ভবঘুরেকথা
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

শ্রীযুক্ত মণিলাল প্রভৃতির প্রতি উপদেশ – নরলীলা

শ্রীরামকৃষ্ণ নিজ আসনে বসিয়া আছেন। মণিলাল প্রভৃতি ভক্তেরা মেঝেতে বসিয়া ঠাকুরের মধুর কথামৃত পান করিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) – এই হাত ভাঙার পর একটা ভারী অবস্থা বদলে যাচ্ছে। নরলীলাটি কেবল ভাল লাগছে।

“নিত্য আর লীলা। নিত্য – সেই অখণ্ড সচ্চিদানন্দ।

“লীলা – ঈশ্বরলীলা, দেবলীলা, নরলীলা, জগৎলীলা।”

তু সচ্চিদানন্দ – বৈষ্ণবচরণের শিক্ষা – ঠাকুরের রামলীলা দর্শন

“বৈষ্ণবচরণ বলত নরলীলায় বিশ্বাস হলে তবে পূর্ণজ্ঞান হবে। তখন শুনতুম না। এখন দেখছি ঠিক। বৈষ্ণবচরণ মানুষের ছবি দেখে কোমলভাব – প্রেমের ভাব – পছন্দ করত।

(মণিলালের প্রতি) – “ঈশ্বরই মানুষ হয়ে লীলা কচ্ছেন – তিনিই মণি মল্লিক হয়েছেন। শিখরা শিক্ষা দেয়, – তু সচ্চিদানন্দ।

“এক-একবার নিজের স্বরূপ (সচ্চিদানন্দ)-কে দেখতে পেয়ে মানুষ অবাক্‌ হয়, আর আনন্দে ভাসে। হঠাৎ আত্মীয়দর্শন হলে যেমন হয়। (মাস্টারের প্রতি) সেদিন সেই গাড়িতে আসতে আসতে বাবুরামকে দেখে যেমন হয়েছিল!

“শিব যখন স্ব-স্বরূপকে দেখেন, তখন ‘আমি কি!’ ‘আমি কি!’ বলে নৃত্য করেন।

“অধ্যাত্মে (অধ্যাত্ম রামায়ণে) ওই কথাই আছে। নারদ বলছেন, হে রাম, যত পুরুষ সব তুমি, – সীতাই যত স্ত্রীলোক হয়েছেন।

“রামলীলায় যারা সেজেছিল, দেখে বোধ হল নারায়ণই এই সব মানুষের রূপ ধরে রয়েছেন! আসল-নকল সমান বোধ হল।

“কুমারীপূজা করে কেন? সব স্ত্রীলোক ভগবতীর এক-একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশী প্রকাশ।”

কেন অসুখে ঠাকুর অধৈর্য – ঠাকুরের বালক ও ভক্তের অবস্থা

(মাস্টারের প্রতি) – “কেন আমি অসুখ হলে অধৈর্য হই। আমায় বালকের স্বভাবে রেখেছে। বালকের সব নির্ভর মার উপর।

“দাসীর ছেলে বাবুর ছেলেদের সঙ্গে কোঁদল করতে করতে বলে, আমি মাকে বলে দিব।”

রাধাবাজারে সুরেন্দ্র কর্তৃক ফটোছবি তুলানো ১৮৮১

“রাধাবাজারে আমাকে ছবি তোলাতে নিয়ে গিছল। সেদিন রাজেন্দ্র মিত্রের বাড়ি যাবার কথা ছিল। কেশব সেন আর সব আসবে শুনেছিলুম। গোটাকতক কথা বলব বলে ঠিক করেছিলাম। রাধাবাজারে গিয়ে সব ভুলে গেলাম। তখন বললাম, ‘মা তুই বলবি! আমি আর কি বলব’!”

পূর্বকথা – কোয়ার সিং – রামলালের মা – কুমারীপূজা

“আমার জ্ঞানীর স্বভাব নয়। জ্ঞানী আপনাকে দেখে বড় – বলে, আমার আবার রোগ!

“কোয়ার সিং বললে, ‘তোমার এখনও দেহের জন্য ভাবনা আছে?’

“আমার স্বভাব এই – আমার মা সব জানে। রাজেন্দ্র মিত্রের বাড়ি তিনি কথা কবেন। সেই কথাই কথা। সরস্বতীর জ্ঞানের একটি কিরণে এক হাজার পণ্ডিত থ হয়ে যায়!

“ভক্তের অবস্থায় – বিজ্ঞানীর অবস্থায় – রেখেছ। তাই রাখাল প্রভৃতির সঙ্গে ফচকিমি করি। জ্ঞানীর অবস্থায় রাখলে উটি হত না।

“এ-অবস্থায় দেখি মা-ই সব হয়েছেন। সর্বত্র তাঁকে দেখতে পাই।

“কালীঘরে দেখলাম, মা-ই হয়েছেন – দুষ্টলোক পর্যন্ত – ভাগবত পণ্ডিতের ভাই পর্যন্ত।

“রামলালের মাকে বকতে গিয়ে আর পারলাম না। দেখলাম তাঁরই একটি রূপ! মাকে কুমারীর ভিতর দেখতে পাই বলে কুমারীপূজা করি।

“আমার মাগ (ভক্তদের শ্রীশ্রীমা) পায়ে হাত বুলায়ে দেয়। তারপর আমি আবার নমস্কার করি।

“তোমরা আমার পায়ে হাত দিয়ে নমস্কার কর, – হৃদে থাকলে পায়ে হাত দেয় কে! – কারুকে পা ছুঁতে দিত না।

“এই অবস্থায় রেখেছে বলে নমস্কার ফিরুতে হয়।

“দেখ, দুষ্ট লোককে পর্যন্ত বাদ দিবার জো নাই। তুলসী শুকনো হোক, ছোট হোক – ঠাকুর সেবায় লাগবে।”

-১৮৮৪, ২৪শে ফেব্রুয়ারি-

……………….
রামকৃষ্ণ কথামৃত : অষ্টাদশ অধ্যায় : ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!