে এই ভয় লুকাইয়া গেল।
যাদব মল্লিক গিয়া খুঁজিয়া ধরিল।।
বলে এই ভাগবত করিব লিখন।
কর্তা মোরে অর্থ সাধে কিসের কারণ।।
স্নান না করিব আমি জল না খাইব।
অনাহারে আমি ছার জীবন ত্যজিব।।
তারক যাদব পরে বহু বুঝাইল।
নিবৃত্ত হইল কিন্তু মনে দুঃখ র’ল।।
এই প্রেমে মাতিয়াছে মত্ত মাতোয়াল।
দীনজনে দয়া করে পরম দয়াল।।
আরো কত জন মাতে আইচ পাড়ায়।
মাতোয়ারা রাজেন্দ্র আইচ মহাশয়।।
মহামান্য যুধিষ্ঠির বিশ্বাস সুজন।
তস্য পুত্র রজনী বিশ্বাস মত্ত হন।।
রাজেন্দ্র চিকিৎসা করে অর্থ নাহি লয়।
এবে কিছু কিছু লয় তারক আজ্ঞায়।।
হরিবর সরকার পূর্বেতে লিখিত।
লেখক যাদব হ’ন তস্য বংশজাত।।
হরিবর যাদবের হন খুল্লতাত।
পুনর্বার এই গ্রন্থ তার করাঙ্কিত।।
বর্ণশুদ্ধি সংশোধক এই হরিবর।
বহু পরিশ্রম করি লিখে চারিবার।।
জয় জয় গৌরচন্দ্র রূপ হরিশ্চন্দ্র।
জয় জয় হরিচাঁদ রূপ গুরুচন্দ্র।।
জয় নিত্যানন্দ প্রভু রূপ মহানন্দ।
জয় জয়াদ্বৈত শক্তি শ্রীগোলোকচন্দ্র।।
সবাকার আজ্ঞাবহ দাস এ তারক।
লীলামৃত গ্রন্থ লিখিবারে অপারক।।
দশরথ গোলোকের আজ্ঞা শিরোধার্য।
কলিকল্পতরু গ্রন্থ শেষ লীলা পূজ্য।।
আদেশে এ দাস এই গ্রন্থ বিরচিল।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি হরি বল।।
প্রভুর কৃপায় গ্রন্থ হ’ল সমাপন।
হরিচাঁদ প্রীতে হরি বল সর্বজন।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!