ভবঘুরেকথা
মতুয়া সংগীত

রামকান্তের বাসুদেব ও জগন্নাথ রথযাত্রা
পয়ার

রামকান্ত বাসুদেব গলাগলি ধরে।
শয়ন করিত সুখে শয্যার উপরে।।
এই ভাবে প্রবীণ হইল রামকান্ত।
বর্ণনে অতীত লীলা নাহি তার অন্ত।।
এদিকে ব্রাক্ষণগণ রথযাত্রা করে।
কান্তের হইল মন রথ করিবারে।।
বাঁশ দিয়া রামকান্ত রথ বানাইল।
বাঁশো রথে বাসুদেব উঠিতে ইচ্ছিল।।
অধিবাস দিনে সব লোক আসে যায়।
লোকের সংঘট হ’ল লোকারণ্য ময়।।
ব্রাক্ষণেরা সবে মিলে করে পরামিশে।
রথযাত্রা না হইতে এত লোক আসে।।
আমাদের রথে কল্য মানুষ হবে না।
বৈরাগীর রথে কল্য লোক ধরিবে না।।
ভাল বলি বাসুদেবে দিলাম ফিরা’য়ে।
এতেক স্পর্ধা তার বাদ হাটা মিলা’য়ে।।
কল্য প্রাতে সবে মিলে গিয়ে তার বাড়ী।
আর বার বাসুদেব ল’য়ে এস কাড়ি।।
প্রভাতে সকল দ্বিজ ক্রোধভরে যায়।
জোর করি বাসুদেব আনিল আলয়।।
রামকান্ত বলে মম কি দোষ পাইলে।
পরাণ পুতুলী বাসু কেড়ে নিয়ে গেলে।।
রথে উঠাঁইয়া দেখিতাম বাসুরাজে।
দেখিতাম বাসুদেব কি রকম সাজে।।
বাসুরে লইয়া গেল আর লক্ষ্য নাই।
লয়ে গেল বাসুরে জগার কাছে যাই।।
অবশ্য যাইব আমি জগার নিকটে।
দেখি সে বাসুর মত উঠে কিনা উঠে।।
যাত্রা করে রামকান্ত ক্ষেত্র যাইবারে।
পথে যেতে দৈববাণী হইল তাহারে।।
ফিরে যাও রামকান্ত যাও নিজালয়।
অবশ্য যাইব রথে মোরা দু’জনায়।।
আমি যাব আর তব বাসুদেব যা’বে।
দু’জনার রথযাত্রা দেখিবারে পাবে।।
শুনে শান্ত রামকান্ত এল আখড়ায়।
প্রেমে পুলকিত চিত নাচিয়া বেড়ায়।।
হাসে কাঁদে নাচে গায় হাতে দিয়া তালি।
ক্ষণে ক্ষণে লম্ফ দেয় দুই বাহু তুলি।।
ডেকে বলে ভক্তগণে আমি ত দুর্ভাগা।
তোমাদের ভক্তি-জোরে আসিবে সে জগা।।
উৎকলেতে থাকে জগা বড়ই দয়াল।
চলে না জগার রথ না গেলে কাঙ্গাল।।
কাঙ্গালের বন্ধু জগা কাঙ্গালের বন্ধু।
জগা বাসো এবার তরা’বে ভবসিন্ধু।।
যাইতে ছিলাম ক্ষেত্রে জগারে আনিতে।
পথ মাঝে দৈববাণী হইল দেবেতে।।
জগা বাসো দুইজন উঠিবে সে রথে।
দেখিব যুগলরূপ বাসনা মনেতে।।
ব্রাহ্মণেরা শালগ্রাম উঠাঁইয়া রথে।
রথযাত্রা নির্ব্বাহ করিত বিধিমতে।।
অদ্য তারা বাসুদেবে রথে উঠাঁইয়া।
নির্ব্বাহ করিল সুখে রথযাত্রা ক্রিয়া।।
দ্বিজদের রথযাত্রা সকালে হইল।
বৈকালে কান্তের রথে বাজার মিলিল।।
বহুলোক সংঘটন হৈল সেই রথে।
এত লোক হইল ধরেনা বাজারেতে।।
খাদ্যবস্তু বাদ্যবস্তু শিল্প পুত্তলিকা।
ক্রয় করে যুবা বৃদ্ধ বালক বালিকা।।
কুম্ভকার মৃন্ময় পাত্র মৃন্ময় ছবি।
চিত্র ঘট চিত্র পট চিত্র দেব দেবী।।
কেনা বেচা হয় কত কে করে গণন।
স্থানে স্থানে হয় হরিনাম সংকীর্ত্তন।।
অপরাহ্ন হ’ল দিবা যামেক থাকিতে।
ব্রাক্ষণেরা দেখে বাসুদেব নাই রথে।।
বৈরাগীর বংশরথে বাসুদেবোদয়।
সর্ব্ব লোকে তাহা দেখি মানিল বিস্ময়।।
তাহা দেখি রামকান্ত কেঁদে কেঁদে কয়।
বাসু এল বাশোঁ রথে জগা এলে হয়।।
দেখরে জগৎবাসী দেখ দাঁড়াইয়া।
বাসুদেব রথযাত্রা দেখরে চাহিয়া।।
মোর বাসু রথে সাজে নব জলধর।
বলিতে বলিতে স্বেদকম্প থর থর।।
রথের উপরে উঠি মনের হরিষে।
রামকান্ত বাসুদেবে কোলে করি বসে।।
হেন কালে এল কোলে প্রভু জগন্নাথ।
দুই প্রভু দুই কোলে চলে যায় রথ।।
কেহ বলে রথের হইল এক টান।
কেহ বলে কে টানিল চলে রথখান।।
মুহুর্ত্তেক চলি রথ হইল সুস্থির।
ভূমিতে নামিল কান্ত চক্ষে বহে নীর।।
প্রেমে গদ গদ হ’য়ে রামকান্ত কয়।
দেখরে নগরবাসী দিন ব’য়ে যায়।।
দেখ দেখ চেয়ে দেখ যত ভক্তগণ।
জগা বাসো এক রথে অপূর্ব্ব মিলন।।
প্রেমাবশে ধরায় দিতেছে গড়াগড়ি।
কি ধ’রে টানিব রথ রথে নাই দড়ি।।
জগা বাসো মিলন দেখিয়া সর্ব্বলোক।
এইতো বৈকুণ্ঠ মম এই তো গোলোক।।
জগা বাসো দুইজন একত্র মিলন।
এ মোর মথুরা পুরী এই বৃন্দাবন।।
জগা বাসো সম্মিলন, অপূর্ব্ব মাধুরী।
তারক রসনা ভরি বল হরি হরি।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!