ভবঘুরেকথা
মহাযোগী শ্রীশ্রী তৈলঙ্গস্বামী

মহাযোগী শ্রীশ্রী তৈলঙ্গস্বামী

মহাযোগী শ্রীশ্রী তৈলঙ্গস্বামী নাম ছিল শ্রী শিবরাম। বাবা শ্রীযুক্ত নরসিংহ রাও ধর্মপরায়ণ জমিদার ছিলেন। মাতা শ্রীমতি বিদ্যাবতী দেবী।শিবের আরাধনা করতেন। সুপুত্র লাভের আশায় তিনি দ্বাদশ ব্রাহ্মণ সেবা করান। ব্রাহ্মণগণ নিঃসন্তান বিদ্যাবতীর নিকট হতে দান গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। এতে তিনি মনে খুব কষ্ট পান।

ফলে সন্তানের আশায় স্বামীকে অনুরোধ করে দ্বিতীয় বিবাহে বাধ্য করেন। ৫ই পৌষ ১০১৪ বাংলা শুক্রবার পূর্ণিমা তিথি বা ১৬ই ডিসেম্বর ১৬০৭ইং হোলিয়া, ভিজিয়ানাগ্রাম, অন্ধ্রপ্রদেশ, ভারত-এ তাঁর আবির্ভাব হয়।

ধ্যান ভাঙ্গতে চোখ মেলে তাকাতেই বিদ্যাবতী এক অলৌকিক দৃশ্য দেখে চমকে উঠেন। তিনি দেখেন শিবের বিগ্রহমূর্তি হতে এক অলৌকিক জ্যোতির ছটা বেরিয়ে এসে সমস্ত ঘরখানিকে আলোকিত করে ঘুমন্ত শিশু শিবরামের দেহের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়।

ছোট বেলা থেকেই শিবরাম ছিলেন গম্ভীর প্রকৃতির। লেখাপড়ায়ও অনিহা ছিল। খেলাধুলা সহ অন্য কোন বিষয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল না। জীবনের কোন সুখ ভোগের প্রতি তাঁর বিন্দু মাত্র আগ্রহ ছিল না। শুধু মাত্র মায়ের নিকট ধর্ম কথা শুনতে তাঁর প্রচন্ড আগ্রহ ছিল। তিনি মাকে বলতেন আমি সন্ন্যাসী হবই হব।

সন্ন্যাসী হয়ে আমি শিব ঠাকুরের বাড়ির ঠিকানা বের করবই। মায়ের প্রতি ছিল তাঁর অসম্ভব ভালবাসা। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন মাতৃভক্ত। মাকে বলতেন মাগো তুমি যে সকল তীর্থের উর্দ্ধে।

একদিন শিবরামের মাতা বিদ্যাবতী যখন গৃহদেবতা শিবের মন্দিরে ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। শিশু শিবরাম তখন আপন মনে খেলা করতে করতে মন্দিরে ঘুমিয়ে পড়েন। ধ্যান ভাঙ্গতে চোখ মেলে তাকাতেই বিদ্যাবতী এক অলৌকিক দৃশ্য দেখে চমকে উঠেন। তিনি দেখেন শিবের বিগ্রহমূর্তি হতে এক অলৌকিক জ্যোতির ছটা বেরিয়ে এসে সমস্ত ঘরখানিকে আলোকিত করে ঘুমন্ত শিশু শিবরামের দেহের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়।

তিনি ভাগীরথানন্দ সরস্বতীর পরামর্শে প্রথমে কাশীধাম যান। সেখানে বিষটির সুরাহা না হওয়ায় তিনি কাশীধামের পণ্ডিতদের পরামর্শে বর্ধমানে পণ্ডিত রঘুনন্দন ভট্টাচার্য মহাশয়ের নিকট যান। পণ্ডিত রঘুনন্দন ভট্টাচার্য তাঁকে বলেন ৭দিন পূর্ণতোয়া নর্মদা তীরে বিশুদ্ধ মনে চণ্ডিপাঠ শেষে স্বয়ং মহাদেব এসে এর উত্তর দিবেন।

শ্রী শিবরাম ছোটবেলাই ধ্যান শুরু করেন। মা ঘুমালে রাতে বাহিরে গিয়ে ধ্যান করতেন। তাঁর ৪২ বৎসর বয়সে প্রথমে বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর ১০ বৎসর পর তাঁর মাও মৃত্যুবরণ করেন। মায়ের মৃত্যুর পর অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি আর বাড়ীতে ফিরে যাননি। সংসারের মায়া মমতা ত্যাগ করে তিনি মা-বাবার শ্মশানেই থাকেন।

পরে শ্মাশানের পাশেই ছোট ভাই একটি পর্ণ কুটির নির্মাণ করে দেয়। সেখানে তিনি দীর্ঘ ২০ বৎসর ধ্যান করেন। একদিন যোগসিদ্ধ সাধক ভাগীরথানন্দ সরস্বতী শিবরামের কুটিরে উপস্থিত হন। ভাগীরথানন্দ সরস্বতী শিবরামকে বলেন তোমার সন্ন্যাস গ্রহণ প্রয়োজন। সন্ন্যাস গ্রহণ ছাড়া তত্ত্বজ্ঞান হবে না। আর তত্ত্বজ্ঞান না হলে তোমার মোক্ষমলাভ হবে না।

শিবরাম সব শুনে সন্ন্যাস গ্রহণের পূর্বে মায়ের অন্তিত ইচ্ছা পূরণের জন্য কিছুদিন সময় প্রার্থণা করেন। ভাগীরথানন্দ বলেন সময় হলে পুষ্কর ধামে এসো বলে তিনি অদৃশ্য হয়ে যান। শিবরামও মায়ের অন্তিম ইচ্ছা পূরণের জন্য কাউকে কিছু না বলেই হঠাৎ করে কুটির ত্যাগ করেন। তিনি ভাগীরথানন্দ সরস্বতীর পরামর্শে প্রথমে কাশীধাম যান।

প্রয়াগ থেকে ১১৪০বাংলার মাঘ মাসে কাশীধামে আসেন। তিনি বিভিন্ন সময় বারাণসীর বিভিন্ন ঘাটে কাটাতনে। কখনও তিনি গঙ্গায় ভাসতে থাকতেন আবার কখনও বা গঙ্গায় ডুবে থাকতেন। গঙ্গার সাথে ছিল তাঁর অন্তরের সম্পর্ক। দীর্ঘ ১৫০ বৎসর তিনি বারাণসীতে ছিলেন। তাঁর অসংখ্য ভক্ত ছাড়াও অনেক পরম সিদ্ধ পুরুষ এসেছেন তাঁকে দর্শন করতে।

সেখানে বিষটির সুরাহা না হওয়ায় তিনি কাশীধামের পণ্ডিতদের পরামর্শে বর্ধমানে পণ্ডিত রঘুনন্দন ভট্টাচার্য মহাশয়ের নিকট যান। পণ্ডিত রঘুনন্দন ভট্টাচার্য তাঁকে বলেন ৭দিন পূর্ণতোয়া নর্মদা তীরে বিশুদ্ধ মনে চণ্ডিপাঠ শেষে স্বয়ং মহাদেব এসে এর উত্তর দিবেন। তিনি বর্ধমান থেকে পুণ্যতোয়া নর্মদা তীরে যান। সেখানে সাতদিন চণ্ডিপাঠের পর স্বয়ং মহাদেবের দর্শন দেন।

মহাদেবের নির্দেশে পর্বত রাজ্যের রাজবাড়ী যান। রাজবাড়ীতে তাঁর মায়ের অন্তিম ইচ্ছা পূরণের পর তিনি দীক্ষা গ্রহণের জন্য পুষ্করে আসেন। দীর্ঘপথ তিনি পায়ে হেটে ভ্রমণ করেন। পুষ্করে ফিরে আসার দিনই তিনি শুভক্ষণে ভাগীরথানন্দ সরস্বতীর নিকট সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। গুরু তাঁকে হঠযোগ, রাজযোগ ইত্যাদি শিক্ষা দেন।

তিনি গভীর সাধনায় আত্ম নিয়োগ করেন। ১০ বৎসর কঠোর সাধনায় তিনি পরম সিদ্ধি লাভ করেন। গুরু দেহত্যাগ করার পর তিনি পুষ্কর ত্যাগ করেন। বিভিন্ন ধর্মক্ষেত্র দর্শন করে তিনি রামেশ্বরাম আসেন ১১০৪ বাং। সেখান থেকে সুদামাপুরী যান ১১০৬বাং। তিনি প্রভাস, দ্বারকাধাম ইত্যাদি দর্শন করে ১১০৮বাং নেপাল যান।

১১১৪বাং নেপাল ত্যাগ করে ভীমরথী, তির্ব্বত হয়ে ১১১৭বাং মানস সরোবরে যান। মানস সরোবরে তিনি ১২বৎসর সাধনা করেন। সেখান থেকে তিনি কৈলাসে যান। পুনরায় মানস সরোবর হয়ে তির্ব্বতের লাসা নগরে আসেন। সেখান থেকে উত্তরঘণ্ড। ১১৩৩বাং তিনি পুনরায় নর্মদা তীরে আসেন। সেখান থেকে প্রয়াগ।

প্রয়াগ থেকে ১১৪০বাংলার মাঘ মাসে কাশীধামে আসেন। তিনি বিভিন্ন সময় বারাণসীর বিভিন্ন ঘাটে কাটাতনে। কখনও তিনি গঙ্গায় ভাসতে থাকতেন আবার কখনও বা গঙ্গায় ডুবে থাকতেন। গঙ্গার সাথে ছিল তাঁর অন্তরের সম্পর্ক। দীর্ঘ ১৫০ বৎসর তিনি বারাণসীতে ছিলেন। তাঁর অসংখ্য ভক্ত ছাড়াও অনেক পরম সিদ্ধ পুরুষ এসেছেন তাঁকে দর্শন করতে।

…………………………
আরও পড়ুন-
শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী

লোকনাথ বাবার বাল্যসখা বেণীবাধব ব্রহ্মচারী : পর্ব এক
লোকনাথ বাবার বাল্যসখা বেণীবাধব ব্রহ্মচারী : পর্ব দুই
লোকনাথ বাবার বাল্যসখা বেণীবাধব ব্রহ্মচারী : পর্ব তিন
বিজয়কৃষ্ণ
মহাযোগী শ্রীশ্রী তৈলঙ্গস্বামী
ত্রৈলঙ্গ স্বামীর কিছু কথা

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………………..
পুনপ্রচারে বিনীত: প্রণয় সেন

…………………………
আরও পড়ুন-
যোগীবর শ্যমাচরণ লাহিড়ী মহাশয়
মহাযোগী শ্রীশ্রী তৈলঙ্গস্বামী
ত্রৈলঙ্গ স্বামীর কিছু কথা
গাঁধীজিকে ক্রিয়াযোগে দীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি
তারা মায়ের আদরের দুলাল ‘বামাক্ষেপা’
মহর্ষি মহেশ যোগীর কথা
স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বরের দর্শনলাভ : যোগী-কথামৃত থেকে
‘বাবাজী’ আধুনিক ভারতের মহাযোগী
বিনিদ্র সাধু
রামদাস বাবাজী
সীতারাম
তারাপীঠের ‘বামদেব’
বহুবর্ষজীবি শ্রীশ্রী বরফানী দাদাজি
মহাবতার বাবাজীর দর্শন লাভ: এক
মহাবতার বাবাজীর দর্শন লাভ: দুই
যোগীবর শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী: এক
যোগীবর শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী: দুই
যোগীবর শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী: তিন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!